ডেস্ক রিপোর্ট : আমদানি ব্যয় বেড়েছে লাগামহীনভাবে। সে তুলনায় বাড়ছে না রপ্তানি আয়। ফলে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে হয়েছে আকাশচুম্বী। কয়েক বছর ধরেই এ ঘাটতি অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়েছে। গত বছরে বেশি পরিমাণে খাদ্যপণ্য আমদানি করায় এই ঘাটতি আরও বেড়েছে। ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা চাপে পড়েছে। আমদনির চাপ বাড়লেই বাজারে ডলারের দাম বেড়ে যায়। ফলে আমদানি ও শিল্পপণ্যের দাম বাড়ছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। চাপ তৈরি হচ্ছে মূল্যস্ফীতির ওপর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবমতে, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই থেকে অক্টোবর) আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭৯ কোটি ১০ লাখ ডলার। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ২৭৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি বেড়েছে ৩০১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ২৪ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ১ হাজার ১৩৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। একই সময়ে আমদানি ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৭১৪ কোটি ১০ লাখ ডলার। আলোচ্য সময়ে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ২৮ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং রপ্তানি আয় বেড়েছে ৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রপ্তানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় যতটুকু বেশি, তার পার্থক্যই বাণিজ্য ঘাটতি। এই ঘাটতি মেটানো হয় রেমিট্যান্স ও বিদেশি বিনিয়োগ দিয়ে। এই খাতেও নিম্নগতি রয়েছে। সে কারণে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা চাপে পড়েছে।
জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রপ্তানি খাতে মোট আয় হয় ৩ হাজার ৪০১ কোটি ডলার। মোট আমদানি হয় ৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার। এই সময় বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ৯৪৭ কোটি ডলার। এর আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৬৪৬ কোটি ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ঘাটতি সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এ ঘাটতি অব্যাহত থাকলে দেশের অর্থনীতি ও মুদ্রাবিনিময় হার চাপের মুখে পড়বে। অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত বলেন, জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য খাতে আমদানি ব্যয় বাড়ায় লেনদেন ভারসাম্যে এ ঘাটতি দেখা গেলেও এখনই বিচলিত হওয়ার কারণ নেই। তা ছাড়া হুন্ডি ও মানিলন্ডারিংয়ের কারণে গত দুই বছর রেমিট্যান্স আহরণে বিপর্যয় হয়েছিল। একই সময়ে কাক্সিক্ষত হারে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়নি।
তিনি বলেন, এ ছাড়া পদ্মা সেতুসহ বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজ চলায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি। চাল ও পেঁয়াজ আমদানিতে খরচ বাড়ছে। এসব কারণেই লেনদেন ভারসাম্যে এ ঘাটতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
সূত্র জানায়, ২০১৩-১৪ রপ্তানি খাতে আয় হয় ২ হাজার ৭৪৫ কোটি ডালার। আমদানি ব্যয় হয় ৪ হাজার ৭৩ কোটি ডলার। বাণিজ্য ঘাটতি হয় ১ হাজার ৩২৮ কোটি ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয় ২ হাজার ৯১৫ কোটি ডলার। ওই বছরে আমদানি ব্যয় হয় ৪ হাজার ৫৭ কোটি ডলার। বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৪২ কোটি ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ছিল ৩ হাজার ৪২৫ কোটি ডলার। ওই অর্থবছরে আমদানি ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৭ কোটি ডলার। ঘাটতির পরিমাণ ৫৮২ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান মাধ্যম দেশের রপ্তানি আয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরজুড়ে খরা চলছে। ওই অর্থবছর রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয় মাত্র ১ দশমিক ৭২ শতাংশ, যদিও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় অনেক বেশি হয়েছে। এ কারণেই বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। এদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহও এখন কম। সব মিলিয়ে চলতি হিসাব ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। এ ঘাটতি দীর্ঘমেয়াদি হলে তা অর্থনীতির জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
তিনি আরও বলেন, মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ শিল্পেও কাঁচামাল আমদানি বাড়লে দেশে বিনিয়োগ বাড়বেÑ এটাই স্বাভাবিক। তবে দেশে সে হারে বিনিয়োগ বাড়েনি। তাই আমদানির নামে অর্থ পাচার হচ্ছে কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখা উচিত। আমাদের সময়