শিরোনাম
◈ নির্বাচনি ইশতেহারের আলোকে প্রণীত কর্মপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান শিল্পমন্ত্রীর  ◈ প্রচণ্ড গরম থেকেই ঘটতে পারে মানবদেহের নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি ◈ অবশেষে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি  ◈ ইসরায়েল পাল্টা হামলা করলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেবে ইরান: উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ মিয়ানমারের আরও ১০ সেনা সদস্য বিজিবির আশ্রয়ে ◈ সয়াবিনের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত বিএনপির ◈ কেউ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না থাকি, আইনের শাসনে জীবনযাপন করি: ড. ইউনূস ◈ মা, স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে ঢাকা ফিরছিলেন রফিক, পথে প্রাণ গেল সবার ◈ স্থায়ী জামিন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছি: ড. ইউনূসের আইনজীবী

প্রকাশিত : ০১ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৯:১৩ সকাল
আপডেট : ০১ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৯:১৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দীর্ঘশ্বাসে ভারি ঘরোয়া ক্রিকেট

ডেস্ক রিপোর্ট : যতই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টাইগারদের ব্যস্ততা বেড়েছে ঘরোয়া ক্রিকেটের সূচি হয়েছে এলোমেলো। গেল কয়েক বছরের দৃশ্য এটাই। ক্লাব ক্রিকেটে থেকে শুরু চার দিনের জাতীয় ক্রিকেট লীগ, প্রতিটিতেই অস্থিরতা। তবে আশার কথা আগের তুলনায় পারফরমারদের তালিকা বেড়েছে। বিশেষ করে ব্যাটসম্যানরা বেশ আলো ছড়াচ্ছেন। তবে এ সংখ্যাটা তরুণ আর নতুনদের তুলনায় অভিজ্ঞ ও জাতীয় দল থেকে বাদপড়া ক্রিকেটারদেরই বেশি।

এর মধ্যে অন্যতম তুষার ইমরান, নাঈম ইসলাম, আবদুর রাজ্জাক, জহুরুল ইসলাম অন্যতম। তবে তাদের জন্য খোলেনি জাতীয় দলে দরজা। ব্যাটসম্যানদের তুলনায় অবশ্য নজর কাড়ার মতো কোনো বোলার আসেনি এ বছর। ক্রিকেটারদের রুটিরুজির সবচেয়ে বড় মাধ্যম ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ এ বছর লটারি পদ্ধতিতে হয়নি বলে ক্রিকেটারদের মধ্যে ছিল কিছুটা হলেও স্বস্তি। এনসিএল শুরু হয়েছিল বৃষ্টি মাথায় নিয়ে। তাই শুরুর তিনটি রাউন্ডই ব্যাট-বলের লড়াই জমে উঠেনি মাঠে। অবশ্য বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) এর জন্য ৬ষ্ঠ ও শেষ রাউন্ডের আগেই বন্ধ হয়ে যায় এনসিএল। অনেক আশা নিয়ে মাঠে গড়ায় বিপিএলের ৫ম আসর। কিন্তু এখানেই খুশির খবর ছিল দেশি ক্রিকেটারদের। এবারই প্রথম একাদশে পাঁচ ক্রিকেটার খেলানোর সুযোগ পায় দলগুলো। যে কারণে অনেক দেশি ক্রিকেটারই বিপিএলে ছিলেন অবহেলিত। কিছু বিতর্ক থাকলেও মাশরাফির রংপুর রাইডার্সের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্য দিয়ে বিপিএলের দারুণ একটি আসরের সমাপ্তি ঘটে। তবে বছরের শেষদিকে একটি সুখবর পান ক্রিকেটাররা। এবার দেশিদের নিয়ে মাঠে গড়াতে যাচ্ছে আরো একটি টি-টোয়েন্টি আসর। তবে আগমী বছর ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ আবারো লটারি পদ্ধতি হবার খবরে সরা বছরের দীর্ঘশ্বাসকে আরো ভারি করে তুলেছে। বলতে গেলে পারফরম্যান্স থাকলেও ঘরের ক্রিকেটে ক্রিকেটারদের হতাশা বাড়ছে দিন দিন।

