হামিম আহসান: রাজধানী ও এর আশেপাশে নতুন নতুন নামে আধিপত্য বিস্তারে তৎপর একাধিক সন্ত্রাসীগ্রুপ। চাঁদাবাজি, ভূমি কেনাবেচায় মাসোহারা থেকে শুরু করে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে হচ্ছে এসব গ্রুপের সংশ্লিষ্টতায়। ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে অনেকটা খোলামেলা ভাবেই চলে এসব গ্রুপের কর্মকাণ্ড। মোস্ট ওয়ান্টেডের তালিকায় থাকা আন্ডারওয়ার্ল্ড দাপিয়ে বেড়ানো পুরোনোদের বেশিরভাগ এখন পলাতক।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর মিরপুর একসময় জোসেফ বাহিনী বা কালা জাহাঙ্গীরের নামে কেঁপে উঠলেও ইন্টারপোলের টপ ওয়ান্টেডের তালিকাতেই এখন সীমাবদ্ধ। মিরপুরের আন্ডারওয়ার্ল্ডের মোস্ট ওয়ান্টেড শাহাদাৎ এখন ভারতে থাকলেও তার ইশারায় চলে চাঁদাবাজি। গোপীবাগের নাসির এখন ইতালিতে। কিন্তু তার ইশারায় এই এলাকায় চলছে মাদকের ব্যবসা।
কথিত এক সন্ত্রাসী মোবাইল ফোনে বলেন, পাঁচ ছয় জন মানুষ মারছি। পোলাপান পাঠাইলে ঘরে পাঠাবো। বাজারে নয়। টাকা কিন্তু দিতে হবে। আমার কথায় পুরো ঢাকা শহর চলে।
মোহাম্মদপুর , হাজারীবাগ , কেরানীগঞ্জে এখন ত্রাসের রাজত্ব চলে একাধিক নামে। এসব গ্রুপের ছত্রছায়ায় মাদক কেনাবেচা ছাড়াও কামরাঙ্গিরচরে ভয়ের কারণ এখন জঙ্গি গ্রুপের সদস্যরা। এছাড়া রামপুরা মিরপুর যাত্রাবাড়ী এলাকায় যারা মাদক কেনা বেচায় জড়িত তারাও জানে না মূল হোতা কারা?
কামরাঙ্গির চরের এক মাদক বিক্রেতা জানায়, এখন আমাদের জীবন নষ্ট। এসব করে কিছুই করতে পারি নাই। আগে থেকে যদি ভালো কাজ করতাম তাহলে ভালো থাকতাম। আমাদের জীবন আমরাই নষ্ট করছি। কেউ আমাদের নষ্ট করে নাই।
ঢাকার প্রত্যেকটি প্রবেশ পথে বাস এবং ট্রাকগুলোকে দিতে হয় মাসোহারা। এছাড়া বেড়িবাঁধ কেন্দ্রিক সড়কে অন্তত সাতটি পয়েন্টে চলে চাঁদাবাজি। কারওয়ান বাজারে সবজি বোঝাই ভ্যান থেকে ট্রাকের জন্য চাঁদার হার ২০ টাকা থেকে ৩শ টাকা পর্যন্ত। প্রতিদিন চাঁদাবাজির লক্ষ লক্ষ টাকা শেষ পর্যন্ত কোথায় ব্যবহার হয় তা কেউ জানেন না। আবার অনেকে জানলেও প্রকাশ করেন না।
হেমায়েতপুরের এক অপরাধী জানান, নারী, মদ, সব কিছুই চলে এখানে। অবৈধ জায়গায় গুণ্ডা পাণ্ডা দিয়ে এসব করানো হয়।'
শুধু রাজধানীতে নয় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ৫টি গ্রামের মানুষ কাঁপে আরিফ শরিফদুই ভাইয়ের নামে। হত্যা মামলার আসামি হলেও জামিন নিয়েই অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে তারা। সাভারের হেমায়েত পুরে সিরাজ মুজাফফর নামে দুই ভাই এখন চাঁদাবাজির টাকায় কোটিপতি। এছাড়া যাত্রাবাড়ী, সূত্রাপুরে কাজ করছে একাধিক গ্রুপ।
অন্যদিকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করতে বা বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি নয় কেউ।
এদিকে র্যাব জানায়, গত এক বছরে সারাদেশে ৭শর বেশি সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আর পুলিশ জানায়, সন্ত্রাসীদের তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।
র্যাবের পরিচালক (গণমাধ্যম শাখা) মুফতি মাহমুদ খান জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা এদেশ কুখ্যাত অপরাধীদের নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি করছিলো।
ডিএমপি উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, প্রকৃত অপরাধীদের ছবি সংগ্রহ করে এবং বিভিন্ন শনাক্তকারী চিহ্ন ডাটাবেজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করি। যাতে তাদের শনাক্ত করতে সহজ হয়।
সূত্র: সময়