এম.আর রুবেল, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার দীর্ঘ ৬০ বছরের পুরনো ছনছাড়া এতিমখানার কার্যক্রম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চললেও প্রতিষ্ঠানটির প্রতি তেমন নজর নেই সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের।
সরেজমিনে এতিমখানায় গিয়ে জানা গেছে, ১৯৫৮ সালে ভৈরবের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত ড. আব্দুল লতিফ ভূঁইয়ার উদ্যোগে ৩ একর জমি নিয়ে ছনছাড়া এতিমখানাটি সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর দীর্ঘ ১০ বছর সম্পূর্ণ সরকারিভাবে এতিমখানাটি চললেও ১৯৬৭ সালে থেকে বেসরকারিভাবে পরিচালিত হচ্ছে অত্র প্রতিষ্ঠানটি। তখন থেকেই যেন থেমে থেমে চলছে এর কার্যক্রম।
বর্তমানে এতিমখানায় ৬০ জন এতিম শিশু রয়েছে। আবাসান ও আর্থিক দূরবস্থার কারণে ৬০জনের বেশি এতিম ভর্তি করতে পারছেনা কর্তৃপক্ষ। এসএসসি পাশ না করা পর্যন্ত ওই এতিমখানায় বেড়ে উঠে তারা। এতিমদের জন্য সপ্তাহে মাত্র ১দিন মাংশ, ৩দিন মাছ ও ৩দিন সবজি এবং আলুর ভর্তার ব্যবস্থা করতে গিয়েই হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষের। নামমাত্র বেতনে এতিমদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী। যার ফলে তাদেরও সংসার চালাতে পুরোপুরি ব্যর্থ তারা।
বর্তমানে সুপারিন্ডেন্টের দায়িত্বে আছেন আব্দুল্লাহ এরশাদ। তিনিসহ ৫জন শিক্ষক এতিমদের পড়াশোনা ও সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করছেন। ২৯ সদস্যের একটি কমিটিও রয়েছে। কমিটির সভাপতি আতাউর রহমান ও সেক্রেটারী জাকির হোসেন। এতিমখানার জায়গায় জামালপুর টেকনিক্যাল উচ্চ বিদ্যালয় নামে একটি স্কুলও রয়েছে। ধাপে ধাপে প্রথামিক, জুনিয়র ও বর্তমানে পূর্ণাঙ্গ বিদ্যালয়ে রূপ নেয়। ওই বিদ্যালয়ে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে এতিম শিক্ষার্থীরা।
সরকার শুধুমাত্র ৩০জন এতিমের জন্য প্রতিমাসে শিক্ষা, বস্ত্র, চিকিৎসা ও খাবারের জন্য অনুদান দিয়ে থাকে মাত্র ৩০ হাজার টাকা যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। এখন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে প্রতিষ্ঠানটি চললেও প্রতিমাসে সর্বনিম্ন খরচ হয় ৬০-৬৫ হাজার টাকা। সমাজের বিত্তবানদের সামান্য দানের টাকায় বাকী খরচগুলো কোনো মাসে মেটে আবার কোনো মাসে মেটেওনা।
তাছাড়া অজপাড়াগাঁয়ের এই এতিমখানার দিকে বিত্তবানদেরও তেমন খেয়াল নেই।মাঝে মধ্যে ভালো মানের ১ বেলা খাবার দিয়েই দায় সারতে চান তারা। ফলে প্রতিষ্ঠানটির দূরবস্থা দিনদিন বেড়েই চলছে।
ছনছাড়া এতিমখানার সেক্রেটারী জাকির হোসেন ও তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল্লাহ এরশাদ জনান, আর্থিক টানাপোড়নের মাঝে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে পাকিস্তান আমলের প্রাচীন এই এতিম নিবাসটি। ৬০ জন এতিম শিশুর মধ্যে মাত্র ৩০ জনের ভরণপোষণের জন্য ৩০ হাজার টাকা খরচ দেয় সরকার। বাকী টাকা মেলাতে বিত্তবানদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়েও হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষের।
আপনার মতামত লিখুন :