ডেস্ক রিপোর্ট : নেশার বড়ি ইয়াবা এতদিন মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসত বলে জানা গেলেও এবার চট্টগ্রামেই তা তৈরির একটি কারখানার সন্ধান মিলেছে।
ডবলমুরিং থানার বেপারিপাড়ার একটি বাড়িতে বসানো এই অবৈধ কারখানায় ইয়াবা তৈরিতে চক পাউডার, ট্যালকম পাউডারের সঙ্গে জন্ম বিরতিকরণ পিল ও প্যারাসিটামল ট্যাবলেটও ব্যবহার করা হচ্ছিল। বাড়িটি থেকে আড়াই লাখ ইয়াবা বড়ির পাশাপাশি প্রচুর কাঁচামাল জব্দ করা হয়েছে, যা দিয়ে প্রায় ১০ লাখ ভেজাল ইয়াবা বড়ি প্রস্তুত করা যেত বলে পুলিশের দাবি।
ওই বাড়ি থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা পুলিশকে জানিয়েছেন, তিন বছর ধরে তারা ভেজাল ইয়াবা তৈরি করে বিক্রি করছিলেন।
গত এক দশকে বাংলাদেশে মাদক হিসেবে সবচেয়ে আলোচিত যৌন উত্তেজক বড়ি ইয়াবা। মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে তা আসে বলে দুই দেশের সীমান্ত্ম বৈঠকে প্রতিবারই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইয়াবা পাচার বন্ধের কথা বলা হয়।
চোরাই পথে আসা বন্ধ না হওয়ার মধ্যেই মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর বেপারিপাড়ার বাড়িটিতে অভিযান শুরম্ন করে পুলিশ।
ভোরে অভিযান শেষে শ্যামল মজুমদার (৩৭), আব্দুলস্নাহ আল আমান (৩৪), মো. মামুন গোসেন (৩২) ও আয়শা সিদ্দিকা (২৭) নামে চারজনকে গ্রেপ্তার এবং ইয়াবা ও কাঁচামাল উদ্ধারের কথা জানানো হয়।
বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার হাসান মো. শওকত সাংবাদিকদের কাছে অভিযানের বিস্ত্মারিত তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, 'আমাদের কাছে সংবাদ আসে নগরীতে ইয়াবা তৈরি করে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। সে সংবাদের ভিত্তিতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে গোয়েন্দা নজরদারি চালিয়ে আসছি।'
তার ভিত্তিতে বেপারিপাড়ার কমিশনার গলির আবুল হোসেন সওদাগর ভবনের তৃতীয় তলার বাসাটিতে অভিযান চালিয়ে ইয়াবা কারখানার সন্ধান মেলে। গ্রেপ্তারকৃতরা প্রায় তিন বছর ধরে ইয়াবা তৈরি করে বিক্রি করে আসছিল, বলেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা শওকত।
তিনি জানান, বাসাটি থেকে আড়াই লাখ প্রস্ত্মুতকৃত ইয়াবা, তৈরির সরঞ্জাম ও ১০৫ কেজি বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল জব্দ করা হয়। এগুলো দিয়ে ১০ লাখ ইয়াবা বড়ি প্রস্তুত করা যেত।
গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পশ্চিম) এএএম হুমায়ন কবির জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা বাজার থেকে বিভিন্ন ধরনের উপাদান সংগ্রহ করে মেশিনের মাধ্যমে ইয়াবাগুলো তৈরি করে আসছিল।
প্রতিটি ইয়াবা মাদক বিক্রেতাদের কাছে ১২ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করার কথা জানিয়েছে, যা ক্রেতার কাছে পৌঁছানোর সময় দর ৫০ টাকাও ছাড়াত।
গ্রেপ্তারকৃতদের উদ্ধৃতি দিয়ে হুমায়ন জানান, ইয়াবা কারখানাটি পরিচালনা করতেন শ্যামল। আর বাসাটিতে আয়েশা তার দুই সন্ত্মানকে নিয়ে থাকতেন। শ্যামল, মামুন ইয়াবা তৈরি করতেন, আমান সেগুলো চট্টগ্রাম, ঢাকার বিভিন্ন মাদক বিক্রেতার কাছে সরবরাহ করতেন।
২০১১ সালেও শ্যামল একবার গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বলে পুলিশ জানায়। শ্যামল পুলিশকে বলেন, তারা ইয়াবা তৈরিতে চক পাউডার, ট্যালকম পাউডার, জন্ম বিরতিকরণ পিল ও প্যারাসিটামল ক্যাফেইন, গস্নুকোজ, মোম, স্টিয়ারিক এসিড ব্যবহার করে থাকেন।
জন্ম বিরতিকরণ পিল ও প্যারাসিটামলগুলো তারা ঢাকা থেকে সংগ্রহ করতেন, অন্যান্য কাঁচামাল স্থানীয় বাজার থেকে কেনার কথা জানান তিনি।
শ্যামল বলেন, আগে বেপারিপাড়ারই অন্য একটি ভবনে তারা এ কাজ করে এলেও সাত মাস আগে সাড়ে ১৩ হাজার টাকায় নতুন বাসাটি ভাড়া নেন। শ্যামল সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, রাখাল চন্দ্র নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি ইয়াবা তৈরি শেখেন।
২০১১ সালে চকবাজার এলাকায় রাখাল ও তিনি ইয়াবা তৈরির সরঞ্জামসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ২০১৩ সালে কারাগারে থাকাকালে রাখাল মারা যান।
শ্যামল বলেন, ২০১৪ সালে জামিনে ছাড়া পেয়ে সোয়েটার কারখানা দিলেও লোকসান হওয়ায় পুনরায় ইয়াবা তৈরির কাজ শুরু করেন তিনি।
সূত্র : যাযাদি
আপনার মতামত লিখুন :