ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ : বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে টুথব্রাশ, এমন অনেক কিছুই আছে যা মুসলিমরা আবিষ্কার করেছে। এবং প্রতিদিনই আমরা এই জিনিসগুলি ব্যবহার করছি। অথচ আমরা জানি না যে এই জিনিসগুলির আবিষ্কারক একজন মুসলি। এখানে মুসলিমদের ‘১০০১ আবিষ্কার’ এর ওপর লেখা বই থেকে এমন কয়েকটি আবিষ্কার তুলে ধরা হলো যা আমরা প্রতিদিনই ব্যবহার করে থাকি।
বিশ্ববিদ্যালয় : মুসলিমরা আগে থেকেই জ্ঞান আরোহণ করার জন্যে আগ্রহী। কুরআনে তাদেরকে জ্ঞান অর্জন করতে বলা আছে। এই জন্যেই ফাতেমা আল ফিহরি নামক এক ধার্মিক নারী তার উম্মাহর জন্যে একটি শিক্ষা কেন্দ্র খুলতে চেয়েছিলেন যেখানে সকলে একসাথে নতুন কিছু শিখতে পারবে। ধীরে ধীরে সকল বিষয়ের ওপর এখানে শিক্ষা দেওয়া হয় এবং ইতিহাসের পাতায় এটি সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জায়গা করে নেয়। জ্যোতির্বিদ্যা ছাড়াও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কুরআন ও ধর্মতত্ত্ব, আইন, বাকশক্তি, গদ্য ও কবিতা রচনা, পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, ভূগোল ও ঔষধ এই বিষয়গুলো নিয়ে পড়ানো হত। সেখানে ব্যাকারণ, মুসলিম ইতিহাস এবং পাটীগণিতের মত বিষয়ও ছিল। এতো ধরণের বিষয় এবং শিক্ষার মান খুবই ভালো হওয়ায় বিশ্বের সকল প্রান্ত থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ এবং শিক্ষার্থীরা আসে। প্রায় ১২০০ বছর পর এটি এখনও শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রদান করে আসছে।
ঘড়ি : তুরস্কের দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত ডিয়ারবাকির শহরের আল যাযারি নামক একজন প্রতিভাবান ব্যাক্তি বিশ্বের সর্বপ্রথম ঘড়ির আবিষ্কার করেন। ১২০৬ সালের মধ্যে তিনি বিভিন্ন আকার এবং আকৃতির ঘড়ি বানিয়ে ফেলেন। এখন যেমন আমাদের জীবনকে সাজাতে সময়জ্ঞান থাকা প্রয়োজন, সেসময়েও মানুষের এই সময়জ্ঞান থাকার প্রয়োজন ছিল। আল যাযারি অবশ্য তার ঘড়ি বানানোর জন্যে মুসলিম উম্মাহর সময়জ্ঞানকে কাজে লাগিয়েছেন।
মানচিত্র : প্রায় ৩৫০০ বছর ধরে মানচিত্র মানুষকে পথ দেখাতে সাহায্য করেছে। আগে কাদামাটির ছোট ছোট প্লেটের মত বস্তুতে তা আঁকা থাকতো। আধুনিক প্রযুক্তিতে স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্য থেকে কম্পিউটারের সাহায্য নিখুঁত মানচিত্র তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।
তবে ইতিহাসের শুরুতে এমন প্রযুক্তি ছিলো না। তখনকার সময়ে পথিকদের নির্দেশনা অনুযায়ী মানচিত্র বানানো হত। সেসময় মুসলিমদের ঘরের বাইরে পা দিয়ে বর্হিবিশ্বকে ঘুরে দেখার ইচ্ছা বাড়তে থাকে। এই জন্যে ধর্মীয় এবং বাণিজ্যিক কাজে তারা ঘর থেকে বের হয়ে পৃথিবীটিকে ঘুরে দেখতে শুরু করে। তারা যখন যাত্রা শেষে বাড়ি ফিরতেন, তাদের অভিজ্ঞতার কথা বাসার সবাইকে জানাতেন। প্রথমে মৌখিকভাবে মানচিত্রের ব্যবহার করা হলেও এরপর ধীরে ধীরে কাদামাটি এবং কাগজের ব্যবহারও শুরু হয়।
ক্যামেরা: ইবনে আল হাইথাম তার আবিষ্কার করা ক্যামেরা দিয়ে পুরো আলকবিজ্ঞানের ধারণা বদলে দেন। তখনকার সময়ে সকলে এটা বিশ্বাস করতো যে আমাদের চোখ থেকে একটি অদৃশ্য আলোক রশ্মির কারণেই মানুষ দেখতে পেত। তবে হাইথাম এই ধারণা ভুল প্রমাণিত করে বলেন, চোখ থেকে লক্ষ্যবস্তুর দিকে আলোক রশ্মি প্রতিফলিত হলেই আমরা চোখে দেখতে পাই। তিনি একটি অন্ধকার রুমে একটি ছোট ছিদ্রের দ্বারা একটি সাদা কাগজে আলো দিয়ে এই ধারণাটিকে প্রমাণিত করেছিলেন। এটিকে তিনি ‘কামরা’ নাম দেন। এটিই ছিল বিশ্বের সর্বপ্রথম ক্যামেরা আবিস্কার। সূত্র : মুসলিম স্টোরিস
আপনার মতামত লিখুন :