শিরোনাম
◈ তিন নম্বর সতর্ক সংকেতে সুন্দরবনের খালে আশ্রয় নিয়েছে শত শত মাছ ধরার ট্রলার ◈ চট্টগ্রাম বন্দরে সাইফ পাওয়ার টেকের যুগের অবসান, এনসিটির দায়িত্বে নৌবাহিনী ◈ ১ ট্রিলিয়ন ডলারের খনিজের খেলায় তালেবান, পেছনে চীন-রাশিয়া-ইরান-ভারত! ◈ পাকিস্তানকে ঠেকাতে গিয়ে ভারতে বন্যা, তোপের মুখে কঙ্গনা (ভিডিও) ◈ ৫ আগস্ট লক্ষ্য ছিল গণভবন, এবার জাতীয় সংসদ: নাহিদ ইসলাম (ভিডিও) ◈ গাজীপুরে মহানগর বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার ◈ দেশের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় জনগণ ঐক্যবদ্ধ : মির্জা ফখরুল ◈ রেস্ট হাউজে ‘নারীসহ’ ওসি, আটক করে ‘চাঁদা দাবি’ ছাত্রদল নেতার, সিসিটিভির ফুটেজ ফাঁস ◈ আর একটি হত্যাকাণ্ড ঘটলে সীমান্ত অভিমুখে লংমার্চ: হুঁশিয়ারি নাহিদ ইসলামের ◈ ধামরাইয়ে ঋণ দেওয়ার কথা বলে গৃহবধুকে ধর্ষণ, আসামী গ্রেফতার

প্রকাশিত : ২০ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৩:৫৫ রাত
আপডেট : ২০ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৩:৫৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ম্যাজিস্ট্রেটের অভিনব উদ্যোগে পরিচ্ছন্ন বিমানবন্দর

মবিনুর রহমান: হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফ। তার নেয়া উদ্যোগের ফলে বিমানবন্দরে এখন আর যেখানে সেখানে কেউ বর্জ্য ফেলছেনা। বিমানবন্দর ঘুরে এ চিত্র দেখা দেখা গেছে।

বিমানবন্দরে বিপনি কেন্দ্রগুলোতে পণ্যের মোড়ক ফেরত দিলে ক্রেতা পাচ্ছেন পাঁচ টাকা। আর কুড়িয়ে পাওয়া বর্জ্য দোকানদারকে ফেরত দিলে পরিচ্ছন্ন কর্মী পাচ্ছেন ১০ টাকা। এছাড়াও বিমানবন্দর এলাকার স্টেশনারি দোকানগুলোতে ঝুলছে কড়া নির্দেশনার এ ফেস্টুন। যেখানে লেখা রয়েছে, এয়ারপোর্ট এলাকায় যেকোন ধরণের ময়লা/ বর্জ্য নির্ধারিত ডাস্টবিনের বাইরে ফেললে ৫ শ টাকা জরিমানা অথবা ১ বছরের কারদন্ড হতে পারে। আর যদি খাওয়ার পর খালি বোতল, কাপ, প্যাকেট ইত্যাদি ফেরত দিয়ে অথবা দোকানের বিনে ফেলে তাহলে ৫ টাকা ফেরত নেয়ার নির্দেশ রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, তিন বছর ধরে তিনি শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত আছেন। তিনি লক্ষ করেছে বিমানবন্দরে এসে যাত্রী অথবা স্বজনেরা কিছু খেয়ে বর্জ্য ডাস্টবিনে ফেলছে না। ইচ্ছা মত যেখানে খুশি সেখানে তারা বর্জ্য ফেলছে। বর্জ্যরে কারণে এয়ারপোর্ট নোংরা হচ্ছিলো। বাড়ছিল মাছি ও বিড়ালের উপদ্রব। তাদের মৌখিতভাবে সর্তক করলেও কোন কাজ হচ্ছিল না। কফির কাপ, চিপস, বিস্কুটের প্যাকেট সহ বিভিন্ন বর্জ্যে এয়ারপোর্ট এলাকা নোংরা করা হতো। ভাবলাম কী করা যায়। অনেক ভেবে এ প্রজেক্ট দাঁড় করালাম।

মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, গত ১৫ অক্টোবর এই প্রজেক্ট বৃত্তান্ত লিখেছিলাম, ১৬ অক্টোবর শুরু করছিলাম। আজ এটা একটি সফল প্রজেক্ট। সবাই এই প্রজেক্টকে স্বাগতম জানিয়েছেন। বিমানবন্দরে আগত যাত্রী ও স্বজনরাও মানছেন।

যে কেউ চাইলে ছোট পরিসরে প্রতিষ্ঠান বা ক্যাম্পাসভিত্তিক এই প্রজেক্ট রেসিপি নিজেদের মত এডজাস্ট করে নিয়ে কাজে লাগাতে পারেন )। তার প্রজেক্ট নমুনা দেয়া হল,

প্রজেক্টঃ ময়লা দিন টাকা নিন
প্রজেক্ট এরিয়াঃ বিমানবন্দর এবং তদসংলগ্ন এলাকা
বরাদ্দঃ ০.০০ (শুন্য দশমিক শুন্য শুন্য) টাকা

