শিরোনাম
◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৫৯.৭ শতাংশ  ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী

প্রকাশিত : ২০ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৯:২০ সকাল
আপডেট : ২০ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৯:২০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সমস্যার বেড়াজালে রাজধানী

তারেক : হাজারো সমস্যায় জর্জরিত রাজধানীবাসী। ওয়াসার পানির পাইপ দিয়ে বের হয় ময়লা আর দুর্গন্ধযুক্ত পানি। জার ও বোতলের পানিতে ভেসে বেড়ায় মলের জীবাণু। দিনভর গ্যাসের তীব্র সংকটে জ্বলছে না রান্নার চুলা। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি আর উন্নয়ন কাজে ধূলিময় বাতাসে অন্ধকার চারপাশ। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তীব্র হচ্ছে যানজটের মাত্রা। ধূলিময় বাতাস আর কালো ধোঁয়ায় বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। সমস্যার বেড়াজালে জড়িয়ে গেছে রাজধানীবাসীর জীবন ও জীবিকা।

নগরবিদ মোবাশ্বের হোসেন বলেন, প্রতিটা সংস্থাকে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। ঢাকার চারপাশের চারটি নদীকে দূষিত করে এখন সেই পানি আবার পরিশোধন করা হচ্ছে। ঢাকাসহ পুরো দেশকে নিয়ে মহাপরিকল্পনা করতে হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে ঢাকায় মানুষের সমাগম এত বাড়ত না। দালানগুলোতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করলে বৃষ্টিতে জলজট ভোগান্তি যেমন হবে না, এর সঙ্গে সুপেয় পানি নিয়েও নগরবাসীকে কোনো দুশ্চিন্তায় পড়তে হবে না।

মুখে তোলা যায় না ওয়াসার পানি : পুরান ঢাকার লাল মোহন সাহা স্ট্রিটের বাসিন্দারা দুর্গন্ধের কারণে মুখে তুলতে পারেন না ওয়াসার সাপ্লাইয়ের পানি। ওই এলাকার বাসিন্দা নাজনীন আক্তার বলেন, অনেক সময় পানির পাইপ দিয়ে ময়লা বের হয়। পানিতে এতটাই দুর্গন্ধ যে ফুটালেও যায় না। সুপেয় পানির অভাবে প্রায় আধা মাইল দূরে টিপু সুলতান রোডের জোড়পুকুর বাজার পানির পাম্পের সামনের সড়কের দুটি পাইপ থেকে পানি নেন তারা। পাম্প থেকে পাইপ দিয়ে পানি বাসাবাড়িতে যেতেই ছড়িয়ে পড়ে দুর্গন্ধ। লাল মোহন স্ট্রিটের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, প্রায় ৪৬ বছর পার হলেও এসব এলাকার পাইপ বদলানো হয়নি। পুরনো এসব পাইপ ফুটো হয়ে তাতে নোংরা পানি মিশে যাচ্ছে। সমস্যা সমাধানে ওয়াসায় অনেক যোগাযোগ করলেও কোনো কাজ হয়নি। এ এলাকার আলী হোসেন খান রোড, আগা নবাব দেউরি, আবুল খায়রাত রোড এলাকায়ও ওয়াসার পাইপে দুর্গন্ধযুক্ত পানি আসে বলে জানান বাসিন্দারা। একই অবস্থা লালবাগ রোড, বিসি দাস স্ট্রিট, রসুলবাগ, ছাতাওয়ালা মসজিদের গলি, মেম্বার গলি, গোর-এ শহীদ গলি, ছোট দায়রা শরিফ সমু কাওয়ালের গলিতেও। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক বলেন, ‘পানিতে মূলত দুর্গন্ধ হচ্ছে ওয়াসার সরবরাহ লাইন পুরনো এবং বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কারণে। এ ছাড়া পানির সরবরাহ লাইনের সঙ্গে সুয়ারেজ লাইন মিশে যাওয়ার কারণেও এ সমস্যা হতে পারে। এ সমস্যা সমাধানে আমি ওয়াসার সঙ্গে কথা বলব।’

