শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ২২ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৯:২৯ সকাল
আপডেট : ২২ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৯:২৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গভীর সমুদ্রপথে ইয়াবা পাচার

তারেক : মরণনেশা ইয়াবা পাচারে এখন বেছে নেওয়া হয়েছে গভীর সমুদ্রপথ। পাচারের প্রধান বাহন দেশি ইঞ্জিনবোট। লাখ লাখ পিস ইয়াবাবাহী এসব ইঞ্জিনবোট চট্টগ্রামের আনোয়ারা, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা উপকূলের ঘাটে ঘাটে খালাস করছে চাহিদামাফিক ইয়াবা। স্থলপথে কড়াকড়ি আরোপ হওয়ায় মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সাগরপথকে এবার নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে। টেকনাফে বন্দুকযুদ্ধে র‌্যাব, কোস্টগার্ড, পুলিশের হাতে ইয়াবার ছয় গডফাদার নিহত হওয়ার পর থেকেই পাচারের বিকল্প এ পথ আবিষ্কৃত হয়।

সাগর ও নদীপথে আসা ইয়াবা চালানের বেশির ভাগ এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার হয় টেকনাফ, হ্নীলা ও উখিয়ার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে। চোরাচালানিরা দেশীয় ইঞ্জিনবোটে লাখ লাখ পিস ইয়াবা নিয়ে গভীর সমুদ্রপথ ধরে সরাসরি হাতিয়া, সন্দ্বীপ ও চরজব্বার এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে। সেখানে খালাস করা ইয়াবা স্থানীয় লঞ্চ-ট্রলারযোগে চাঁদপুর, শরীয়তপুর হয়ে ঢাকার পথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে ইয়াবার বড় চালানগুলো সমুদ্রপথে চলে যায় বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালীর বিভিন্ন নৌবন্দর ও ঘাটে। বর্তমানে সেন্টমার্টিন দ্বীপের অদূরে দক্ষিণের সীতাপাহাড়ে মিয়ানমারের ট্রলারে আসে ইয়াবার বড় বড় চালান। সেখান থেকে মাছ ধরার বড় ট্রলারে সরাসরি ভোলার ইলিশাঘাট সংলগ্ন বিভিন্ন পয়েন্টে পৌঁছে। ভোলায় ইয়াবার প্রধান এজেন্ট হুমায়ুন কবীর। তার বাড়ি ভোলা সদর থানার রুহিতা গাজীবাড়ি বলে জানা গেছে। ইলিশা পয়েন্টে খালাস করা ইয়াবা হুমায়ুন কবীরের দায়িত্বে স্থানীয় লঞ্চ-ট্রলারযোগে পটুয়াখালীর উপকূলীয় বিভিন্ন ঘাটে পাঠানো হয়। সেখান থেকে সড়কপথে কোচযোগে অনায়াসে ইয়াবা পৌঁছে ঢাকায়। এদিকে পুলিশ বলছে, ভোলার মতো নদী তীরবর্তী প্রতিটি জেলায় চট্টগ্রাম কিংবা কক্সবাজার থেকে সরাসরি ইয়াবার চালান ঢুকে পড়ছে। এক সময় যারা হেরোইন, ফেনসিডিল ও গাঁজা বিক্রি করত, তারা এখন ইয়াবা ব্যবসায় নিয়োজিত। পাইকারি চোরাচালানকারীদের নিজস্ব ডিলাররা জেলায় জেলায় সরবরাহ করছে। আর এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ।

এমনকি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যেও অনেকে লাভজনক ইয়াবা বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ছেন। শুধু নৌপথেই নয়, সড়ক, রেল, আকাশপথ ব্যবহার করেও দেশে ঢুকছে ইয়াবা। মিয়ানমার ছাড়াও থাইল্যান্ডে উত্পাদিত দুই ধরনের ইয়াবাও সাগরপথে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। শুধু ইয়াবা নয়, এ রুটে আবার ফিরে এসেছে সিল্ক রুটের অন্যতম পণ্য হেরোইন। টেকনাফ ও শাহপরীর দ্বীপের মধ্যবর্তী প্রায় ১৪ কিলোমিটার নাফ নদীর চ্যানেল এলাকা ইয়াবা পাচারের প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ছোট নৌকা, ট্রলার, মালবাহী ছোট জাহাজে করে ইয়াবার চালান যায়। নির্ভরশীল সূত্রে জানা গেছে, টেকনাফ থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন ঘাট পয়েন্টে শুধু ইয়াবা বহনকারী তিন শতাধিক ইঞ্জিন বোট রয়েছে। যেসব নৌকার মালিকরাও সরাসরি ইয়াবা বাণিজ্যে জড়িত। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমারের মংডু হতে বিভিন্ন ধরনের ফিশিং বোটের মাধ্যমে টেকনাফের স্থলবন্দর, শাহপরীর দ্বীপ, মাঝিরপাড়া, জালিয়াপাড়া, ট্রানজিট ঘাট, নাইট্যংপাড়া, সাবরাংয়ের লেজিপাড়া ও বার্মাপাড়া পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিনই দেশে লাখ লাখ পিস ইয়াবা আসছে। দেশের অভ্যন্তরেও গড়ে উঠেছে ইয়াবা বাণিজ্যের সংগঠিত নেটওয়ার্ক। নিরাপদ-নির্বিঘ্ন এ নেটওয়ার্কের মাধ্যমেই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে ভয়ঙ্কর আসক্তি। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখন তা মুড়ি-মুড়কির মতো বিক্রি হচ্ছে। অলি-গলি, মোড়ে মোড়ে হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা। পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি, সিআইডি, আবগারিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব সংস্থার সদস্যরা রাত-দিন ইয়াবাবিরোধী অভিযানে থাকেন। প্রায় প্রতিদিনই হাজার হাজার পিস ইয়াবা জব্দ হয়, আটক হয় ইয়াবা পাচারকারী, বিক্রেতাসহ সেবনকারীও। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না, বন্ধ হচ্ছে না ইয়াবার স্রোত।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, মিয়ানমারের ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ঢাকা ও চট্টগ্রামের অভিজাত এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন। তারা কক্সবাজার, টেকনাফ, বান্দরবান, টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। অন্যদিকে বাংলাদেশি অনেক ইয়াবা ব্যবসায়ী এখন স্থায়ী ডেরা তুলে অবস্থান করছেন মিয়ানমারের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্টে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিট ইয়াবা চালান বন্ধের জন্য কেবলমাত্র কক্সবাজার-টেকনাফের দিকে নজরদারি রাখায় পাচারকারীরা বান্দরবান-খাগড়াছড়ির পাহাড়ি পথেও নির্বিঘ্নে ইয়াবার চালান পাঠাচ্ছে। খাগড়াছড়ি-রামগড় হয়ে ইয়াবার বড় চালান ফেনীতে আনছে আদ্যক্ষর ‘ন’ সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট ঢাকায় পাইকারি ইয়াবা সরবরাহ করার পাশাপাশি ফেনী-নোয়াখালীর খুচরা বাজারও নিয়ন্ত্রণ করে চলছে বলে জানা গেছে।

