মাহফুজ উদ্দিন খান: ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়েছে লিটন মিয়া। তিন ভাই বোনের সংসারে হাল ধরেন তাদের মা। অভাবের সংসারে নুন আনতে পানতা ফুরায়।
সংসারের হাল ধরতে হবে বড় ছেলে লিটনকে। একটি ফার্নিচারের দোকানে রংয়ের কাজ শুরু করে লিটন। তখন তার বয়স মাত্র ১৫। কর্মক্ষেত্রেই কয়েকজনের সাথে বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে সে। ইত্তেফাক
অল্পদিনেই তাদের সাথে বন্ধুত্ব হয়। বন্ধুদের একজন ছিল ইয়াবা আসক্ত। সেই লিটনকে ইয়াবা সেবন করতে উদ্বুদ্ধ করে। ওই বন্ধু তাকে বোঝায়, ইয়াবা খেলে গায় শক্তি পাবি। বেশি সময় কাজ করতে পারবি। কোন ক্লান্তি আসবে না।
লিটনও বন্ধুর কথায় উত্সাহিত হয়। দিনে কাজ শেষে রাতে যোগ দেয় বন্ধুর আসরে। প্রথমে তার কাছ থেকে কোন টাকা চাইতো না তার ওই বন্ধু। প্রথম প্রথম ফ্রি খাওয়াতো।
একটা দুইটা থেকে ইয়াবা লিটনের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে ওঠে। পুরোপুরি আসক্ত হয়ে পড়ে লিটন। ওই বন্ধুর কাছ থেকেই এখন ইয়াবা ক্রয় করে।
তবে লিটন মাসে যা মায়না পায় তা দিয়ে তার ইয়াবার খরচ হয় না। মায়ের কাছে উল্টো টাকা চায়। টাকা দিতে অসম্মতি জানালেই চলে অত্যাচার।
ঘরে চলে ভাঙচুর আর মায়ের সাথে ঝগড়া। এমনকি জন্মধারিনী মায়ের গায় হাত তুলতেও দ্বিধা করে না লিটন। ছেলের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মা তার হাত খরচের পুরোটাই দেন লিটনকে।
তবুও স্বাদ মেটে না লিটনের। এদিকে টাকা দিতে দিতে নিঃশ্ব হয়ে যায় পরিবারটি। সহায় সম্বল বলতে থাকে শুধু বাবার ভিটা-মাটি।
বাবার মৃত্যুর পর ভাগাভাগি হলে নিজের অংশটুকু বিক্রি করে দেয়। টাকা উড়ায় ইয়াবার পিছনে। নিজের অংশ বিক্রি শেষ, এবার পালা মায়ের অংশটুকু।
ছেলের অত্যাচারে সেটুকুও বিক্রি করতে বাধ্য হন তার মা। সে টাকাও দেন ছেলেকে। সবই খরচ করে সর্বনাশা ইয়াবার পিছনে। মাদক নিরাময় কেন্দ্রে লিটনের সাথে কথা হলে এভাবেই বর্ণনা করে তার অন্ধকার জগতে পা বাড়ানোর গল্প।
তিন বছর ধরে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিত্সা নিচ্ছে লিটন মিয়া। এখন অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায় সে।
তার ভাষ্যে, আমার আশপাশের পরিবেশটা এখন আমার কাছে স্বাভাবিক নেই। আমার মতো অনেক তরুণ ইয়াবা আসক্ত। এ সংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়ে চলছে। ইয়াবা এখন ভাইরাসের মতো। গ্রাম গঞ্জে হাত বাড়ালেই ইয়াবা পাওয়া যায়। তাই খুব ভয় হয়, পুরোপুরি ভালো হতে পারবো কি-না।
আপনার মতামত লিখুন :