মাছুম বিল্লাহ : মিয়ানমারে দুই সপ্তাহ ধরে আটক রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) আরো ১৪ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। জাতীয় গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের জন্য তাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।
পুলিশের অনুরোধে বিচারক ওহন মিন্ত দুই সাংবাদিক ওয়া লোন (৩১) এবং কিয়া সোকে (২৭) ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাদেরকে ইয়াঙ্গুনের ইনসেন কারাগারে নেওয়া হয়। এর আগে তাদেরকে একটি পুলিশ কম্পাউন্ডে আটকে রাখা হয়েছিল।
শুনানির জন্য মিঙ্গালাদোন আদালতে উপস্থিত হলে ওয়া লোন ও কিয়া সোকে গ্রেফতারের পর প্রথমবারের মতো তাদের পরিবার ও আইনজীবীদের সাথে সাক্ষাত করতে দেওয়া হয়।
পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের সঙ্কট নিয়ে রয়টার্সের হয়ে ওই দুই সাংবাদিক কাজ করছিলেন। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী সামরিক অভিযানের ফলে প্রায় ৬ লাখ ৫৫ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে গেছে।
গত ১২ ডিসেম্বর ওই সাংবাদিক দুজনকে পুলিশ কর্মকর্তারা ডিনারের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এরপর তাদেরকে আটক করা হয়। তথ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘বিদেশী মিডিয়াকে জানানোর জন্য তারা অবৈধভাবে তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ উপনিবেশ আমলের ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের’ আওতায় অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদ- হবে।
দুই সাংবাদিক জানিয়েছেন, হেফাজতে থাকার সময় তাদের সাথে খারাপ আচরণ করা হয়নি।
ওয়া লোন শুনানির পর বলেন, পরিস্থিতি ঠিক রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবো অভিযোগ মোকাবিলা করতে। আমরা কখনো অন্যায় কিছু করিনি। আমরা কখনো মিডিয়া আইন লঙ্ঘন করিনি। আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।
রয়টার্সের এক মুখপাত্র বলেন, তাদের মুক্তি দেওয়া উচিত।
মুখপাত্র বলেন, দায়িত্ব পালনের জন্য দুই সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে। তারা অন্যায় কিছু করেননি।
ওই দুই সংবাদিকের মুক্তির দাবিতে ইয়াঙ্গুনের ২৯০ কিলোমিটার উত্তরের পিয়াই নগরীতে প্রায় ১০০ সাংবাদিক, আইনজীবী ও কৃষক বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন বলে এক অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন।
‘প্রকেটশন কমিটি ফর মিয়ানমার জার্নালিস্টের’ সদস্যরা নগরকেন্দ্রের প্রধান চত্বরে শিকল পরে বসে থাকেন।
যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও কানাডার মতো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের সরকারি কর্মকর্তা এবং জাতিসংঘ কর্মকর্তারাও তাদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
কারাগারে পরিবার সদস্যদের সফর
দুই সাংবাদিকের হাজিরা দেওয়ার সময় অসংখ্য রিপোর্টার, ক্যামেরাম্যান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিক দুজনকে পুলিশের ট্রাকের বদলে সাদা ভ্যানে করে আনা হয়। তাদের পরনে ছিল স্বাভাবিক পোশাক, কোনো হ্যান্ডকাফ ছিল না।
রয়টার্সের নিয়োগ করা তাদের আইনজীবী থান জাও আঙ বলেন, সাংবাদিক দুজন কেবল তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন।
ইয়াঙ্গুন পুলিশ বিভাগের সিনিয়র স্টাফ অফিসার লে. কর্নেল মিন্ত হতে বলেন, তারা অপরাধ করেছে বলেই আটক করা হয়েছে। তাই বিষয়টি আদালতেই সুরাহা করতে চাই।-রয়টার্স
আপনার মতামত লিখুন :