শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১০:৪৪ দুপুর
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১০:৪৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ব্যাংক দখলে ছড়াচ্ছে উদ্বেগ

বেসরকারি খাতের ব্যাংক দখলের ঘটনায় ব্যাংকিং খাতে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ঘটনায় নির্বিকার রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। যেসব ব্যাংকের পরিচালকদের মধ্যে গ্রুপিং রয়েছে, সেসব ব্যাংকের পরিচালকরা বেশি উদ্বিগ্ন। আমানতকারী ও ভালো ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে আতঙ্কের ছায়া পড়েছে। বিশেষ করে সরকারি প্রভাব আছে, এমন পরিচালকরা বিভিন্ন সরকারি সংস্থার বেআইনি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে পর্ষদ দখলে নিচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব জেনেও সহায়কের ভূমিকা নিয়েছে। কিছু ব্যাংকের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগে ব্যবস্থা নিয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এ বিষয়ে আমাদের সময়কে বলেন, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার অভাব প্রকট হয়েছে। এ কারণে নানা ধরনের সংকট বাড়ছে। এ ছাড়া প্রভাবশালীরা এ খাতে বিনিয়োগ করায় প্রশাসনিক তদারকিও হয় না। ফলে কোনো শৃঙ্খলার মধ্যে নেই ব্যাংকগুলো। আবার তিনটি নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ অবস্থায় নতুন ব্যাংক দেওয়ার বিষয়টিও এখন যথার্থ নয়।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট ব্যাংক রয়েছে। এখন এ খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনা জরুরি। তা না হলে ব্যাংকিং খাতে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, ব্যাংকগুলোয় যে পরিবর্তন হয়েছে তা কোম্পানি আইন মেনে করা হয়েছে। ব্যাংকের প্রয়োজনেই এ পরিবর্তন। তবে পরিবর্তনের আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নতুন যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েই দায়িত্ব দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ পরিবর্তন ভালোর জন্যই করা হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটতে পারে। ব্যাংকের এই পরিবর্তন সাধারণ আমানতকারীদের জন্য কোনো ভীতির কারণ হবে না বলে মনে করেন তিনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, বিধি অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকিং খাতে তদারকি জোরদার করেছে। কোনো ব্যাংক মিথ্যা তথ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বিভ্রান্ত করলে তৎক্ষণিকভাবে সমস্যা চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। পরে করা যায়। সে কারণে কিছু সমস্যা হচ্ছে। তবে ব্যাংকিং খাত নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই।

সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত বেসরকারি খাতের ৫টি ব্যাংকের পর্ষদে বড় ধরনের পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে চলতি বছর জানুয়ারিতে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ও ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়। কেউ কেউ একে ব্যাংক দখলের সঙ্গে তুলনা করেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও তড়িঘড়ি করে পর্ষদ ও এমডি পরিবর্তনের বিষয়ে অনুমোদন দিয়ে দেয়। পরে এ বিষয়ে আপত্তি তুলেছে ব্যাংকের বিদেশি উদ্যোক্তা পরিচালক বহুজাতিক ব্যাংক ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি)। এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুসন্ধান করে দেখেছে, তাদের অনুমোদন দেওয়াটাও বিধিসম্মত ছিল না।

গত ৩০ অক্টোবর রাতে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) চেয়ারম্যান, পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে তড়িঘড়ি পরিবর্তন করা হয়। ব্যাংকটিতে দুর্নীতির অভিযোগে পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। সরকার সমর্থক বলে পরিচিত এমন পরিচালকদের একটি গ্রুপ বর্তমানে নেতৃত্বে রয়েছে।

