আশিস গুপ্ত ,নয়াদিল্লি: প্রকাশ্যে কিছু না বললেও সুপ্রিম কোর্ট ‘বিদ্রোহ’ নিয়ে ভারত সরকার সঙ্গোপনে মধ্যস্থতার চেষ্টায় নামল। শনিবার সকালে দেশের প্রধান বিচারপতির বাড়ির সামনে দেখা গেল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে। তার কিছু ক্ষণের মধ্যে দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেনুগোপাল দাবি করলেন, দু’দিনে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।
“সোমবার সকালের মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের মধ্যে ঐক্যের সম্পর্কটা দেখতে পাবেন মামলাকারী এবং আইনজীবীরা”— বলেন বেনুগোপাল। কীসের ভিত্তিতে বেনুগোপালের এই দাবি? তাঁর কথায়, বিচারপতিদের বিচক্ষণতার উপর আস্থা রেখেই তিনি এমনটা বলছেন। এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, “আমরা আশা করি প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর স্বার্থেই গোটা বিষয়টা মিটে যাবে। বিচারপতিরা সবাই বিচক্ষণ এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তি। আমরা আশা করি, তাঁরা বিষয়টি আর বাড়তে দেবেন না।”
এ দিন সকালেই প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বাড়ির বাইরে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি নৃপেন্দ্র মিশ্রকে। সংবাদ সংস্থা এএনএআই সেই ছবি টুইটও করে। জল্পনা শুরু হয়ে যায়। কোনও বার্তা নিয়ে কি প্রধান বিচারপতির কাছে গেলেন প্রধানমন্ত্রীর সচিব? নৃপেন্দ্র মিশ্রের অবশ্য দাবি, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ব্যক্তিগত কারণে দেখা করতে গিয়েছিলেন।যাই হোক না কেন, সব মিলিয়ে এই মুহূর্তের পরিস্থিতিটা দেশের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র তো বটেই, গোটা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষেই বেশ অস্বস্তির হয়ে রয়েছে। অস্বস্তিতে রয়েছে সরকারও। শোনা যাচ্ছে, আগামিকাল অর্থাত্ রবিবার ক্ষুব্ধ চার বিচারপতির সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন দীপক মিশ্র।শুক্রবার দিল্লিতে হঠাত্ই সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন সুপ্রিম কোর্টের চার প্রবীণ বিচারপতি জে চেলামেশ্বর, বিচারপতি কুরিয়েন জোসেফ, বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এবং বিচারপতি মদন লোকুর। প্রকাশ্যে মুখ খোলেন প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে। অভিযোগ তোলেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসন ঠিকঠাক চলছে না। কোনও রকম নিয়মনীতি না মেনেই গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল মামলাগুলো জুনিয়র বিচারপতিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।
এ নিয়ে দু’মাস আগেই প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেওয়া হলেও, তিনি বিষয়টি গুরুত্ব দেননি বলেও অভিযোগ করেন ওই চার বিচারপতি।নজিরবিহীন সেই ঘটনা হতভম্ব করে দিয়েছিল গোটা দেশকে। শোরগোল পড়ে যায় রাজনৈতিক মহলেও।বিচারপতিদের ওই সাংবাদিক সম্মেলনের পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সহকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সারা দিনে সরকারের পক্ষে এ নিয়ে বিশদে কেউই মুখ খোলেননি। শুধু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরিয়ে আইন প্রতিমন্ত্রী পি পি চৌধুরী বলেন, ‘‘আমাদের বিচার বিভাগ স্বাধীন, তার সুখ্যাতিও রয়েছে। ওঁরা নিজেদের মধ্যেই এই বিবাদ মিটিয়ে ফেলবেন।’’
সাংবাদিক সম্মেলন করে চার বিচারপতির মুখ খোলা নিয়ে অবশ্য উষ্মা প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন। শনিবার সন্ধ্যায় বৈঠক করে তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সোমবার থেকে বিষয়টি নিয়ে তাঁরা পৃথক পৃথক ভাবে কথা বলবেন বিচারপতিদের সঙ্গেও। বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান মান্নান কুমার মিশ্র এদিন বলেছেন ,"যেভাবে ভেতরের সমস্যা বাইরে নিয়ে আসা হয়েছে তাতে আইনজীবীরা অসন্তুষ্ট। কারণ এধরণের পদক্ষেপে বিচার ব্যবস্থাই দুর্বল হবে। আমরা সোমবার বিচারপতিদের সঙ্গে দেখা করে বার কাউন্সিলের সদস্যদের মনোভাব জানাবো। আমরা চাই দ্রুত এবং শান্তিপূর্ণভাবে চলতি বিবাদের অবসান হোক।"