সুজন কৈরী : আন্ত:জেলা অপহরণকারী চক্রের হোতা শফিকুল ইসলাম ওরফে শামছুল হক ওরফে বাবুল ওরফে মলম বাবু ওরফে ডাকাত লিতুকে (২৮) গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা মেট্রোর একটি বিশেষ টিম। মঙ্গলবার রাতের দিকে মিরপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
পিবিআই’র বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ জানান, গহীন জঙ্গলে আটক রেখে মুক্তিপণ আদায় করত এই চক্র। গত ৫ ডিসেম্বর বাবুল নামে এক ব্যক্তি থাই এ্যালুমিনিয়াম ব্যবসায়ী আরিফ খানের দোকানে গিয়ে জানায় তার গ্রামের বাড়ি গাজীপুরে নির্মানাধীন বিল্ডিংয়ের জন্য থাই গ্লাস ও এ্যালুমিনিয়াম প্রয়োজন। আরিফ খান তাকে অতদুরে গিয়ে কাজ করা সম্ভব নয় বলে জানান। পরে এক পর্যায়ে রাজী হলে গত ৮ ডিসেম্বর বাবুল তার দোকানে গিয়ে মূল্য নির্ধারন করে। বাবুল ছুটি পেলে তাকে গ্রামের বাড়িতে বিল্ডিংয়ের কাজের মেজারমেন্ট করতে নিয়ে যাবে বলে জানায়।
তিনি আরও জানান, গত ১৯ ডিসেম্বর বেলা ৩ টার দিকে বাবুল দোকানে গিয়ে তাকে এবং তার মিস্ত্রি সোহাগ খলিফাকে (২৭) নিয়ে বাসযোগে রওয়ানা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় বাস থেকে নেমে কিছুদুর গেলে মুন্সী নামের এক ব্যক্তি তাদেরকে রিসিভ করে। সেখান থেকে বাবুলসহ তারা জঙ্গলের দিকে ৮/১০ মিনিট হাটঁতে থাকলে তার সন্দেহ হয় এবং কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তারা বলে আর একটু সামনে যেতে হবে। এরপর পূর্বপরিকল্পিতভাবে ওঁৎ পেতে থাকা আরও কয়েকজন অপহরণকারী চক্রের সদস্য তাকে ও মিস্ত্রী সোহাগকে অস্ত্র ঠেকিয়ে জিম্মি করে ফেলে। মারধর করার একপর্যায়ে তাদের হাত-পা বেঁধে ফেলে। লোহার রড ও চাপাতির বাট দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এলোপাথারী আঘাত করে। তার সঙ্গে থাকা নগদ ৭ হাজার টাকা, ২টি মোবাইল ফোনসেট নিয়ে নেয়। পরে ওই মোবাইল তেকে তাদের আত্মীয় স্বজনদেরকে জিম্মির বিষয়টি জানিয়ে বিকাশের মাধ্যমে মুক্তিপণের ৮৫ হাজার ৯০০ টাকা আদায় করে। টাকা পেয়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অন্ধকার জঙ্গলের দুই জায়গায় দুজনকে ফেলে রেখে অপহরণকারীরা চলে যায়। জঙ্গল থেকে বের হয়ে রাস্তায় এসে পথচারীর মোবাইল দিয়ে তাদের আত্মীয় স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করে বাসায় ফিরে আসে। পরে এ ঘটনায় শাহআলী থানায় মামলা দায়েরের পর তদন্তে নামে পিবিআিই। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে চক্রের হোতা লিতুকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে আরিফের মোবাইল ফোনসেট, মুক্তিপণের টাকা গ্রহণের পার্সোনাল বিকাশ সিম দুটি উদ্ধার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লিতু জানিয়েছেন, তার নেতৃত্বে¡ একটি ভয়াবহ অপহরণকারী চক্র কাজ করে। চক্রটি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা কৌশলে ব্যবসায়িদের অপহরণ করে আটক রেখে মুক্তিপণ আদায় করে থাকে। এ চক্রের আরও একাধিক সদস্যকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং গ্রেফতার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। লিতুর বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :