মাহফুজ উদ্দিন খান: আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে টঙ্গীর তুরাগতীরে লাখো মানুষের ঢল নেমেছে। রোববার বেলা ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে টঙ্গীর তুরাগ তীরে এই মোনাজাত হবে। বিতর্কিত অবস্থানের কারণে তাবলিগ জামাতের এই আয়োজনে এবার অংশ নিতে পারেননি শীর্ষ মুরুব্বি ও দিল্লির মাওলানা সা’দ। ফলে বাংলায় আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন কাকরাইল মসজিদের ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের।
প্রায় দুই দশক ধরে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেছেন ভারতের প্রখ্যাত আলেম ও বিশ্ব তাবলিগ জামাতের আমির মাওলানা জোবায়েরুল হাসান। তিনি তিন বছর আগে মারা যান। এর পরের বছর থেকে মোনাজাত পরিচালনা করছেন ভারতের আরেক শীর্ষস্থানীয় তাবলিগ মুরব্বি মাওলানা সা'দ। এবার তিনিও বিতর্কিত অবস্থানের কারণে মোনাজাত পরিচালনা করবেন না।
জানা গেছে, প্রায় ১০০ বছর আগে ইসলামের দাওয়াতি কাজকে ত্বরান্বিত করতে মাওলানা ইলিয়াছ শাহ (রহ.) দিল্লীর নিজামুদ্দিন মসজিদ থেকে তাবলিগের কাজ শুরু করেন। মাওলানা ইলিয়াছের (রহ.) ছেলে মাওলানা হারুন (রহ.)। তাঁরই ছেলে হলেন মাওলানা সাদ কান্ধলভী। ২০১৫ সাল থেকে মাওলানা সাদ আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করে আসছেন। এর আগে তিনি টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে শুধু তাবলিগের বয়ান দিতেন।
আজ রোববার বাদ ফজর বয়ান করছেন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল মতিন। তার বয়ানের পরই আখেরি মোনাজাত শুরু হবে।
মোনাজাতে অংশ নিতে দলে দলে মুসল্লিরা টঙ্গী আসছেন। যে যেভাবে পারছেন, তীব্র শীত উপেক্ষা করে আসছেন। ফলে ভোর থেকে ঢাকাগামী ট্রেন ও বাসগুলোতে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।
এদিকে দেখা গেছে,আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে আজ ভোর থেকে লাখো মুসল্লি টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে এসে সমবেত হয়েছেন। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখনো মুসল্লিরা আসছেন। টঙ্গী শহর, ইজতেমাস্থল ও এর আশপাশ এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। যত দূর চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। তাঁরা মুরব্বিদের বয়ান শুনছেন।
বিশেষ করে রাজধানী ও এর আশপাশের জেলা থেকে অনেককেই পায়ে হেঁটে আসতে দেখা গেছে। ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। মুসল্লিরা পাটি ও কাগজ বিছিয়ে সড়ক ও অলিগলিতে অবস্থান নিচ্ছেন।
গত শুক্রবার আম বয়ানে শুরু হয় এবারের ইজতেমা। এরপর থেকে সেখানে অবস্থান করা মুসল্লিরা তাবলিগের মুরুব্বিদের মুখে ইসলামের আমল, আক্বীদা ও দাওয়াত বিষয়ে বয়ান শুনছেন।
মুসল্লিরা বলছেন, ইজতেমায় অংশ নিয়ে তারা গোনাহ মাপের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবেন। দেশ ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনায় দোয়া করবেন। আখেরি মোনাজাত শেষে মুসল্লিমরা দাওয়াতি কাজে বেরিয়ে পড়বেন। তাঁরা দেশ, জাতি ও বিশ্ব মানবতার জন্য দোয়া করবেন। ইজতেমার শিক্ষা তাঁরা ছড়িয়ে দেবেন। ব্যক্তি ও সমাজজীবনে তা কাজে লাগাবেন।
আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা। ইজতেমা ময়দানের প্রতিটি প্রবেশ পথে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য অবস্থান নিয়েছেন। মহাসড়কে শনিবার রাত ১২টার পর থেকে যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে।
ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত শনিবার রাত থেকে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে রোববার ভোরে কিছু যাত্রীবাহী বাস চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী কলেজ গেইট পর্যন্ত চলাচল করতে দেখা গেছে।
কালীগঞ্জের স্টেশন রোড, ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়ক ছাড়াও কামারপাড়া সড়ক পথে দলে দলে মুসল্লিদের হেঁটে ইজতেমা ময়দানে আসতে দেখা গেছে।
ইজতেমার প্রথম পর্বে ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ান নাগরিকসহ তিন মুসল্লি মারা গেছেন।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব হবে আগামী ১৯ জানুয়ারি। ২১ জানুয়ারি হবে আখেরি মোনাজাত।
আপনার মতামত লিখুন :