পাচারে নিত্যনতুন কৌশল : নিত্যনতুন কৌশলে পাচার হয়ে আসা মাদকদ্রব্য ধরতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। সোর্সের মাধ্যমে মাদক পাচারের নিশ্চিত খবর পাওয়ার পর অভিযান চালিয়েও র‌্যাব-পুলিশ সদস্যরা অনেক ক্ষেত্রে সফল হতে পারছেন না। ইদানীং বাক্প্রতিবন্ধীদের (বোবা) মাধ্যমেও পাচার করা হচ্ছে ইয়াবা। এতে ইয়াবাসহ বোবারা ধরা পড়লেও তারা মূল মাদক ব্যবসায়ীর নাম-পরিচয় কিছুই জানাতে পারে না, দিতে পারে না স্বীকারোক্তিমূলক কোনো জবানবন্দি। তাছাড়া গাড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর স্টিকার সেঁটে পাচার করা হচ্ছে ইয়াবা। মাদক পাচারকারীদের নিত্যনতুন কৌশলগুলো আবিষ্কারের ক্ষেত্রে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের গোয়েন্দা তত্পরতা কিছুটা সফল হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

তারা জানান, অতিরিক্ত সোর্স নিয়োগ, ছদ্মবেশ ধারণ, মাদক সংগ্রহের মূল ঘাঁটিগুলো পর্যবেক্ষণ করে এরই মধ্যে ২০-২২টি নতুন কৌশলের সন্ধান পাওয়া গেছে। ইয়াবার থাবা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তত্পরতা যেমন বাড়ছে তেমন পাল্লা দিয়ে বদলে যাচ্ছে পাচারকারীদের কলাকৌশল। গরুর পেটে অপারেশন করে মাদক রেখে পাচারের ঘটনা ঘটেছে অতীতে। এখন স্কচটেপ পেঁচানো ইয়াবা কলার মধ্যে ঢুকিয়ে সে কলা গিলে খাচ্ছে পাচারকারীরা। তারপর চরম ঝুঁকিপূর্ণ কায়দায় পেটের মধ্যে ইয়াবা পাচার করছে তারা। এ কৌশলে অতিসম্প্রতি দুই নারী তাদের পেটে এক হাজার ৮৫০ পিস ইয়াবা নিয়ে টেকনাফ থেকে ঢাকায় পৌঁছেও শেষ রক্ষা হয়নি। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা তাদের আটক করে দুই দিন ধরে হাসপাতালে রেখে নানা কসরতে পায়খানার সঙ্গে ৭৪টি ইয়াবার প্যাকেট বের করে আনতে সক্ষম হন। প্রশাসনিক এতসব তত্পরতার মুখেও মাদক পাচারকারীদের সরবরাহ ব্যবস্থা সচল থাকছে। কখনো মাথায় নকল চুলের ভাঁজে, পায়ুপথে, মাছের পেটে, মসলার প্যাকেটে, ডাবের মধ্যে ও শুকনা মরিচের ভিতর লুকিয়ে মাদক পাচার হয়। পঙ্গু ব্যক্তিদের ব্যবহার করা স্টিল পাইপ দ্বারা প্রস্তুতকৃত বিশেষ ক্রাচের (লাঠি) ভিতরে, কখনো মৃত মানুষের কফিনে, মোবাইল সেট, আবার কখনো বা আবেদনময়ী যুবতীর পাকস্থলিতে মাদক বহন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা পাচার করা হচ্ছে। কুমড়া কিংবা লাউয়ের খোলস, সিএনজি গ্যাস সিলিন্ডার, এয়ারকুলার, কম্পিউটারের মনিটর ও সিপিইউর ভিতর ভরে রাজধানী ঢাকায় নিয়ে আসা হচ্ছে ইয়াবা। ফলমূল, মাছ ও শুঁটকির প্যাকেট, পান ও বরইয়ের বস্তা, মাছ ধরার ট্রলার, নৌকা, গাড়ির টায়ারে, সিটের নিচে, নারী বাসযাত্রীর জুতার ভিতর এমনকি পাচারকারীদের পেট থেকেও পলিথিন মোড়ানো ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধারের বহু ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশ প্রতিদিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়