আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দোকলাম সঙ্কটের পর সম্প্রতি নতুন করে চীনা সেনাদের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) অতিক্রমের যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে এটা বলা যায় যে, জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে নরেন্দ্র মোদি সরকারের বড় বড় বুলির পরও বিতর্কিত সীমান্ত এলাকা ভারতীয় বাহিনীর শক্তিবৃদ্ধির ব্যাপারে কার্যত কিছুই করা হয়নি। বরং উল্টাটা হয়েছে। সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কাছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কার্যক্রম বরং আরও সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। এতে সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়া এবং যুদ্ধের সক্ষমতাও ভোতা হয়ে গেছে। আরও খারাপ খবর হলো, আধুনিক যুদ্ধের জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীকে গড়ে তুলতে যে সব পুনর্গঠন জরুরি, সেগুলোও থমকে গেছে।
সরকারী তথ্যমতে, ২০১৭ সালে ৪১৫টি সীমান্ত লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। আগের বছর সংখ্যাটা ছিল ২৭১। এগুলোর মধ্যে ২১৬টি ঘটনায় মুখোমুখি হয়েছিল দুই দেশের সেনারা। এছাড়াও, নিয়ন্ত্রণ রেখার ২৩টি জায়গায় সীমানা নিয়ে বড় ধরনের বিরোধ রয়েছে। ১৯৯৫ সালে দুটি জায়গায় এ ধরনের বিরোধ ছিল। ১৯৯৮ সালের পারমানবিক পরীক্ষার পর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১২টিতে। আর ২০১৪ সালের মে মাসে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই সংখ্যা বেড়ে ২৩টিতে দাঁড়িয়েছে। কারণ মোদি সরকারের সময় রাষ্ট্রীয় দ্বিপাক্ষিক বিরোধের জায়গাগুলো সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে, যেটা আগের কোন সরকারের সময় ঘটেনি।
এসব বিবেচনায় দুটো বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। এক, রাজনৈতিক মতানৈক্য এবং সামরিক বাহিনীর সাথে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিরোধের সাথে একই মাত্রায় চীনা বাহিনীর সীমানা লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়েছে। দুই, ভারতের ভারসাম্য নষ্ট করার জন্য দর কষাকষির অংশ হিসেবে সীমানা লঙ্ঘনের ঘটনা কখনই বন্ধ করবে না চীন।
যেহেতু সীমানা লঙ্ঘন ও বিরোধপূর্ণ এলাকার সংখ্যা বাড়ছে, তাই চীনা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘন ঠেকানোর জন্য আরও বেশি সেনা মোতায়েন করা ছাড়া ভারতীয় সেনাবাহিনীর কোন উপায় নেই। ১৭টি মাউন্টেন কর্পসের মতো আক্রমণাত্মক বাহিনীগুলোকে টহলের কাজে লাগানো হচ্ছে। পাহারার চেয়ে টহলের কাজ অনেকটাই নিম্নতর, কারণ পাহারার সময় প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগের সুযোগ থাকে। তাছাড়া উচ্চ এলাকায় যেখানে টিকে থাকাটাই কঠিন কাজ, সেখানে যাদের মোতায়েন করা হয়েছে, তারা অদৃশ্য শত্রুর মোকাবেলা করতে করতে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়তে পারে।
এই বাস্তবতার প্রেক্ষিতে, নিজেদের শক্তি কমিয়ে আনতে পারবে না ভারতীয় সেনাবাহিনী কারণ এতে করে তারা আরও ক্ষীণ ও নিস্তেজ হয়ে পড়বে। জম্মু ও কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ বন্ধ ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে সেনাবাহিনীর ব্যাপক অংশগ্রহণের সাথে সাথে এবার ৩৪৮৮ কিলোমিটার দীর্ঘ নিয়ন্ত্রণ রেখায় কড়া পাহারার জন্য সেনাবাহিনীর শক্তি কমিয়ে আনাটা আর সম্ভব হবে না। স্থলসেনার সংখ্যা কমানো বা অস্ত্রাদি কমিয়ে এনেও কোন লাভ হবে না।-সাউথ এশিয়ান মনিটর।
আপনার মতামত লিখুন :