এক. যেকোন পানীয় কিংবা খাবার আইটেম বিক্রির সময় পাঁচটাকা বেশী নিতে হবে এবং খাওয়ার পর গার্বেজ জমা দিয়ে পাঁচটাকা ফেরত নিতে বলতে হবে।

দুই. কাস্টমার খাবারের গার্বেজ জমা দিলে কিংবা দোকানের সামনের বিনে ফেললে পাঁচটাকা ফেরত দিতে হবে। গার্বেজ জমা কিংবা বিনে না ফেলে যত্রতত্র ফেললে অন্য কেউ তা কুড়িয়ে দোকানে জমা দিলে তাকে উক্ত পাঁচটাকা দিয়ে দিতে হবে।

তিন. তবে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের কেউ কিংবা এয়ারপোর্টের যেকোন স্টাফ অন্যের ফেলে দেয়া গার্বেজ জমা দিলে তাকে পাঁচটাকার পরিবর্তে দশটাকা দিতে হবে। এক্ষেত্রে ধরে নেয়া হবে যে, হয়তো দোকানী বিক্রির সময় পাঁচটাকা বেশী নিয়ে কাস্টমারকে ফেরত দেয়ার বিষয়টি অবহিত করেননি, না হয় পাঁচটাকা কমে বিক্রি করেছেন এবং গার্বেজের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। তাই অতিরিক্ত পাঁচটাকা ধার্য করায় দোকানীরা যেমন সতর্ক হবে তেমনি পরিচ্ছন্ন কর্মীরাও গার্বেজ কুড়াতে তৎপর হবে।

মনিটরিং -
এক. ভেতরে- একে ট্রেডার্সের বর্তমানে কর্মরত ১০ জন সুপারভাইজর
দুই. বাইরে- সিভিল এভিয়েশনের পরিচ্ছন্ন কাজে নিয়োজিত সুপারভাইজর (৬৪, ৬৫ আলফা এবং ৬৬)

উদ্দেশ্য-
এক. ময়লামুক্ত এয়ারপোর্ট এলাকা
দুই. মাছিমুক্ত এয়ারপোর্ট (অতিরিক্ত হিসেবে- সমুচা, সিঙ্গারা এবং পেটিস জাতীয় আইটেম যা খেতে গেলে ঝরে পড়ে, নিষিদ্ধ করতে হবে)
তিন. বিড়ালের সংখ্যা সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনা (বিড়ালের আহারের সোর্স তথা খাবারের বর্জ্য না থাকলে একসময় বিড়ালরা অন্যত্র চলে যাবে।)

সীমাবদ্ধতা ও উত্তোরণঃ

এক. পাবলিক রিয়েকশনঃ পাবলিক রিয়েকশন নির্ভর করবে বিষয়টি পাবলিকের কাছে কিভাবে উপস্থাপন করা হবে, তার উপর। বর্তমানে বিমানবন্দরে ৫ শতাংশ মানুষ গার্বেজ বিনে ফেলে এবং ৯৫ শতাংশ মানুষ বিনের বাইরে যত্রতত্র ফেলে। গ্রহণযোগ্যভাবে উপস্থাপন করতে পারলে দ্বিতীয় ৯৫ শতাংশ অংশই প্রজেক্টের প্রশংসা করে বিনাবাক্যে প্রহণ করে নিবে। কেবল প্রথম ৫ শতাংশ অংশ প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে, যা নেগলেজিবল।

দুই. পাবলিকের কাছে উপস্থাপনা কিংবা প্রচারঃ এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রহণযোগ্য উপস্থাপনার জন্য পূর্বের এবং পরের চিত্র দিয়ে প্রজেক্টের কার্যকারিতাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে, যাতে প্রথমেই বিষয়টি জনমনে পজিটিভ ইফেক্ট ফেলে। প্রজেক্টের সফলতা নির্ভর করবে এই উপস্থাপনার উপর।

তিন. বিদেশী যাত্রিরা নেগেটিভলি নেবে কি নাঃ যেহেতু উন্নত দেশগুলোতে রিসাইকেল্যাবল গার্বেজের জন্য এ ধরণের পদ্ধতি চালু আছে, সেহেতু এটি তাদের পূর্বপরিচিত এবং নেগেটিভলি নেয়ার সুযোগ কম।

চার. কর্তৃপক্ষ এবং সিনিয়র অফিসিয়ালস বিষয়টি কিভাবে নেবেনঃ প্রজেক্ট চালুর আগে কর্তৃপক্ষ কিংবা সিনিয়র অফিসিয়াল স্বাভাবিকভাবে দ্বিধায় থাকবেন। এ ধরণের অভিনব প্রজেক্টের ক্ষেত্রে তাঁদের কাছে প্রজেক্টের পজিটিভ দিকের চেয়ে নেগেটিভ দিক বেশী গুরুত্ব পেতে পারে। জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে তাঁরা আশংকা প্রকাশ করতে পারে। তাই তাঁদের অনেকটা অগোচরে পাইলট বেসিসে প্রজেক্টের কার্যক্রম চালু করতে হবে এবং এক পর্যায়ে প্রজেক্টের দৃশ্যমান কার্যকারিতা ও জনমনের পজিটিভ প্রতিক্রিয়াসহ তাঁদের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। এতে প্রজেক্ট প্রসংশার সাথে গ্রহণীয় হবে এবং কোনভাবে প্রজেক্ট বাদ দিতে গেলে বরং এতে পাবলিকের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশংকাই বেশী গুরুত্ব পাবে।

