ডেস্ক রিপোর্ট : যেখানে সেখানে পড়ে থাকা শুল্ক ফাঁকির অবৈধ বিএমডব্লিউ, পোরশে, রেঞ্জ রোভার বা মার্সিডিজ ব্র্যান্ডের গাড়ি বৈধ হতে চলেছে। এ বিষয়ে এরই মধ্যে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত ১৪ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত এনবিআরের প্রথম বোর্ড সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্তে আটককৃত গাড়িগুলোর আইনগত প্রক্রিয়া শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বলা হয়, আটক করা গাড়িগুলো খুব ভালো, ভালো এবং মোটামুটি ভালো- এই তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করতে হবে। এরপর গাড়িগুলো সরকারি যানবাহন হিসেবে ভিভিআইপি পুলে এবং সচল গাড়িগুলো সরকারি পুলে দেয়া হবে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, সেই সব বিলাসবহুল অবৈধ গাড়ির তালিকাসহ সারসংক্ষেপ তৈরি করা হচ্ছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর কর ফাঁকি দেয়া গাড়িগুলোর তালিকা ও সারসংক্ষেপ তৈরির কাজ করছে। সহসাই সারসংক্ষেপটি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে পাঠানো হবে। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে এনবিআরের সদস্য মো. লুৎফর রহমান মানবজমিনকে বলেন, এ বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আরো যাচাই বাছাই করা হবে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে হরহামেশাই বাড়ির পার্কিং, হাতিরঝিলের ব্যস্ত রাস্তা বা বিভিন্ন উন্মুক্ত স্থানে মিলেছে বিএমডব্লিউ, পোরশে বা মার্সিডিজ ব্র্যান্ডের মতো বিলাসবহুল গাড়ি। ২০১৭ সালের প্রথমদিকে অর্থাৎ জানুয়ারিতে রাজধানীর বনানীতে মোহাম্মদ মুহসিন আলম নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা দামের বিলাসবহুল বিএমডব্লিউ এক্স-৫ গাড়ি জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দারা। বনানীর ২৫ নম্বর সড়কের ৪৬ নম্বর ‘আকাশপ্রদীপ’ বাড়ির বেজমেন্ট থেকে গাড়িটি জব্দ করা হয়। কারনেট সুবিধায় আনা গাড়িটি ২০১১ সালে দেশে আনা হয়েছিল। কারনেটের মেয়াদ শেষ হলেও তিনি তা জমা দেননি। একই বছরের মার্চ মাসের শেষে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আমদানি করার অভিযোগে ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের একটি কালো রঙের রেঞ্জ রোভার গাড়ি জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দারা।
এছাড়া, একই বছরের ১০ই এপ্রিল রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় একটি পোরশে গাড়ি রেখে মালিক উধাও হয়ে যান। ভেতরে পাওয়া যায় খোঁজাখুঁজি না করার অনুরোধ সংক্রান্ত একটি চিঠি। যাতে লেখা ছিল গাড়িটি যে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা হয়েছে সেটি সমপ্রতি জানতে পেরে মান-সম্মানের ভয়ে ফেলে যাওয়া হলো। ২০০৫ সালের পোরশে কায়ান মডেলের ওই গাড়িটির দাম চার কোটি টাকা। একই বছরের ২রা মে রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএস আবাসিক এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় প্রায় দুই কোটি টাকা দামের একটি মার্সিডিজ গাড়ি উদ্ধার করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত বিভাগের সদস্যরা। এছাড়া ৩রা মে চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকার ‘কার কোল্ড অ্যান্ড সার্ভিস সেন্টার’ নামের একটি গ্যারেজে পাওয়া দুইটি মার্সিডিজ গাড়ি জব্দ করা হয়। দুটি গাড়িই শুল্কমুক্ত সুবিধা কারনেটের আওতায় বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। একই মাসে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা চারটি গাড়ি শুল্ক গোয়েন্দাদের কাছে হস্তান্তর করে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়। এছাড়া ২০১৭ সালের ৬ই জুন মডেল জাকিয়া মুনের পোরশে গাড়ি রাজধানীর গুলশান-১ এর ৩৩ নম্বর রোডের ১০ নম্বর বাড়ির পার্কিং থেকে আটক করে শুল্ক গোয়েন্দারা।
আটকের সময় গাড়িতে বৃটিশ নম্বর যুক্ত ছিল। এ গাড়ির বিপরীতে দুই কোটি ২৭ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ আনা হয়। একই মাসে জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা (ইউএনডিপি)-এর এক কর্মকর্তার বিলাসবহুল বিএমডব্লিউ গাড়িটি জব্দ করা হয়। গেল দুই বছরে এমন চিত্র হরহামেশাই ঘটেছে। ২০১৭ সালে শতাধিক গাড়ি জব্দ করা হলেও ২০১৬ সালে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে বিলাসবহুল ৪০টি গাড়ি আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দারা। এসব গাড়ি ফেলে না রেখে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ জন্য একটি ফর্মুলা বানাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সহসাই এটি আলোর মুখ দেখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্র: মানব জমিন
আপনার মতামত লিখুন :