ডেস্ক রিপোর্ট : রোহিঙ্গা পরিস্থিতিতে যখন সারা বিশ্বের চোখ মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন এবং বাংলাদেশের কক্সবাজারের দিকে, তখন মিয়ানমারের আশ্রয় শিবিরে বর্তমানে অবস্থানরত বা আটকে থাকা ৬০ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর দুর্দশার দিকে ঠিকমতো নজর পড়ছে না কারো। রাখাইনের মধ্যাংশে ময়লা ও আবর্জনাপূর্ণ স্থানে অবস্থিত এসব রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে অবস্থানরত শিশুরা ভয়ানক উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে দিনাতিপাত করছে বলে মঙ্গলবার একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে ইউনিসেফ। এতে বলা হয়, ইউনিসেফের সহযোগীরা ওই শিবিরে এখন পর্যন্ত ২০ জনের মতো পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া শিশুদের সন্ধান পেয়েছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, পরিবার বিচ্ছিন্ন শিশুদের সংখ্যা কমপক্ষে ১০০ জনের বেশি হবে। এদের বেশির ভাগই আবার রাখাইনের উত্তরাংশে আটকে আছে। যেখানে ইউনিসেফের সহযোগীরা নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রবেশ করতে পারছে না।
প্রায় একমাসব্যাপী মিয়ানমার সফরের ভিত্তিতে এসব কথা সাংবাদিকদের বলেন ইউনিসেফের মুখপাত্র মারিক্সি মেরকাডো। তিনি রাখাইনের পরিস্থিতির ভয়াবহ চিত্রের কথা উল্লেখ করে বলেন, ২৫শে আগস্টের পূর্বে ইউনিসেফ রাখাইনের ৪৮০০ অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুকে সেবা দিচ্ছিলো। তাদের অপুষ্টির মাত্রা উদ্বেগজনক। সহিংসতা পরিস্থিতির পর থেকে সেসব শিশুকে আর সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় তাদের জীবন হুমকির মুখে রয়েছে। মেরকাডো আরো বলেন, লুটপাট, ধ্বংসযজ্ঞ এবং প্রবেশ নিষেধাজ্ঞার কারণে আমাদের বহির্বিভাগীয় সেবা প্রদানের ১২টি কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। জাতিসংঘের সাহায্য প্রদানকারী সংস্থাগুলোর উত্তর রাখাইনে প্রবেশ করতে না পারার ঘটনাকে তিনি ‘সমস্যার সৃষ্টিকারক’ উল্লেখ করে বলেন, বর্তমানে সারা বিশ্বের চোখ বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া ৬,৫৫,০০০ রোহিঙ্গার দিকে।
কিন্তু মিয়ানমারে আটকে থাকা ৬০,০০০ শিশুর দিকে কারো চোখ নেই। তাদের কথা সবাই যেন ভুলে গেছে। তারা আটকে আছে মধ্য রাখাইনের পুতিগন্ধময় আশ্রয় কেন্দ্রে। মিয়ানমার সরকার এবং রাখাইনের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মিলে ইউনিসেফ রাখাইনের শিশুদের মানবিক সহায়তা দিতে আগ্রহী। তবে এজন্য রাখাইনে ঢোকার অবাধ প্রবেশাধিকার থাকতে হবে। মিয়ানমার সফরে নিজের দেখা দুটি নিকৃষ্ট আশ্রয় শিবিরের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে ওই মুখপাত্র বলেন, এর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘পাউকটাও টাউনশিপ’। বলেন, ৪-৫ ঘণ্টার বোট যাত্রায় সেখানে পৌঁছুতে হয়। পৌঁছানোর পরে সবার আগে আপনার যা অনুভূত হবে, তা হল নাড়িভুঁড়ি উল্টে আসা দুর্গন্ধ। শিবিরের কিছু অংশ বস্তুতই নর্দমা। পুরো ক্যামপ নোংরা আবর্জনাপূর্ণ। সেখানে বাচ্চারা খালি পায়ে কাদামাটি এবং ময়লার ভেতর দিয়ে হেঁটে বেড়ায়। ওই ক্যামেপর এক পরিচালক শুধু ডিসেম্বরের প্রথম ১৮ দিনের মধ্যেই ৮ জন শিশুর মৃত্যুবরণের কথা জানান।
ওই শিশুদের সবার বয়স ৩ থেকে ১০ বছরের মধ্যে। এ ছাড়াও, মিস মেরকাডো রাখাইনের রোহিঙ্গা সমপ্রদায়ের মধ্যে বিরাজমান তীব্র ভীতির কথা উল্লেখ করে বলেন, আমি একটি পরিবারের কাছ থেকে জানতে পারি যে তারা তাদের বাচ্চাকে জাপানিজ এন্সিফালিটিস রোগের টিকা দেন নি, কারণ টিকাদানের কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ছিল মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে, সরকারি কর্মকর্তারা বলছে, নিরাপত্তা ছাড়া রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে যেতে সাহস পাচ্ছেন না তারা। সব কিছু মিলিয়ে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, শিশুরা সেবা বঞ্চিত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে মিস মিরকাডো বলেন, রোহিঙ্গা শিশুদের সংকট নিরসনে প্রয়োজন রাজনৈতিক সমাধান। প্রয়োজন নাগরিকত্ব এবং আইনি পরিচয়। উদ্ভূত এই সংঘাতমূলক পরিস্থিতিতে সর্বপ্রথমে প্রয়োজন জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এসব শিশুদের শিশু হিসেবে পরিগণিত করা। তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং অন্যান্য সুযোগ নিশ্চিত করে তাদেরকে সুস্থভাবে বড় হতে দেয়া। আর এর সুনিশ্চিত করণে ইউনিসেফ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। তিনি বৈশ্বিক সমপ্রদায়কে নিজ নিজ প্রভাব কাজে লাগিয়ে শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর আবেদন জানান।
(জাতিসংঘের বার্তা সংস্থা ইউএন নিউজ সেন্টারের প্রকাশিত নিবন্ধ অবলম্বনে) মানবজমিন
আপনার মতামত লিখুন :