হোসাইন : শিল্প-কারখানার বেতন-ভাতা পরিশোধসহ আরো বিভিন্ন সেবা ডিজিটাল করা হলে দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটবে। সেক্ষেত্রে ২০২০ সালের মধ্যে দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে যুক্ত হতে পারে আরো ১ কোটি ৮০ লাখ গ্রাহক। সেলফোন অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএমএর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
‘বাংলাদেশ: ড্রাইভিং মোবাইল-এনাবলড ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন’ শীর্ষক জিএসএমএর ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামাজিক উন্নয়ন ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে টেলিকম সেবা খাত। সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন এজেন্সি (সিডা) ও যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ডিএফআইডি) সঙ্গে যৌথভাবে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে জিএসএমএ। এতে সহযোগিতা করেছে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে স্পেনের বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড মোবাইল কংগ্রেসে প্রথম শিল্প হিসেবে এসডিজি বাস্তবায়নে নিজস্ব অঙ্গীকারবদ্ধতার কথা ঘোষণা করে সেলফোন সেবা খাত। বাংলাদেশেও আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি এসডিজির বিভিন্ন লক্ষ্য পূরণে ভূমিকা রাখছে খাতটি। সেলফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো চলতি বছরের জুনের মধ্যে দেশের তিন-চতুর্থাংশ মানুষকে যুক্ত করেছে।
বাংলাদেশে থ্রিজিসেবা চালুতে সেলফোন অপারেটরদের ভূমিকা প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, অপারেটরদের মোট গ্রাহকের মধ্যে থ্রিজির গ্রাহক রয়েছে ২৫ শতাংশেরও বেশি। ২০২০ সালের মধ্যে মোট গ্রাহকের অর্ধেক এ সেবার আওতায় চলে আসবে। দেশের ৯০ শতাংশ এলাকা এরই মধ্যে থ্রিজি নেটওয়ার্কের আওতায় চলে এসেছে। দেশে এতদিন থ্রিজি বিস্তারের পথে অন্যতম বাধা ছিল হ্যান্ডসেটের সহজপ্রাপ্যতা। এটি ক্রমান্বয়ে সুলভ ও সহজপ্রাপ্য হয়েছে। এর প্রভাবে সেবাটির গ্রাহকও বাড়ছে। সেলফোন গ্রাহকের ৩০ শতাংশই এখন স্মার্টফোন ব্যবহার করছে। এ হার ২০২০ সাল নাগাদ ৫৫ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াবে বলে আশা করছে জিএসএমএ।
সেলফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও এখন বাড়ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। জিএসএমএর ভাষ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালেও দেশের সেলফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলোর মাত্র ৭ শতাংশ গ্রাহক ইন্টারনেট সেবার আওতায় ছিল। বর্তমানে এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ শতাংশে।
সেলফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে পাঁচটি বাধা চিহ্নিত করেছে জিএসএমএ। এগুলো হলো— ক্রয়ক্ষমতা, ব্যবহারযোগ্যতা, দক্ষতা, প্রাপ্যতা, প্রাসঙ্গিকতা ও নিরাপত্তা।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ যে অগ্রগতি অর্জন করেছে, তা এসডিজি অর্জনে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। তবে রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশকে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দারিদ্র্য, বৈষম্য, নগরায়ণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১৬-২০) ও এসডিজি অর্জনে সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে সেলফোন সেবা খাত।
মোবাইল ফর ডেভেলপমেন্ট (এমফোরডি) নামে জিএসএমএর বিশেষ একটি ইউনিট বর্তমানে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নকারী বিভিন্ন সেলফোন পরিষেবার ব্যবহার ও সহজলভ্যতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে। এছাড়া নারী ও তরুণসহ সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতেও কাজ করছে ইউনিটটি।বণিকবার্তা থেকে নেয়া।