রবিন আকরাম: ৯ মাস যুদ্ধ করার পর স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি আমরা। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পার হয়ে গেছে। আমরা আজও ভুলিনি সেই মহাবীরের কথা। দীর্ঘ ৯ মাস যিনি পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। অথচ যার নামে বিপ্লবী সরকার পরিচালিত এবং যারা নামে স্লোগান দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ফন্ট লাইনে যুদ্ধ করছিলেন। যিনি স্বপ্ন দেখেছেন সোনার বাংলা গড়ার। আজ সেই মহাবীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নিয়ে কারাগারে আটক করে রাখে।
শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি। এদিন তাকে ও কামাল হোসেনকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তারা পৌঁছান লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে। সকাল ১০টার পর থেকে তিনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দীন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলেন। পরে ব্রিটেনের বিমানবাহিনীর একটি বিমানে তিনি পরের দিন ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন।
১০ তারিখ সকালেই তিনি নামেন দিল্লিতে। শেখ মুজিবুর রহমান সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র মন্ত্রিসভা, নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ এবং অন্যান্য অতিথি ও সে দেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন।
দেশে ফেরার পর ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ে বাঙালি জাতি তাকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিল। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। বিকেল ৫টায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন। সশ্রদ্ধ চিত্তে তিনি সবার ত্যাগের কথা স্মরণ করেন, সবাইকে দেশ গড়ার কাজে উদ্বুদ্ধ করেন।
তিনি বলেন যে, এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি বাংলার মানুষ পেট ভরে খাইতে না পায়, মা-বোনেরা কাপড় না পায়।
স্বাধীনতার পর একটি যুদ্ধবিধস্ত দেশকে বঙ্গবন্ধু নূতনভাবে গড়ে তোলেন। রক্তক্ষয়ী বিজয়ের পর মাত্র তিন মাসের মধ্যে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনে অনন্য নজির স্থাপন করেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের গোড়াপত্তন করেন।
কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সেই মর্মান্তিক ঘটনার পর সেই উন্নয়নের ধারা বাধাগ্রস্ত হয়। তবে বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখিয়ে গিয়াছেন জাতিকে, তার সফলতা পেতে শুরু করেছেন তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে।
আপনার মতামত লিখুন :