শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১০:৫৮ দুপুর
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১০:৫৮ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিচারাঙ্গনের উত্তাপ রাজনৈতিক অঙ্গনেও

ডেস্ক রিপোর্ট : বিদায়ী বছর বিভিন্ন বিষয়ে বিচারাঙ্গন ছিল উত্তপ্ত। নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা নিয়ে সরকারের সঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতের টানাপড়েন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আপিল বিভাগে বহাল থাকা এবং সব শেষে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ—এসব বিষয় ঘিরে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও।

প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করার পর ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চেয়ে সরকারের করা আবেদন নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক চলছে। বিএনপি বলছে, রিভিউ আবেদন করে সরকার উচ্চ আদালত নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের বিধি অনুযায়ী রিভিউ আবেদন করা হয়েছে।
এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলায় র‌্যাবের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং কয়েকজন সদস্যসহ আসামিদের ফাঁসির রায় বহাল, পিলখানা হত্যা মামলায় বিপুলসংখ্যক বিডিআর সদস্যের ফাঁসির আদেশ বহালসহ বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর মামলার রায়ও ছিল বেশ আলোচিত।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে সরকারের টানাপড়েন চলছিল বছরজুড়েই। নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা নিয়ে বেশ কয়েকবার অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।

উচ্চ আদালতের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে পুনর্বহালসংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখে গত ৩ জুলাই রায় দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে ওই রায় দেন। পূর্ণাঙ্গ রায় গত ১ আগস্ট প্রকাশিত হয়।

মূল রায়টি লিখেছেন প্রধান বিচারপতি নিজে। তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা রায়ে সংসদ, রাজনীতিসহ অপ্রাসঙ্গিক অনেক বিষয় টেনে আনেন। অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে রাখার বিধানসংবলিত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বাতিল করার পক্ষে মত দেন তিনি।
ওই রায় নিয়ে সরকারি দলের সমালোচনার মুখে ছিলেন প্রধান বিচারপতি। তাঁর পদত্যাগের দাবিও তোলা হয়। সরকার সমর্থক আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির অনুষ্ঠান বর্জন করতে আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান। তাঁরা আন্দোলনে নামেন।

রায় প্রকাশের পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকও সংবাদ সম্মেলন করে রায়ের সমালোচনা করেন। সংসদ অধিবেশনেও ব্যাপক সমালোচনা হয় রায়ের। ওই রায় ও কিছু পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাব পাস হয়। সংসদে ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই আলোচনায় অংশ নিয়ে রায়ের সমালোচনা করেন।

এরই মধ্যে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট না করায় প্রকাশ্য আদালতে সরকারের সমালোচনা করা হয়। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট সে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতায় থাকার অযোগ্য ঘোষণা করার প্রসঙ্গ টেনে তখনকার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘সেখানে তো কিছুই হয়নি। আমাদের আরো কিছু পরিপক্বতা দরকার। ’ এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেন সরকারি দলের নেতা ও মন্ত্রীরা। প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবি তোলা হয়। ওই অবস্থায় গত ২ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ৩০ দিনের ছুটি নেন। তাঁর ওই ছুটি নিয়ে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সমালোচনায় অবতীর্ণ হয়। একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।

প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ : গত ১০ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা সিঙ্গাপুর থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান। এর আগে ২ অক্টোবর তিনি ছুটি নেন এবং ১৩ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়া যান। সেখান থেকে তিনি চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যান এবং ছুটি আরো ১০ দিন বাড়ান। পরে ১০ নভেম্বর তিনি পদত্যাগ করেন। আগামী ৩১ জানুয়ারি তাঁর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে বিদায় না নিয়ে পদত্যাগ করায় প্রশ্ন ওঠে রাজনৈতিক অঙ্গনে। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অভিযোগ করে, সরকার চাপ দিয়ে প্রধান বিচারপতিকে ছুটি নিতে বাধ্য করে। প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের ঘটনা দেশে এটিই প্রথম। আবার দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ করার ঘটনাও এই প্রথম।

সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতি : প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের আগে সুপ্রিম কোর্ট একটি বিবৃতি দেন। তাতে বলা হয়, ‘দীর্ঘ আলোচনার একপর্যায়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগসংবলিত দালিলিক তথ্যাদি হস্তান্তর করেন। তন্মধ্যে বিদেশে অর্থপাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ আরো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রহিয়াছে। ইতোমধ্যে মাননীয় বিচারপতি মো. ইমান আলী মহোদয় ঢাকা প্রত্যাবর্তনের পর ১ অক্টোবর, ২০১৭ ইং তারিখে আপিল বিভাগের উল্লেখিত ৫ জন বিচারপতি মহোদয় এক বৈঠকে মিলিত হইয়া উক্ত ১১টি অভিযোগ (সংযুক্তিসহ) বিশদভাবে পর্যালোচনার পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ওই সকল গুরুতর অভিযোগসমূহ মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা মহোদয়কে অবহিত করা হইবে। তিনি যদি ওই সকল অভিযোগের ব্যাপারে কোনো সন্তোষজনক জবাব বা সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন তাহা হইলে তাহার সঙ্গে বিচারালয়ে বসিয়া বিচারকার্য পরিচালনা করা সম্ভব হইবে না। ’

বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে প্রধান বিচারপতি নিজ বাসভবনের সামনে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, তিনি অসুস্থ নন। তিনি পালিয়ে যাচ্ছেন না। আবার ফিরে আসবেন। তবে তিনি একটু বিব্রত। তিনি একটি লিখিত বক্তব্যও দেন। তাতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনে পরিবর্তন আনার বিষয়ে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে বলা হয়, প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কিংবা সরকারের হস্তক্ষেপ করার রেওয়াজ নেই। তিনি শুধু রুটিনমাফিক দৈনন্দিন কাজ করবেন। এটিই হয়ে আসছে। প্রধান বিচারপতির ওই বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে বিবৃতি দেওয়া হয় সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে। তাতে প্রধান বিচারপতির বক্তব্যকে বিভ্রান্তিমূলক হিসেবে অভিহিত করা হয়।

বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির গেজেট : নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট জারি করা হয় গত ১১ ডিসেম্বর। সাধারণ ও বিশিষ্ট আইনজীবীরা এ বিধিমালাকে ভারসাম্যপূর্ণ বললেও বিএনপি ও এর সমর্থক আইনজীবীরা বলেন, এই বিধিমালা বিচার বিভাগের ওপর সরকারের প্রভাব বজায় রাখার একটি কৌশল।

পিলখানা হত্যা মামলা : বহুল আলোচিত পিলখানা হত্যা মামলার রায়ে হাইকোর্ট ১৩৯ জনকে ফাঁসি, ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়ে রায় দেন গত ২৭ নভেম্বর। ওই মামলায় বিচারিক আদালত ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছিলেন।

ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্টের রায়ে যে সংখ্যক আসামির দণ্ড বহাল রাখা হয়, তা নজিরবিহীন।

নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলা : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করে নৃশংসভাবে হত্যার পর লাশ নদীতে ডুবিয়ে গুম করার দায়ে আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‌্যাবের তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে গত ২২ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি ৯ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়।

ওই মামলায় বিদায়ী বছরের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালত এক রায়ে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। মাত্র সাত মাসের মাথায় হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল নিষ্পত্তি করা হয়। কালের কণ্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়