বিসিএল জুড়ে তুষার ইমরান
দেশের চারদিনের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিসিএল)। চারটি দল নিয়ে বিসিএলের ৫ম আসর মাঠে মাঠে গড়ায় এ বছর ২৮শে জানুয়ারি। সিলেঙ্গল লীগ পদ্ধতিতে ১২টি ম্যাচ শেষ হয় ৮ই মার্চ। ওয়ালটন, প্রাইম ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক তিনটি দলের ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকানা শুরুতেই কিনে নিলেও এখনো একটি দল রয়েছে অবিক্রীত, যা বিসিবি নর্থ জোন নামেই অংশ নিচ্ছে। এবারই প্রথম বিসিবি নিয়ন্ত্রিত দলটি আসরের চ্যাম্পিয়ন হয়। তবে প্রাইম ব্যাংক সাউথ জোনের হয়ে গোটা আসরেই আলোচনার নাম তুষার ইমরান। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রান, সেঞ্চুরি ও ম্যাচ খেলার রেকর্ড তারই। এবার এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ডও গড়েন তুষার, ছাড়িয়ে গেলেন লিটন দাসকে। ১২ ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৮৯.২১ গড়ে ১২৪৯ রান। ৫ সেঞ্চুরি ও ৩ ফিফটি হাঁকিয়েছেন তুষার। ৯ বছর আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বাদ পড়ে ফিরতে পারেননি আর। তারপরও ৩৫ এ দাঁড়িয়ে ক্যারিয়ার সেরা বছর কাটিয়েছেন তুষার ইমরান। এ বছর বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৯ হাজারী ক্লাবের যোগ দিয়েছেন তিনি। ১০ হাজার থেকে মাত্র ১৪০ রান দূরে এখন। ২৪ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে সংখ্যায়ও বাংলাদেশের সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। এ বছর ব্যাট হাতে আরেক সফল জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া নাঈম ইসলাম হাঁকিয়েছেন ৪ সেঞ্চুরি। এছাড়াও বিসিএলে সেরা পাঁচে আছেন শাহরিয়ার নাসীস, জুনায়েদ সিদ্দিকী ও ধীমান ঘোষণ। কিন্তু এ দারুণ পারফরম্যান্সেও জাতীয় দলে তাদের কোনো সুযোগই মিলেনি। বল হাতে ২৫ উইকেট নিয়ে শীর্ষে থাকা স্পিনার সানজামুল ইসলাম অবশ্য জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন। কিন্তু তার পরে থাকা আবদুর রাজ্জাককে ফেলতে হয়েছে শুধু দীর্ঘশ্বাস। তবে আরিফুল হক আবু জায়েদ রাহী ও মেহেদী হাসানের মতো কিছু তরুণ হঠাৎ করেই নিজেদের পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসেবে বছরের শেষদিকে এসে সুযোগ পেয়েছেন আসন্ন শ্রীলঙ্কা সিরিজের জন্য ৩২ সদস্যের প্রাথমিক দলে।
‘প্লেয়ার বাই চয়েজ’ না থাকার স্বস্তি
ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগের দলবদল পদ্ধতি নিয়ে ক্রিকেটারদের মধ্যে চলছিল চাপা ক্ষোভ। প্লেয়ার বাই চয়েজ বা লটারি পদ্ধতির দলবদলের কারণে ক্রিকেটাররা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন। অবশেষে সেই নিয়ম থেকে বের হয়ে গেল আসরটি হয়েছে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে। যে কারণে বেশ স্বস্তিতেই মাঠে লড়েছেন ক্রিকেটারা। ওয়ানডে ফরমেটের দেশের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ক্রিকেট মাঠে গড়ায় ১২ই এপ্রিল। তবে ক্লাব ক্রিকেটের সবচেয়ে সেরা দুই দল আবাহনী ও মোহামেডান নয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। আগের গাজী ট্যাংক নামে তারা খেললেও দলটি তারা বিক্রি কয়ে দিয়েছিল বর্তমান লিজেন্ড অব রূপগঞ্জের কাছে। এরপর গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স নামে তারা প্রথম বিভাগ থেকে উঠে নিজেদের দ্বিতীয় আসরেই শিরোপ ঘরে তোলে। প্রিমিয়ার লীগে সেরা ১০ ব্যাটসম্যানের মধ্যে লিটন দাস ৭৫২ রান করে ছিলেন শীর্ষে। তবে তারপরে ৬৬১ রান করা মার্শাল আইযুব, ইমতিয়াজ হোসেন (৬৪১), মেহেদী মারুফ (৬৩০), শাহরিয়ার নাফীস ৬০০ করলেও তাদের ভাগ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনি। শুধু গাজীর হয়ে দারুণ ব্যাট করা নাসির হোসেনকে হঠাৎ করেই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে দলে রাখা হয়। বল হাতে শীর্ষে থাকা আবু হায়দার রনি ৩৫, আরাফাত সানি ৩৪ ও আল আমিন হোসেন ২৯ উইকেট পেলেও তাদের ভাগ্যের কোনো পরির্তন আসেনি।

খুলনার হ্যাটট্রিক নাসিরের আক্ষেপ
জাতীয় ক্রিকেট লীগের (এনসিএল) আসরে হ্যাটট্রিক শিরোপ জিতে নিয়েছে খুলনা বিভাগ। এ নিয়ে মোট ছয় বার চ্যাম্পিয়ন হলেও এবারই প্রথম দলটি টানা তিন শিরোপ ঘরে তোলে। এ পর্যন্ত ১৯ আসরে তাদের আগে শুধু রাজশাহী বিভাগই টানা চারবার শিরোপা ঘরে তুলেছিল। বৃষ্টি মাথায় আসরটি মাঠে গড়িয়েছিল শুরুতে দুই রাউন্ডে এনসিএলের ম্যাচগুলো কক্সবাজার শেখ কামাল স্টেডিয়ামে পরিত্যক্ত হলে ভেন্যু পরিবর্তন হয়। বৃষ্টির কারণ মাঠের লড়াই শুরুতে মুখ থুবড়ে পড়ে। তবে শেষদিকে এসে জমে উঠেছিল লীগ। কিন্তু এক রাউন্ড বাকি থাকতেই হঠাৎ করেই বিপিএলের কারণে বন্ধ হয়ে যায় এনসিএল। শেষ পর্যন্ত বিপিএল শেষে ২০শে ডিসেম্বর ফের মাঠে গড়ায় এনসিএলের শেষ রাউন্ড। ১৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকা খুলনা বিভাগ শেষ ম্যাচে জিতলে বা ড্র করলেই চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু খুলনার বোলার জাতীয় দলের তরুণ তারকা মেহেদী হাসান মিরাজ বল হাতে ৭ উইকেট নিয়ে প্রথম ইনিংসেই দলের ভিত গড়ে দেন। আর ব্যাট হাতে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া এনামুল হক বিজয়ের ডাবল ও তরুণ অল রাউন্ডার মেহেদী হাসানের সেঞ্চুরিতে জয় ও শিরোপা নিশ্চিত করে দলটি। তবে খুলনার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আসরে আক্ষেপে পুড়েছে নাসির হোসেন। জাতীয় দলের এ তারকার সুযোগ এসছিল দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ট্রিপল সেঞ্চুরি করার। কিন্তু ২৯৫ রানে আউট হয়ে সেই আশাতে দিয়েছেন গুড়ে বালি। অবশ্য এনসিএল শেষ দারুণ পারফরম্যান্সের পুরস্কারও পেয়েছেন তারা। এরই মধ্যে আসন্ন শ্রীলঙ্কা সিরিজের জন্য বিজয়, মেহেদী ও নাসির হোসেন ডাক পেয়েছেন প্রাথমিক দলে।