জারের পানিতে মলের জীবাণু : রাজধানীর বাসাবাড়ি, অফিস-আদালতে সরবরাহ করা ৯৭ ভাগ জারের পানিতে ক্ষতিকর মাত্রায় মানুষ ও প্রাণীর মলের জীবাণু ‘কলিফর্ম’ পেয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) একদল গবেষক। শাক-সবজিতে কীটনাশক দূষণ, বোতলজাত ও জার পানিতে বিদ্যমান খনিজ উপাদানের মাত্রা ও গুণাগুণ নির্ণয়ে গবেষণা করতে গিয়ে এমন ‘ভীতিকর’ তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন কাউন্সিলের পুষ্টি বিভাগের পরিচালক ড. মনিরুল ইসলাম। জার পানির গবেষণায় ২৫০টি নমুনা সংগ্রহ করেন গবেষকরা। বিশেষ করে ঢাকার ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, চকবাজার, সদরঘাট, কেরানীগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, বাসাবো, মালিবাগ, রামপুরা, মহাখালী, গুলশান, বনানী, উত্তরা, এয়ারপোর্ট, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, গাবতলী, আমিনবাজার, আশুলিয়া ও সাভার এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। গবেষণায় এলিফ্যান্ট রোড, চকবাজার, বাসাবো, গুলশান, বনানী থেকে সংগ্রহ করা পানির নমুনায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় টোটাল কলিফর্ম ও ফেকাল কলিফর্মের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

কেবল জারের পানিতে প্রাণঘাতী জীবাণুর উপস্থিতিই নয়, বাজারে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির বোতলজাত পানিতেও বিএসটিআই নির্ধারিত মান না পাওয়ার তথ্য উঠে এসেছে এ গবেষণায়। মনিরুল বলেন, সুয়ারেজ লাইনে ছিদ্রসহ বিভিন্নভাবে ওয়াসার পানিতে মলমূত্রের জীবাণু মিশে যায়। আর সেগুলো কিছুটা শোধন করে বা শোধন ছাড়াই জারের পানিতে বিক্রি করা হচ্ছে। সে কারণে জীবাণু থেকেই যাচ্ছে। ওয়াসার পানিতে কলিফর্ম থাকেই জানিয়ে তিনি বলেন, কেবল ফুটিয়ে খেলে সেই জীবাণু মুক্ত হতে পারে।

তীব্র গ্যাস সংকট : রাজধানীতে এখন গ্যাস সংকটে ভোগান্তির ঘটনা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত গ্যাস প্রায় থাকেই না। মাঝে মাঝে এলেও চুলা জ্বলে টিমটিম করে। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গ্যাস সংকটের তীব্রতাও বাড়ছে। ফলে বেড়েছে হয়রানি, নেমেছে অতিরিক্ত খরচের খড়গ।

স্থানীয়দের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা, বনশ্রী, মুগদা, নয়াপল্টন, মগবাজার, মালিবাগ, শাহজাদপুর, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, কাফরুল, পল্লবী, বংশাল, লালবাগ, আজিমপুর, যাত্রাবাড়ী এলাকার মানুষ দিনের অধিকাংশ সময় গ্যাস পাচ্ছেন না। গ্যাস পেলেও তার সরবরাহ খুবই কম। আবার অনেক এলাকায় সারাদিন গ্যাস থাকে না। রাত ১২টা থেকে ১টার দিকে গ্যাস আসে, ৫টা থেকে ৬টায় চলে যায়। রাত জেগে রান্নাবান্না ছাড়া বিকল্প নেই অধিকাংশের। শীতকালে গ্যাসের মৌসুমি চাহিদা বৃদ্ধির বিপরীতে সরবরাহে ঘাটতি বাড়ায় এবং পুরনো-ত্রুটিপূর্ণ সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের কারণে এ সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে বিতরণকারী সংস্থা তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। গ্যাস না পাওয়ায় প্রতিদিনই তিতাস গ্যাসের জরুরি ফোন নম্বরে কল করে অভিযোগ করছেন গ্রাহকরা। গ্যাস সংকটের তথ্য জানিয়ে দৈনিক অন্তত ৫০টি অভিযোগ আসছে তিতাসে।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির রেডিও অপারেটর আলতাফ হোসেন বলেন, শীতকালে গ্যাসের চাহিদা ২০ শতাংশ বেড়ে যায়। ফলে সাপ্লাই আগের মতো থাকলেও চাহিদা বাড়ায় তৈরি হচ্ছে সংকট।

