নুর উদ্দিন, ছাতক (সুনামগঞ্জ): সুনামগঞ্জের বোরো ফসলহারা ৩ লাখ কৃষকের জন্য সাড়ে ৫৮ কোটি টাকার কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচীর বরাদ্দ এখনও পাননি কৃষকরা। উপজেলা অনুযায়ী দ্রুত সময়ে বিতরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও নগদ সহায়তা বাবদ কৃষক পিছু ১ হাজার টাকা এখনও পাননি জেলার সিংহভাগ কৃষক। কার্যত সাত উপজেলায় নগদ টাকা বিতরণ কাজ এখনও শুরুই করা হয়নি।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কৃষক কৃষি কার্ডের মাধ্যমে পুনর্বাসন সহায়তা পাবেন। ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে প্রত্যেক কৃষক এক হাজার টাকা করে পাওয়ার কথা, কিন্তু গত তিন মাসেও পুনর্বাসনের সেই টাকা হাতে পায়নি কৃষকরা। ইতোমধ্যে অনেক ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক জমি চাষাবাদের কাজ শেষ করে ফেলেছেন।
অনেকে কৃষকের জমিতে ধান রোপনের কাজ শেষ পর্যায়ে। কিন্তু কবে তাদেরকে সেই পুনর্বাসনের টাকা দেয়া হবে তারা জানেন না।
উপজেলা সদরে কৃষি সার-বীজ বিতরণের কথা থাকলেও জেলা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কৃষকদের সুবিধার্থে প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষকদের সার-বীজ বিতরণ করা হয়েছে।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জের জয়কলস ইউনিয়নের তেঘরিয়া গ্রামের কৃষক অবনী মোহন দাস বলেন, সার-বীজ দেয়া হয়েছে অনেক আগে। জমি চাষাবাদ শেষ পর্যায়ে টাকা দেয়ার কোন লক্ষণ নেই। পুনর্বাসনের টাকা কবে দেয়া হবে তা আজ পর্যন্ত জানানো হয়নি। ইউএনও সাহেব বলছেন টাকা ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। ইউপি সদস্যরা জানিয়েছেন তালিকা তৈরির কাজ শেষ হয়নি।
দিরাই উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের সাকিতপুর গ্রামের কৃষক জুয়েল সর্দার বলেন, জমিতে ধান রোপন করা প্রায় শেষ পর্যায়ে কিন্তু এখন পর্যন্ত কৃষি পুনর্বাসনের টাকা পাওয়া যায়নি। কবে কৃষকদের এই টাকা দেয়া হবে তাও জানানো হয়নি।
শাল্লা উপজেলা সদরের ডুমরা গ্রামের কৃষক অঞ্জন চন্দ্র দাস বলেন, আমি ৩ কেদার জমি করছি। ধান রোপনের কাজ শেষ। এখন পর্যন্ত আমার একাউন্ট খোলা হয়নি। আমাদের জানানো হয়েছে, আরও সপ্তাহ খানেক সময় লাগবে। যেদিন একাউন্ট খোলা হবে সেদিনই নাকি টাকা দেয়া হবে।
গত ১৫ অক্টোবর রবিবার বিকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা কৃষি পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ২৬ হাজার ৮৯৩ জন কৃষক, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ২৯ হাজার ২২৭ জন, দোয়ারাবাজারে ২২ হাজার ১৫৫ জন, বিশ্বম্ভরপুরে ১৪ হাজার ২৯২ জন, জগন্নাথপুরে ২৩ হাজার ৪৮৪ জন, জামালগঞ্জে ২৮ হাজার ৯৬৫ জন, তাহিরপুরে ২৯ হাজার ৯৪৮ জন, ধর্মপাশায় ৪৫ হাজার ৩৬৪ জন, ছাতকে ১৮ হাজার ৭৬৬ জন, দিরাইয়ে ৩৬ হাজার ২৯১ জন ও শাল্লায় ২৪ হাজার ৬১৫ জন কৃষি কার্ডের মাধ্যমে ১ হাজার টাকা করে পুনর্বাসন সহায়তা পাবেন।
সদ্য বিদায়ী সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. জাহেদুল হক জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই সার-বীজ প্রদান করা হয়েছে।
কথা ছিল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সার-বীজ প্রদানের পরপরই ব্যাংকের মাধ্যমে পুনবার্সনের টাকা দিয়ে দিতে। আমি থাকাকালীন সময়ে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা, মধ্যনগর ও দোয়ারাবাজারে পুনর্বাসনের টাকা প্রদানের কার্যক্রম চলছিল।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার সাহা বলেন, ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার ও বিশ্বম্ভরপুরে টাকা প্রদানের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আগামী ২/৩ দিনের মধ্যেই সকল উপজেলায় টাকা প্রদানের কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে। যেসব এলাকায় হিসাব খোলার কাজ বাকী রয়েছে, সেখানে হিসাব খোলা হবে টাকাও দেয়া হবে। আমরা আশা করি আগামী এক মাসের মধ্যে সকল কৃষককেই টাকা প্রদান করা সম্ভব হবে।
আপনার মতামত লিখুন :