শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৮:৫৪ সকাল
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৮:৫৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ই-জিপি সিস্টেমে পাল্টে গেছে টেন্ডারের চেহারা

ডেস্ক রিপোর্ট : সরকারের উন্নয়ন কাজ টেন্ডার ও ঠিকাদারদের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন করা হয়। সেই কাজে প্রতিদ্বন্দ্বীকে ঘায়েল করতে এক সময়ে খুনাখুনি, দাঙ্গাহাঙ্গামা লেগেই থাকত। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের লক্ষ্যে প্রথমে মাত্র চারটি সরকারি প্রতিষ্ঠান ই-জিপি সিস্টেমে যুক্ত হলেও ছয় বছরের ব্যবধানে পাল্টে গেছে চেহারা। বর্তমানে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে প্রায় এক হাজার দুইশ’ প্রতিষ্ঠান।

ই-জিপি সিস্টেমে বর্তমানে ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত পূর্ত ক্রয় কাজে ১ লাখ ৩৬ হাজার টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। ছয় বছরের ব্যবধানে বর্তমানে ঠিকাদারদের কার্যাদেশ ও টেন্ডার নোটিশ প্রকাশ শতভাগ করা সম্ভব হয়েছে। এ পর্যন্ত টেন্ডার করা অর্থের পরিমাণ হচ্ছে ১ লাখ ২৪ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতের ব্যবসার প্রতিযোগিতাও বেড়েছে। ঠিকাদাররা বেশি সাড়া দেয়ায় বিভিন্ন ডকুমেন্ট ও দরপত্র দলিল বিক্রি করে সিপিটিইউর আয় হয়েছে ২১৯ কোটি টাকা। ই-জিপিতে অনলাইন পদ্ধতি চালুর ফলে সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় গুণগত উন্নয়ন ঘটেছে। তবে বাস্তবায়ন বা মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। জানতে চাইলে এ ব্যাপারে সিপিটিইউর মহাপরিচালক (ডিজি) ও অতিরিক্ত সচিব মো. ফারুক হোসেন গতকাল মানবকণ্ঠকে বলেন, সব মন্ত্রণালয়কে ই-জিপিতে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে কিছু পৌরসভা, উপজেলা এবং ছোট ছোট কিছু সংস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে এখনো এর আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। তবে অচিরেই তারা চলে আসবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে সরকারি সব টেন্ডার আগামী বছরে চালু করা হবে। তা প্রক্রিয়াধীন। মন্ত্রিসভার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন হলেই তখন দরপত্র অনলাইনে আহ্বান করা হবে।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পরই ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের অংশ বিশেষ সরকারি জিনিসপত্র কেনাকাটায় গতি আনতে, দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বাড়াতে সরকার ইলেকট্রনিক পদ্ধতি বা ই-জিপি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ বিশেষ ২০১১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে ই-জিপি গাইডলাইন জারির পরে ২ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় ই-জিপি পোর্টালের উদ্বোধন করেন। সরকারের সব চেয়ে বেশি ক্রয়ের জায়গা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড- এই চারটি বড় সংস্থাকে দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ই-জিপি চালু করা হয়। যা ৬ বছরের ব্যবধানে ৫৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বর্তমানে হাজার ছাড়িয়েছে। এ ই-জিপি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটকে (সিপিটিইউ)।

এর ফলে ঘরে বসেই টেন্ডারে অংশগ্রহণকারীরা সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারছেন। দেশ-বিদেশে যা ব্যাপকভাবে প্রশংসা অর্জন করেছে। ই-জিপি সার্কভুক্ত দেশে নেতৃত্ব দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, অন্যান্য দেশও অনুসরণ করছে। বর্তমানে ই-জিপিতে সরকারি ৫৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রায় ৮০ শতাংশ ক্রয় ব্যবস্থা অর্থাৎ কেনাকাটা হচ্ছে ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত। ই-জিপি সিস্টেম পরিচালনার জন্য সিপিটিইউ এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে স্থাপন করা হয়েছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ডাটা সেন্টার। এটিকে অধিকতর বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় সিপিটিইউ ‘বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও সরকারি ক্রয় ডিজিটালাইজেশন- ডাইমেপ’ নামে নতুন একটি প্রকল্প গ্রহণ করে।

