শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ০১ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৯:৪৬ সকাল
আপডেট : ০১ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৯:৪৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মহাপরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগ

ডেস্ক রিপোর্ট : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মহাপরিকল্পনা তৈরি করছে আওয়ামী লীগ। নতুন বছরের প্রথম থেকেই এটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের নেতৃত্বে মহাপরিকল্পনা তৈরির কাজ গুছিয়ে আনা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা বলেন, পরিকল্পনাটি দ্রুতই প্রস্তাব আকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করা হবে। তিনি অনুমোদন দিলে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে। এ পরিকল্পনায় কী থাকছে, সে সম্পর্কে এখনই কিছু জানাতে চাইছেন না সংশ্নিষ্ট নেতারা। তবে তারা বলেন, নির্বাচন কমিশন ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকেই পুরোদমে নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম শুরু হবে। এর আগেই দলকে নির্বাচন উপযোগী করে গড়ে তোলার প্রস্তুতি রয়েছে এ মহাপরিকল্পনায়। এরই অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা নতুন বছরের শুরু থেকেই সারাদেশে সাংগঠনিক সফর শুরু করবেন। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নেবেন। সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা জানবেন। সেই সঙ্গে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিরোধ মেটানোর চেষ্টা করবেন। সব মিলিয়ে নতুন বছরের শুরু থেকেই নেতারা দেশজুড়ে নির্বাচনী আবহ তৈরি করবেন।

পরবর্তী সময়ে মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটিই নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করবে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনের উদ্যোগও থাকবে। দেশজুড়ে পোলিং এজেন্টদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বর্তমান সরকারের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরার উদ্যোগও থাকবে মহাপরিকল্পনাতে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শাসনামলে বিভিন্ন খাত ও দিকের মধ্যে তুলনা করে পোস্টার প্রকাশনারও চিন্তা রয়েছে।

এদিকে নতুন বছরে সীমিত আকারে হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকটি জেলা ও উপজেলায় জনসংযোগে যাবেন বলে নেতারা জানিয়েছেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আগামী সংসদ নির্বাচনে দলের চূড়ান্ত প্রার্থী বাছাই, নির্বাচনকেন্দ্রিক অন্তর্দ্বন্দ্ব নিরসন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার রায়-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং সরকারবিরোধী সম্ভাব্য আন্দোলন নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত করে তুলবেন বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী জানান, নতুন বছরে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা সফরে যাবেন। তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেও জনগণের পাশাপাশি তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে যেসব জেলা এবং উপজেলায় যাননি, তার সফরের তালিকায় সেই সব জেলা ও উপজেলা প্রাধান্য পাবে।

কয়েকজন শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, গত ২৩ ডিসেম্বর দলের সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে জেলা এবং উপজেলা সফর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি তার সম্ভাব্য সফরের মধ্য দিয়ে সাংগঠনিকভাবে দলকে আরও শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করাবেন। এর মধ্য দিয়ে নতুন বছরে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক তৎপরতায় ভিন্ন মাত্রা যুক্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সাধারণত জেলা ও উপজেলায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী জনসভায় ভাষণ দেন। নতুন বছরে তিনি জনসভার পাশাপাশি তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে একান্তে বৈঠকও করবেন। স্থানীয় নেতাদের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দেবেন।

অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে থেকেই কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা ও উপজেলায় জনসংযোগ করবেন। জানুয়ারি থেকেই শুরু হবে ধারাবাহিক এ কর্মসূচি। দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাড়াও সভাপতিমণ্ডলীর ১৫ সদস্যের নেতৃত্বে কমপক্ষে ১৫টি গ্রুপ তৃণমূল পর্যায়ে জনসংযোগে অংশ নেবে। মতিয়া চৌধুরী বলেন, দেশব্যাপী সাংগঠনিক সফরের মধ্য দিয়ে তারা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরবেন। পাশাপাশি কথিত আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াওসহ ধ্বংসাত্মক রাজনীতির বিষয়টিও আলোচনার পুরোভাগে নিয়ে আসবেন।

নীতিনির্ধারক নেতারা জানান, আগামী নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জরিপ করেছেন। ওই জরিপ অনুযায়ী, আগামী নির্বাচনে ২০০৮ সালের নির্বাচনের চেয়ে বেশি আসনে জয় পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগের। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দলীয় কোন্দল দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে দলের মনোনয়ন নিয়ে প্রায় প্রতিটি আসনেই এমপিদের সঙ্গে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও মেয়রদের বিরোধের চিত্র বড় ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এ অবস্থায় অন্তর্দ্বন্দ্বে জড়িত নেতাদের ঢাকায় এনে আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি উত্তরণের চেষ্টা করছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

দলের দ্বন্দ্ব-বিবাদ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেও এক ধরনের উদ্বেগে রয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিশ্চিত বিজয় যাতে কোন্দলের কারণে হাতছাড়া না হয়ে যায়, সে ব্যাপারে তিনি ইতিমধ্যে দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট বলেছেন, জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। এ ক্ষেত্রে কেউ যাতে ষড়যন্ত্র করতে না পারে, সে জন্য সজাগ থাকতে হবে। নিজেদের মধ্যে বিভক্তি থাকলে ষড়যন্ত্র ঢুকতে পারে। তাই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই কিছু করতে পারবে না।

এদিকে নির্বাচনের দিনক্ষণ ও কাজকর্ম এখনও শুরু না হলেও ভেতরে ভেতরে দলীয় প্রার্থীদের তালিকা মোটামুটি চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। গোপনে অনেককেই মনোনয়ন বিষয়ে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। তবে জনসমক্ষে তা প্রকাশ করা হচ্ছে না। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সম্ভাব্য অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিবাদ এড়াতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় নেতারা সাংগঠনিক সফরে গিয়ে দলকে আরও গণমুখী করার পাশাপাশি সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের চিত্র জনগণের কাছে পৌঁছে দেবেন। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিবাদের মীমাংসা করবেন।

কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে কে কোথায় যাবেন, তার তালিকা দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়ার পর নেতারা নির্দিষ্ট জেলা ও উপজেলা সফরে যাবেন। এর আগে আগামী ৫ জানুয়ারি দেশজুড়ে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস পালন করা হবে। এ ব্যাপারে সাংগঠনিক জেলাগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের কাছে দলীয় নির্দেশনা পাঠিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলের উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ূয়া জানান, আগামী ৫ জানুয়ারি দেশজুড়ে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস পালন উপলক্ষে ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে এবং ঢাকা উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগ গুলশানে জনসভা করবে।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টে দুর্নীতির অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুটি মামলার বিচার কার্যক্রম শেষের দিকে। একটি মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান আসামি। আলোচিত এ দুটি মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাজা হতে পারে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন। সেটা হলে বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার দুর্নীতির বিষয় নিয়ে সাংগঠনিক সফরে ব্যাপক প্রচার চালাবেন নেতারা। একই সঙ্গে তারা ওই মামলার রায়-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলা বিষয়েও তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন।

এ ছাড়াও দলের নেতাকর্মীদের যে কোনো ধরনের সম্ভাব্য ষড়যন্ত্র বিষয়ে সার্বক্ষণিক সতর্ক থাকার নির্দেশ দেবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ইতিমধ্যে নানাভাবে ষড়যন্ত্রের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে নেতারা মনে করছেন। বিশেষ করে হঠাৎ বর্তমান সংসদকে অবৈধ বলে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের বক্তব্যের পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে বলে তাদের বিশ্বাস। সমকাল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়