শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৬ জানুয়ারী, ২০১৮, ১০:৩৬ দুপুর
আপডেট : ২৬ জানুয়ারী, ২০১৮, ১০:৩৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রেকর্ড পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি

হোসাইন : গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। তার আগের বছরে একই সময়ের তুলনায় বিক্রি বাড়ে প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসের পর থেকেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমলেও সার্বিকভাবে রেকর্ড পরিমাণ বিক্রি হয়েছে। অর্থবছরের প্রথমার্ধে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকারের নিট আয় হয়েছে ২৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দেড় শতাংশ বেশি এবং পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ৭৯ শতাংশ। বৃদ্ধির হার কমলেও এর আগে কোনো অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকারের এত বেশি আয় হয়নি। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অধিদপ্তরের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট আয় সাড়ে ৪৪ শতাংশ বেড়ে হয় ৫ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। পরের মাস আগস্টে তা আগের বছরে তুলনায় সাড়ে ৭ শতাংশ কমে হয় ৩ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে নিট আয় ৫ শতাংশ কমে হয় ৩ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। তবে অক্টোবরে ৮ শতাংশ বেড়ে নিট আয় হয় ৪ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। নভেম্বর বিক্রি আবার কমে যায়। আগের বছরের ৪ হাজার ৪০২ কোটি টাকা থেকে কমে চলতি অর্থবছরের নভেম্বরে আয় হয় ৩ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা। সর্বশেষ ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ২ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় ১৬ শতাংশ কম। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকারের নিট আয় দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময় এই আয় ছিল ২৩ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এই খাত থেকে সরকারের আয় হয় ১৩ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ ওই অর্থবছরে আয় বাড়ে ৭৬ শতাংশ। কিন্তু চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বিক্রি বেড়েছে মাত্র ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে মোট আয় হয় ৩৯ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা। আগের বিক্রি থেকে এই সময়ে পরিশোধ করা হয়েছে ১৫ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সুদ পরিশোধ করতে হয় ৯ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ নিট আয় দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের মূল ও মুনাফা পরিশোধের পর যে পরিমাণ অর্থ অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিনিয়োগ। তাই বিনিয়োগের ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেটে নির্ধারিত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতিমাসে মুনাফা দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সুদহার কমিয়েও লাগাম টানতে পারেনি সরকার। সম্প্রতি সুদ হার কমানো, কেনার নির্ধারিত সীমা, অর্থের উৎস জানাসহ অন্যান্য শর্ত পালনের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপে কাজ শুরু করেছে সরকার। তবে কোনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। কিন্তু এর আগেই সঞ্চয়পত্র বিক্রির বৃদ্ধির হার অনেটাই কমে এসেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত বলেন, সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে বেশকিছু বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ক্রয়কারীর অর্থের উৎস জানানো, নির্ধারিত সীমার বেশি যেন কেউ সঞ্চয়পত্র কিনতে না পারে, সেদিকে নজর রাখা। এতে ঊর্ধ্বগতি কিছুটা কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিবছরই বাজেটের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হচ্ছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র থেকে মাত্র ৮২৪ কোটি টাকা নিট বিনিয়োগ আসায় পরবর্তী অর্থবছরে এ খাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনা হয়। কিন্তু পরের অর্থবছর থেকেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ব্যাপক বৃদ্ধি দেখা যায়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাজেটে লক্ষ্য ছিল ৪ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবছর শেষে নিট আয় হয় ১১ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। পরের অর্থবছরে ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এর তিনগুণেরও বেশি ২৮ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা আয় হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেটে ১৫ হাজার কোটি লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বছর শেষে আয় হয় ৩৪ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত অর্থবছরের মূল বাজেটে ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বছর শেষে ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা নিট আয় হয়েছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এই খাত থেকে সরকার নিট আয়ের লক্ষ্য ধরেছে ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।

ব্যাংকে আমানতের সুদহার কম থাকায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। বর্তমানে ব্যাংক আমানতে সুদের হার ৪ থেকে ৬ শতাংশ। অন্যদিকে কমানোর পরও বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পের সুদহার ১১ থেকে ১২ শতাংশের কাছাকাছি। ২০১৫ সালের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদ গড়ে কমিয়ে আনা হয় ২ শতাংশ। বিভিন্ন সঞ্চয়পত্রের মধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়। পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশন সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বর্তমানে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ।দৈনিক আমাদের সময়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়