এক মাসের ব্যবধানে গত ২৭ নভেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর পদত্যাগ করেন। এ ছাড়া ব্যাংকটির নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ও পরিচালক মাহবুবুল হক চিশতীকেও পদ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। পদত্যাগের এ চলমান মহড়ার মাঝেই বাংলাদেশ ব্যাংক ফারমার্স ব্যাংকের এমডি একেএম শামীমকে অপসারণের নোটিশ দিয়েছে। সেটি আদালত স্থগিত করেছে। দুর্নীতির অভিযোগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি দিলে তারা পদত্যাগ করেন। বর্তমানে আর্থিক সংকটে পড়ে ব্যাংকটি আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। এমনকি গ্রাহকদের চাপে অনেক শাখার দরজা খোলা হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকটি নিয়ে বিকল্প চিন্তাভাবনা করছে।

গত ১০ ডিসেম্বর ঋণসংক্রান্ত অনিয়ম ও বিভিন্ন ধরনের জালিয়াতি ইস্যুতে পদত্যাগ করেন এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার ফরাছত আলী। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) বাধ্যতামূলক সাময়িক ছুটিতে পাঠানো হয়। পরিচালনা পর্ষদের অন্য কমিটির প্রধানরাও পদত্যাগ করেন।
এর আগে পরিচালকদের দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে মেঘনা ব্যাংকের এমডি নুরুল আমিনকে সরে যেতে হয়েছে। শাহজালাল ব্যাংকের এক পরিচালককে পদ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। গত বৃহস্পতিবার এবি ব্যাংকের পর্ষদে পরিবর্তন এসেছে।

পর্ষদে পরিবর্তন আসা ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে ফারমার্স ব্যাংক। তারল্য সংকট প্রকট হওয়ায় ব্যাংকটি এখন আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। লোন রিকল (পুনরায় ফেরত চেয়ে) করেও ফেরত পাচ্ছে না।

ইসলামী ব্যাংকের অনেক ঋণগ্রহীতা ব্যাংক ছেড়ে চলে গেছেন। আমানত বৃদ্ধির হারেও নিম্নগতি। ঋণ বিতরণে ঊর্ধ্বগতি। বেশিরভাগ ঋণই চলে গেছে গুটিকয়েক ব্যক্তির হাতে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, দেশে প্রয়োজনের তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে নিয়ন্ত্রণটা একটু জটিল হচ্ছে। এ খাতে বিনিয়োগকারীদের বেশিরভাগই ব্যাংক সম্পর্কে অজ্ঞ থাকায় নিজেদের মধ্যে কোন্দলের মাত্রা আরও বাড়ছে। এসবের প্রভাব পড়ছে ব্যাংক পরিচালনায়।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদসহ প্রভাবশালীরা ব্যাংকের উদ্যোক্তা হন। আমাদের দেশেও এর ব্যতিক্রম নেই। তবে আমাদের উদ্যোক্তারা ব্যাংক পরিচালনার বিষয়ে তেমন জ্ঞান রাখেন না। তাদের মনে রাখতে হবে, অন্য কোম্পানির মতো ব্যাংক কোম্পানি নয়। এটি এক ধরনের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে চলে। একে বিশেষভাবে চলতে হবে। পাশাপাশি তারা বাড়তি মুনাফাও চায়। এ কারণেও ব্যাংক খাতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে।

এদিকে ব্যাংকিং খাতে এ ধরনের পরিবর্তনের ঘটনায় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

প্রচলিত ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি একই সময়ে একাধিক ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবে না এবং ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারবে না।

সূত্র জানায়, এ বিধি ভঙ্গ করে একই গ্রুপের হাতে একাধিক ব্যাংকের মালিকানা চলে গেছে বেনামে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দায়ের করা এক বেনামি অভিযোগপত্রে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত লিখেছেন, এস আলম ব্যাংক দখল করার জন্য প্রচেষ্টা নিয়েছে। তাকে বাধা দিতে হবে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীকে এ মারাত্মক উদ্যোগ সম্বন্ধে অভিহিত করতে হবে। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা দরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, যেসব বেসরকারি ব্যাংক পরিচালকদের গ্রুপিং রয়েছে, সেসব ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ছে।আমাদের সময় থেকে নেওয়া।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়