ফাহিম ফয়সাল : জোনাকি, সোহেলি, রুমা ও হাই বাণিজ্য মেলার যে স্টলটিতে তৈরি পোশাকের পসরা সাজিয়েছেন, সেটিতে নানা রঙের পোশাক ছাড়া, বিক্রেতাদের সাজ সজ্জাও ছিল বেশ ঝলমলে। মুখে রুজ, পাউডার, ঠোঁটে কড়া লিপস্টিক। কথা বললেই ক্রেতারা নিশ্চিত হয়ে যাবেন, এরা কারা। তারা সবাই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। তাদের স্টলে রয়েছে যথেষ্ট ভিড়।
বিক্রেতারা তৃতীয় লিঙ্গের হলেও তাদের ও ক্রেতাদের মধ্যে কোনো ধরনের আড়ষ্টতা দেখা করা যায়নি। অন্য স্টলগুলোর মতোই ক্রেতারা কেনাকাটা করছেন এ স্টল থেকে। স্টলটির নাম ‘সিঁড়ি হস্তশিল্প’। পুরো নাম সিঁড়ি সমাজকল্যাণ সংস্থা। মেলার শেষদিকে এই স্টলে ভিড় আরও বাড়ছে।
সিঁড়ি জামালপুরের একটি সংগঠন। জেলা সদরের গোবিন্দবাড়ি এলাকায় এর অফিস। তাদের সংগঠনের সদস্য ৬০ জন, যাদের মধ্যে ৪০ জনই সরাসরি হস্তশিল্প তৈরির সঙ্গে জড়িত। তারা ব্লক বুটিক, হাতের কাজ, শেলাই, হস্তশিল্প, ও দর্জির কাজের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এই স্টলে তারা থ্রি পিস, ওয়ান পিস, টু পিস, নকশি কাঁথা, বেড কাভার, কুশন কাভার, জায়নামাজ এনে পসরা সাজিয়েছেন। কোয়ালিটি ও কাজের ভিন্নতা ভেদে এসব পণ্যের দাম সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত।
একটা সময় ছিলো, যখন এই মানুষগুলোকে অন্যরা এড়িয়ে চলতো। তারাও সাধারণ মানুষকে নানা যন্ত্রণা দিতেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষের কাছ থেকে জোড় করে চাঁদা তুলতে দেখা যেত। কিন্তু বাণিজ্য মেলার এই দৃশ্যই বলে দিচ্ছে, মানুষগুলো পাল্টে যাচ্ছেন। পাল্টে যাচ্ছে তাদের আচরণ। তারাও নেমেছেন উপযোগী, গ্রহণযোগ্য পথে জীবন-জীবীকা অর্জনে। এখন তারা নিজেরাই কাজ করে উপার্জন করছেন। সত্যিই তাদের জন্য উপরে ওঠার সিঁড়ি হবে এই স্টলটি।
ফাতেমা নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘সিড়ি’ স্টলে বিক্রেতাদের আচরণ কোনওভাবেই অস্বাভাবিক মনে হয়নি। বিক্রেতাদের আচরণ খুবই ভালো। আর ওদের পণ্যের দামও তুলনামূলক কম।
এই স্টলের এক বিক্রেতা বলেন, ‘ক্রেতাদের আচরণে আমরা উৎসাহিত হচ্ছি, অনুপ্রাণিত হচ্ছি। আমরা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে চাই।’
সিঁড়ি সমাজকল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আরিফা ইয়াসমিন ময়ুরী বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তর এবং এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে আমরা প্রশিক্ষণ নিয়েছে। মেলায় যে বিক্রি হচ্ছে তাতে আমরা খুঁশি। আমরা সমাজের বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। আমাদের ইচ্ছা থেকেই প্রশিক্ষণ নিয়েছি, কাজ শিখেছি।
তিনি আরও বলেন, নিজেদের পণ্য বিক্রি করার জন্য আমাদের কোন শো-রুম নেই। ব্যাংকগুলো আমাদের ঋণ দিতে চায় না। ঢাকায় একটি শো-রুম দিতে অনেক টাকার প্রয়োজন। সরকার থেকে ঢাকায় পণ্য বিক্রি করার জন্য স্থায়ী কোন শো-রুমের ব্যবস্থা করলে আমরা উপকৃত হতাম।
সমাজসেবা অধিদফতরের জরিপমতে সারাদেশে তৃতীয় লিঙ্গের (হিজরা) সংখ্যা ১০ হাজার ৩১৯ জন। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে তৃতীয় লিঙ্গের যে অবদান রাখার ক্ষমতা আছে, কিছু দিন আগেও তা অনেকেই ভাবতো না। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় তাদের নিয়ে কাজ করছে।
আপনার মতামত লিখুন :