যানজটে নাকাল জনজীবন : ছুটির দিন কিছুটা কম হলেও সপ্তাহের বাকি ছয় দিনই রাজধানীবাসীকে তীব্র ভোগান্তিতে পড়তে হয় যানজট সমস্যা নিয়ে। ৪০ মিনিটের রাস্তা যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা। এ পর্যন্ত যানজট কমাতে নেওয়া সবগুলো উদ্যোগই ব্যর্থ হয়েছে। একের পর এক ফ্লাইওভার তৈরি করলেও মেলেনি কোনো সুফল। ঢাকার যানজটের অন্যতম কারণ সড়কের ওপর দিয়ে পথচারী পারাপার। এটি এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় বিভিন্ন সময় নির্মিত হয়েছে ৬৬টি ফুট ওভারব্রিজ, যার বেশির ভাগই অব্যবহূত। নগরীতে নির্মিত তিনটি আন্ডারপাসের মধ্যে দুটিই কোনো কাজে আসছে না। নগরীর যাত্রীর চাপ কমাতে বেশ ঘটা করে চালু হয়েছিল ডেমু ট্রেন সার্ভিস। কিন্তু এতেও কমেনি যানজট। একই অবস্থা ওয়াটার বাস সেবারও। রাজধানীর যানজট কমানোর সবচেয়ে বড় উদ্যোগ ফ্লাইওভার। নয়টি ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। সমাধান মিলছে না তাতেও। যানবাহনের অতিরিক্ত চাপে ফ্লাইওভারের দুই দিকেই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। যানজট হচ্ছে ফ্লাইওভারের ওপরেও। এদিকে সিটিং সার্ভিস নাম দিয়ে আদায় করা হচ্ছে নির্ধারিত ভাড়ার পাঁচগুণ। সিটিং সার্ভিস বাসের স্টপেজ কম হওয়ার কথা থাকলেও কার্যত এমন কোনো স্টপেজ নেই, যেখান থেকে যাত্রী ওঠানো-নামানো হয় না। প্রায়ই বাসের রড ধরে ঝুলে যাওয়া-আসা করতে দেখা যায় সিটিং সার্ভিস লোগো লাগানো বাসের যাত্রীদের। সিটিং সার্ভিস নাম দিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে গলা কাটা ভাড়া আদায় করা হলেও দেখার কেউ নেই। ফলে সিটিং সার্ভিস নৈরাজ্য চলছেই।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) গত ৩ মে সিটিং সার্ভিসের এই নৈরাজ্য নিরসনে ‘সিটিং সার্ভিসসহ সুষ্ঠু যাত্রীসেবা’ নামে আট সদস্যের একটি কমিটি করে দেয়। পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে কমিটি সুপারিশ করলেও তার বাস্তবায়নে নীতিমালা প্রণয়ন বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিকে নজর নেই কর্তৃপক্ষের।

বাড়ছে পরিবেশ দূষণ : শীত শুরু হতেই রাজধানীজুড়ে শুরু হয়েছে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ। উন্নয়ন কাজ করতে দিনের পর দিন খুঁড়ে রাখা হচ্ছে রাস্তা। রাস্তার পাশের মাটি গাড়ির চাকায় মিশে ধূলিময় করছে পুরো এলাকা। রোদ উঠলেই ধুলার রাজ্যে পরিণত হচ্ছে রাজধানী। মিরপুরের শেওড়াপাড়া, সেনপাড়া এলাকা দিয়ে চলছে ড্রেন ও ফুটপাথ নির্মাণ কাজ। রাস্তার ওপরেই খুঁড়ে রাখা হচ্ছে মাটি ও বালি। এ এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, রোদ উঠলে মাটি শুকিয়ে ধুলায় পরিণত হয়। আর রাস্তার পাশে বালির স্তূপ করে রাখায় বাতাসে উড়ে তা পৌঁছে যাচ্ছে বাসাবাড়িতেও। ১৪/১ মীরবাগ এলাকায় একপাশে রাস্তা খুঁড়ে রাখা হয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা জানান, গত মাসেই ওয়াসার পানির লাইনের জন্য এ রাস্তা খোঁড়া হয়। কাজ শেষে গত সপ্তাহে পিচ ঢালাই দেওয়া হয়েছে রাস্তায়। এক সপ্তাহ পার না হতেই এবার সুয়ারেজ লাইনের জন্য আবার খোঁড়া হয়েছে একই রাস্তা। ময়লা-আবর্জনা রাস্তার ওপর তুলে রাখায় দুর্গন্ধে নাকে রুমাল চেপে যাতায়াত করতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। বৃষ্টি হলে কাদায় পিচ্ছিল হয়ে পড়েছে পুরো রাস্তা। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ফুটপাথ দখলমুক্ত করা, পার্কিং নিয়ন্ত্রণ, অহেতুক জলাবদ্ধতা নিরসনে কিছু কাজ করলে পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে পারে। এগুলোতে বিনিয়োগ লাগে না, শুধু ইচ্ছার প্রয়োজন। বড় প্রকল্পে কাজের সুযোগ না থাকলেও ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান ভীষণ আগ্রহী। কারণ সেখানে লাভ আছে। প্রজেক্ট দিয়ে টেকসই উন্নয়ন হবে না, উন্নয়ন টেকসই হবে নিয়ন্ত্রণে। বাংলাদেশ প্রতিদিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়