বিপিএলের শিরোপা মানেই মাশরাফি
নানা বিতর্ক পাশ কাটিয়ে বিপিএলের ৫ম আসর মাঠে গড়িয়েছিল ৬ নভেম্বর। ফিক্সিং, ক্রিকেটার পাওনা টাকার বিষয় না থাকলে নয়া বিতর্কের নাম ছিল একাদশে পাঁচ বিদেশি ক্রিকেটার খেলানো। শেষ পর্যন্ত প্রথম বারের মতো ঢাকার বাইরে নয়নাভিরাম সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মাঠে গড়ায় বিপিএল। বরিশাল বুলস বাদ পড়ায় নয়া দল হিসেবে সিলেট সিক্সার্স নিজেদের মাঠে চমক দেখাতে শুরু করে। চ্যাম্পিয়ন ঢাকাকে হারিয়ে সিলেট শুরু করে জিতে নেয় টানা ৩ ম্যাচ। সিলেটের দর্শকদের দারুণ উত্তেজনায় জমে উঠা বিপিএল ফিরে ঢাকায়। কিন্তু ঢাকায় এসে বদলে যায় দৃশ্যপট। তামিম ইকবালের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সামনে কেউ দাঁড়াতেই পারছিল না। চট্টগ্রাম পর্বেও ছিল একই দৃশ্য। কিন্তু এর মধ্যে মাশরাফি বিন মুর্তজার রংপুর রাইডার্সও ফিরে জয়ের ধারায়। ক্রিস গেইল ও ব্যান্ডন ম্যাককালামদের নিয়ে দারুণভাবে এগিয়ে যেতে থাকে দলটি। সমান তালে লড়ছিল খুলনা টাইটান্সও। অবশেষে শেষ চারে চ্যাম্পিয়ন ঢাকা ডায়নামাইটসের সঙ্গী হয় রংপুর, খুলনা ও শীর্ষে থাকা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। কিন্তু আসল নাটক যেন অপেক্ষা করছিল এখানে। সেই নাটকের জন্মদাতা অসময় বৃষ্টি। প্রথম কোয়ালিফায়ারে কুমিল্লা হেরে যায় ঢাকার সঙ্গে। এরপর খুলনা বাদ পড়ে রংপুরের সঙ্গে হেরে। সেদিন বৃষ্টির শঙ্কা থাকলেও হয়নি। কিন্তু এলিমিনিটর রাউন্ডে রংপুরের বিপক্ষে কুমিল্লার ম্যাচে কিন্তু মাত্র ৭ ওভার খেলা হতেই বৃষ্টি নামে। ছিল না রিজার্ভ ডে, ম্যাচ সুপার ওভারে নিষ্পত্তি হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত নানা বিতর্কে ম্যাচ গড়ায় পরের দিন। কিন্তু বিধিবাম রংপুরের সঙ্গে হেরে ভেস্তে যায় তাদের দ্বিতীয় শিরোপার স্বপ্ন। ফাইনালে মুখোমুখি হয় মাশরাফির রংপুর ও সাকিবের ঢাকা। কিন্তু সেদিনটি ছিল শুধুই ক্রিস গেইলের। তার দানবীয় ১৪৭ রানের ইনিংসে ২০৬ রান করে রংপুর। জবাব দিতে নেমে ৫৭ রানের বড় ব্যবধানে হারে ঢাকা। বিপিএলের পাঁচ আসরের মধ্যে অধিনায়ক হিসেবে ৪ বার শিরোপা হাতে তুলে নেন মাশরাফি। এ আসরে ব্যাট হাতে বিদেশিদের দাপট থাকলেও বল হাতে রাজত্ব করেছেন দেশিরা। এর মধ্যে ২২ উইকেট নিয়ে শীর্ষে সাকিব, তারপরই ১৮ উইকেট নিয়ে আছেন আবু জায়েদ। কিছু বিতর্ক থাকলে শেষ মুহূর্তে দারুণ জমে উঠেছিল বিপিএল। বলতে গেলে ঘরের ক্রিকেটের মরা ভাবটাই দূর করে দিয়েছে এ আসরের উত্তেজনা। মানবজমিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়