জুয়াইরিয়া ফৌজিয়া : রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারে শুরু হচ্ছে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক। ওই বৈঠকে যোগ দিতে পররাষ্ট্র সচিবসহ ১৪ সদস্যের একটি দল ইয়াঙ্গুন পৌঁছেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমের বিশদ আলোচনা হবে এ বৈঠকে। মিয়ানমারের সাথে সমঝোতা অনুযায়ী এই মাসের ২৩ তারিখ থেকে প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা। আর বাকি আছে মাত্র ৮ দিন। প্রত্যাবাসন শুরুর ক্ষেত্রে এখনো যেসব বাধা আছে এই অল্প সময়ের মধ্যে সেগুলো কিভাবে দূর করা সম্ভব?
এই প্রসঙ্গে বিবিসি বাংলার সাথে এক সাক্ষাৎকারে শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক বিশ্লেষক আসিফ মুনির বলেন, সাম্প্রতিককালে যারা এসেছে এবং আগে যারা ছিল তাদেরকে নিয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ একটি তালিকা করেছে। কিন্তু ওদিক থেকেও একটা চাহিদা অবশ্যই থাকবে, তারা কাদের গ্রহণ করবে কাদের গ্রহণ করবে না। এইজন্য সেই ক্রাইটিরিয়াগুলো নির্ধারণ করার একটা ব্যাপার থাকবে। সে ব্যাপারেও কিন্তু এখনো পুরোপুরি কোনো সমঝোতা হয়নি। মিয়ানমার এখনো সুস্পষ্টভাবে বলেনি, যে আমরা এই ক্রাইটিরিয়াগুলো ওই তালিকার মধ্যে দেখতে চাই। সেটা যখন চূড়ান্ত হবে, তখন থেকে সেই অনুযায়ী তালিকা পূরণ করা শুরু হবে আমাদের ডাটাবেজে। তারপরে সেটা দেওয়া হবে মিয়ানমারের কাছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় যাদেরকে নিয়ে কথা হচ্ছে তারা কী যেতে চাচ্ছে, তাদের কী মত আছে ? এই নিয়ে কিন্তু একটা বড় প্রশ্ন থেকে যায়।
বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের যখন প্রত্যাবাসন নিয়ে আলাপ আলোচনা শুরু হয়েছে তারপরও কিন্তু মিয়ানমার থেকে অনেক রোহিঙ্গাদের আসা এখনো অব্যাহত আছে। তবে কী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে এক ধরণের উদ্বেগ তৈরি হবে। তাহলে সেটার সমাধান কিভাবে করা যাবে?
এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুই দেশের সরকার রাজি থাকলেও কিন্তু আরও অনেক প্রশ্ন থেকে যায়। প্রথমত, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরত যেতে চায় কি না। দ্বিতীয়ত, ভবিষ্যতে তাদের নিরাপত্তা থাকবে কি না। তৃতীয়ত, রোহিঙ্গরা আবার বাংলাদেশে ফিরে আসতে চাইবে কি না। এই প্রশ্নগুলো কিন্তু সমাধানের পথ আমরা এখনো দেখতে পায়নি। আর এটা নিয়ে চুপ করে থাকলে হবে না। কারণ রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার পরে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ধরণের সমস্যা হয়, তাহলে কিন্তু সেই দায়ভার শুধু বাংলাদেশ সরকারকে না আন্তর্জাতিক মহলেরও এই দায়ভার বহন করতে হবে যদি কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ে।
এই মাসের ২৩ তারিখ থেকে প্রত্যাবাসন শুরু হবে। আর কিছুদিন আছে, তাহলে এই প্রত্যাবাসন নিয়ে আমরা কতটুকু আশাবাদী হতে পারি?
জবাবে তিনি বলেন, সময়তো লাগবেই। যখন থেকে আলাপ আলোচনা শুরু হয় আর যে সময়টা নির্ধারণ করা হয়েছে সেটা প্রস্তাবিত সময় এবং সেখানে বিভিন্ন জটিলতাতো রয়েছেই। তবে বড় প্রশ্ন যেটা থেকে যায় মিয়ানমারের এখন পর্যন্ত যে কার্যক্রম এবং চরিত্র সেখানে এই কাল ক্ষেপণের যে ভাবনা সেটাও কিন্তু ভাবা অমূলক হবে না। আর এখন যে বৈঠক হচ্ছে সেখানে অনেকগুলো ধাপ অতিক্রমের কথা আছে। কিন্তু এগুলো করতে অনেক সময় লাগবে।
এখানে একটি বড় বাধা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়া কবে শেষ হবে এই নিয়ে চুক্তিতে কোনো সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই। তাহলে সেটি কী এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে কোনো অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করবে?
জবাবে তিনি বলেন, প্রথমত, এই প্রক্রিয়া কবে শুরু হবে এটাই এখনো নিশ্চিত না যে কবে শুরু হবে। এটা ধারণা করা অমূলক হবে না, যে আগামী ২-৩ মাস লেগে যেতে পারে এই প্রক্রিয়া শুরু হতে। যদি দেখা যায়, তাদের ওখানে যাওয়ার পরে নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা না থাকে, তাহলে ধীরে ধীরে যাওয়া শুরু হবে। আর ওখানে যেয়ে যদি তারা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে তাহলে উচিত হবে তাদেরকে পাঠানো বন্ধ করা।
আপনার মতামত লিখুন :