অনল রায় চৌধুরী, আগরতলা : ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার সাংবাদিক এবং তাঁর সমালোচকদের মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত বলে তিরস্কার করায় সাংবাদিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সরকার বনাম সাংবাদিকদের এ ধরনের অবস্থান ত্রিপুরায় ইতোপূর্বে কখনও লক্ষ করা যায়নি।
ত্রিপুরার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চিকিৎসকদের এক সম্মেলনে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে রোববার মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভাষণে কার্যত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন।
তিনি বলেন, ট্রমা সেন্টার নিয়ে সাংবাদিকরা যে লেখালেখি করছেন তা অবাস্তব। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এতো ভাল ট্রমা সেন্টার আর নেই। এর পরও তাঁরা সমালোচনা করছেন ডাক্তার নেই বলে।
তিনি বলেন, এই সব সাংবাদিকরা মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত। বিরোধী দলের কোনও নেতার নাম না করে তিনি তাঁদেরও ওই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তিনি অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেন, তাঁরা যেন ওই সব মানসিক রোগগ্রস্তদের চিকিৎসা করেন।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ত্রিপুরা ওয়ার্কিং জার্নালিসট ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদক প্রণব সরকার তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, এমন উদ্ভট মন্তব্য কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রত্যাশা করা যায় না। যে রাজ্যে সাংবাদিকরা ক্রমাগত আক্রান্ত হচ্ছেন সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্য যথেষ্ট ইঙ্গিতসূচক। তিনি সাংবাদিকদের মানসিক রোগগ্রস্ত বলে নিজেকে কী প্রমাণিত করতে চেয়েছেন তা উপস্থিত সকলে টের পেয়েছেন এবং তাঁর সামাজিক মর্যাদা কোন স্তরে গিয়ে পৌঁছেছে তা-ও সময়মতো তিনি বুঝে যাবেন। বলেন, এ রাজ্যের সাংবাদিকরাই তাঁকে নেতা বানিয়েছেন।
অন্যদিকে, ত্রিপুরার ওয়ার্কিং জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সম্পাদক দেবাশিস মজুমদার বলেন, সাংবাদিকদের মানসিক রোগী বলে সমাজের উচ্চ প্রতিষ্ঠিত এই অংশকে তিনি অপমান করেছেন। এ ধরনের বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর পদে থেকে কোনও ব্যক্তি করতে পারেন, ভাবাই যায় না, এ ধরনের মন্তব্য করা তাঁর উচিত হয়নি।
তিনি আরও বলেন, স্পষ্ট হয়ে গেছে, সমালোচনা সহ্য করতে পারছেন না মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্যে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা আরও বিঘিœত হবে। এ ধরনের বক্তব্য খুবই দুঃখজনক।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে বরিষ্ঠ সাংবাদিকদের মধ্যেও ক্ষোভ ছড়িয়েছে। অনেকের মতে, তিনি নির্বাচনের প্রাক্কালে তিনি তাঁর বক্তব্যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন, ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন।
আপনার মতামত লিখুন :