৫ বছর মেয়াদি প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২২ জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করার জন্য সরকার নির্ধারণ করেছে। প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ঋণ দিচ্ছে ৫৫ মিলিয়ন (সাড়ে ৫ কোটি) মার্কিন ডলার। ছয় বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩৮ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সরকারি ক্রয় কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি ক্রয় কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার মাধ্যমে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে আরেক এক ধাপ অগ্রগতি সাধিত হবে। এ ছাড়া প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার অর্থায়ন করছে ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। দেশে সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনার সার্বিক উন্নয়ন এই প্রকল্পের উদ্দেশ বলে সংশ্লিস্ট সূত্র জানান।
সূত্র আরো জানায়, দেশের সব সরকারি ক্রয় অনলাইনে আনতে সিপিটিইউ কাজ করছে। সরকারি ক্রয় আইন ২০০৬ ও সরকারি ক্রয় বিধিমালা ২০০৮ মোতাবেক সরকারি কর্মকর্তা ও দরদাতাদের সিপিটিইউ থেকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ই-জিপির এ প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে। সামনে আরো বাড়ানো হবে। ই-জিপি সিস্টেমে মোট ১ হাজার ৩০০ ক্রয়কারী সংস্থার মধ্যে ১ হাজার ১৯০টি যুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ প্রায় ৯২ শতাংশ সংস্থা ই-জিপিতে যুক্ত হয়েছে। আর নিবন্ধিত দরদাতার সংখ্যা ৪০ হাজার ৬৪৩ জন। ৪৫টি নিবন্ধিত ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার মাধ্যমে দেশব্যাপী ই-জিপি পেমেন্ট অনলাইন ও অফলাইন দু’ভাবেই নেয়া হচ্ছে। ক্রয়কারী সংস্থা, দরদাতা ও ব্যাংকের ই-জিপি সহায়তার জন্য সিপিটিইউতে রয়েছে ২৪ ঘণ্টার হেল্প ডেস্ক। ১৬৫৭৫ নম্বরে যে কোনো সময় ফোনে ই-জিপি সেবা পাওয়া যায়। এ ছাড়াও রয়েছে সিপিটিইউ মোবাইল অ্যাপ।

সিপিটিরইউর সূত্র জানায়, বর্তমানে ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত পূর্ত ক্রয় কার্যক্রম ই-জিপি সিস্টেমে করা হচ্ছে। এটি নিরাপদ সহজ ও দ্রুত। দরদাতাকে এখন আর অফিসে ধর্ণা দিতে হয় না। টেন্ডার ছিনতাই বা পাহারা বসানোর বিষয়ও নেই। এ সব কাজ দ্রুত এগিয়ে যাওয়ায় শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬১৮টি টেন্ডার ই-জিপিতে আহ্বান করা হয়েছে। এর মোট আর্থিক মূল্য হচ্ছে ১ লাখ ২৪ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। আর ঠিকাদারদের কাছে বিভিন্ন ডকুমেন্ট ও দরপত্র দলিল বিক্রি করে সিপিটিইউর আয় হয়েছে ২১৯ কোটি টাকা। ই-জিপি চালুর ফলে সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতের ব্যবসার প্রতিযোগিতাও বেড়েছে। টেন্ডার ও সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ই-জিপি সিস্টেমে দরদাতাদের আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। ই-জিপি সিস্টেম সহজীকরণের কাজ অব্যাহত আছে।

সূত্র আরো জানায়, ২০০৭ সালে (কন্ট্রাক্ট অ্যাওয়ার্ড প্রকাশ) ঠিকাদারদের কার্যাদেশের শতকরা হার ছিল মাত্র ১৫। ১০ বছরের ব্যবধানে ২০১৭ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে শতকরা ১০০ ভাগ। ৭০ শতাংশ টেন্ডার নোটিশ প্রকাশের জায়গায় ই-জিপিতে বর্তমানে শতভাগ পৌঁছা সম্ভব হয়েছে। ২০০৭ সালে টেন্ডারের প্রাথমিক বৈধতা মেয়াদে ঠিকাদারদের কার্যাদেশ (কন্ট্রাক্ট অ্যাওয়ার্ড) হতো শতকরা মাত্র ১০টি। এ বছরে হয়েছে শতকরা ৯৯টিরও বেশি। আগে প্রতি টেন্ডারে দরপত্র জমাদানের গড় সংখ্যা ছিল ৪টি। ই-জিপিতে এখন তা ১১টিরও বেশি। এক কথায় ই-জিপির কারণে সরকারি ক্রয়ে অনলাইন পদ্ধতি চালুর ফলে ক্রয় প্রক্রিয়ায় গুণগত উন্নয়ন ঘটেছে। তবে বাস্তবায়ন বা মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। যেখানে ক্রয়কারী পর্যায়ে আরো নিবিড় তদারকির প্রয়োজন আছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। সূত্র : মানবকণ্ঠ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়