পাঁচ. প্রজেক্টকে সাসটেইন্যাবল করতে প্রতিবন্ধকতা এবং তা দূরীকরণের উপায়ঃ যেসব দোকানে কাস্টমার কম, তারা কাস্টমার হারানোর ভয়ে পাঁচটাকা করে বিক্রি করে দিতে পারে। যেসব দোকানে কাস্টমার বেশী তারা পাঁচটাকা নিয়েও কাস্টমারকে ফেরত নেয়ার বিষয়টি কমিউনিকেট নাও করতে পারে। উভয়ক্ষেত্রে কাস্টমার গার্বেজ যত্রতত্র ফেলে চলে যেতে পারে। পরিচ্ছিন্ন কর্মীরা সেই গার্বেজ জমা দিলে দোকানী তাদের পিস প্রতি পাঁচটাকার পরিবর্তে দশ টাকা দিতে হবে। অতিরিক্ত পাঁচটাকা আক্কেলসেলামীর কারণে দোকানীদের কিংবা দোকানের অসাধু কর্মচারীদের এ ধরণের প্রবণতা হ্রাস পাবে।

পর্যায়ক্রমে সব দোকানে দৃশ্যমান স্থানে ফেস্টুন আকারে গার্বেজের পাঁচটাকা ফেরেতের বিষয়টি টানানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

মাসখানেক এভাবে ধরে রাখতে পারলে এবং প্রচারপ্রচারণা চালালে এক পর্যায়ে সিংহভাগ যাত্রি কিংবা কাস্টমার এয়ারপোর্ট এলাকায় খাবার আইটেমে গার্বেজ ফেরত দেয়ার শর্তে পাঁচটাকা বেশী নেয়ার বিষয়টি জেনে যাবে। এতে কোন দোকানী পাঁচটাকা না নিলেও কাস্টমার গার্বেজ ফেরত দিয়ে পাঁচটাকা দাবী করবে, কারণ তার পূর্বধারণা থাকবে যে, মূল্যের মধ্যে ঐ পাঁচটাকা ধরা আছে। এভাবে একসময় উভয়পক্ষের জানাজানির মাধ্যমে প্রজেক্ট অটো রান করবে এবং সাসটেইনেবল হবে।

ছয়. বাহির থেকে নিয়ে আসা গার্বেজ সমস্যাঃ পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে বিউটিফিকেশন বৃদ্ধি করতে পারলে বাহির থেকে কিনে নিয়ে আসা খাবারের গার্বেজও এয়ারপোর্ট এলাকায় না ফেলার মনস্তাত্ত্বিক চাপ বৃদ্ধি পাবে। চারপাশের পরিবেশ মানুষকে বলে দেবে, এখানে ময়লা ফেলা ঠিক হবে না। এ বিষয়ে বিউটিফিকেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারের সাথে সমন্বয় করতে হবে।

সাত. এই প্রজেক্ট ভোক্ত অধিকারের সাথে সাংঘর্ষিক কি নাঃ এই প্রজেক্টে কার্যতঃ খাদ্যদ্রব্যের উপর পূর্বের মূল্যের তুলনায় অতিরিক্ত কোন অর্থ চার্জ করা হবে না। প্রত্যেক খাবার আইটেমের উপর অতিরিক্ত নেয়া পাঁচ টাকা বর্জ্য ফেরত দেয়ার পর ফেরত দেয়া হবে। যে আইটেমে বর্জ্য নেই, সেই আইটেমে পাঁচটাকা নেয়া হবে না। স্বাভাবিক কেনাবেচার অতিরিক্ত এই 'লেনদেনের কাজটুকুন'কে নিঃসন্দেহে পরিবেশের প্রতি আমাদের প্রত্যেকের দায়শোধ হিসেবে ধরা যেতে পারে। ফলে, এটি কোনভাবেই ভোক্তা অধিকারের সাথে সাংঘর্ষিক নয়।

লজিস্টিকসঃ

এক. দোকানীদের পাঁচটাকার নোট সরবরাহ- সোনালী ব্যাংক, বিমানবন্দর শাখা'র ম্যানেজারকে অনুরোধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত ৫টাকার নোট স্টকের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে যে কোন দোকানী চাহিদা অনুযায়ী ৫ টাকার নোট সংগ্রহ করতে পারে।

দুই. পর্যাপ্ত ডাস্টবিন এবং বাস্কেটের ব্যবস্থাকরণঃ ওয়াল্টনকে ৫০টি বিন এবং ৫০টি বাস্কেট প্রদানের অনুরোধ করা যেতে পারে।

থিংক, ইটস ওকে। লেটস প্লে...

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়