ডেস্ক রিপোর্ট : আগামী অর্থবছরে সাড়ে ২৮ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে যাচ্ছে সরকার, যা চলতি অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত ভর্তুকির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা বেশি। আগামী ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের জন্য ভর্তুকির মধ্যে প্রণোদনা ও নগদ সহায়তাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অন্যবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দেয়া হবে কৃষি খাতে। এই খাতে ভর্তুকির পরিমাণ প্রাথমিকভাবে প্রাক্কলন করা হয়েছে ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা। চলতি ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে কৃষি খাতে ভর্তুকির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা; এর আগের বছরের সংশোধিত বাজেটে যা ছিল ৬ হাজার কোটি টাকা।
আগামী বাজেটে ভর্তুকির দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে বিদ্যুৎ খাতকে। এই খাতের আওতায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)কে ভর্তুকি প্রদান করা হবে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে বরাবরের মতো রফতানি খাতেও নগদ সহায়তা দেয়া হবে। এ খাতের মধ্যে তৈরী পোশাক খাতসহ আরো ডজনখানেক রফতানিমুখী পণ্যের রফতানির বিপরীতে নগদ সহায়তা দেয়া হবে। সাধারণত এই সহায়তা রফতানির বিপরীতে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বাজেটে ‘অন্যান্য খাত’ বলে বিবেচিত কয়েকটি খাতে আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব রাখা হবে। এর পরিমাণ ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি হবে বলে জানা গেছে।
এ দিকে, চলতি অর্থবছরের (২০১৭-২০১৮) বাজেটে, ভর্তুকি, নগদ সহায়তা, প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ দেয়া আছে ২৮ হাজার ৪৫ কোটি টাকাÑ যা মোট জিডিপির ১ দশমিক ৩ ভাগ। এর আগের অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৭২৯ কোটি টাকাÑ যা মোট জিডিপির ১ দশমিক ২ ভাগ। সংশোধিত বাজেটে এ ভর্তুকির পরিমাণ ২৩ হাজার ৮৩০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে খাদ্য খাতে চার হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া রয়েছে। এর আগের বছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল দুই হাজার ৮২০ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে রফতানি খাতে প্রণোদনা হিসেবে চার হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে। পাটজাত পণ্যে প্রণোদনা হিসেবে বরাদ্দ রয়েছে ৫০০ কোটি টাকা।
পিডিবির জন্য বাজেটে পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভর্তুকি বাবদ রাখা হয়েছে, এর আগের বছর যা ছিল ছয় হাজার কোটি টাকা।
এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের বাজেটে অন্যান্য খাতে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি হিসেবে রাখা হয়েছে। এর আগের বছরে এসব খাতে রাখা হয় চার হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। মজার ব্যাপার হচ্ছে, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি কমানোর কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত আগের বছরের তুলনায় এক হাজার ৩১৬ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের মধ্যে ভর্তুকি শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে সরকার। ২০২১ সালের পর শুধু কৃষি খাতে ভর্তুকি দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। সেটি আবার সরাসরি অর্থ না দিয়ে কৃষকদের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে কৃষিসরঞ্জাম সরবরাহের পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ। এর পরও প্রতি বছর বাজেটে ভর্তুকি বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে।
অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, এর আগে সবচেয়ে ভর্তুকি দেয়া হতো বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)কে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কম দামে তেল কিনে দেশের বাজারে তা বেশি দামে বিক্রি করার কারণে গত তিন অর্থবছরে এ প্রতিষ্ঠানকে কোনো ধরনের ভর্তুকি দেয়া হয় না। তবে এর পরিবর্তে কৃষি ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ কিছুটা বেড়ে গেছে। তাই ভর্তুকিকে শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা বাংলাদেশের মতো দেশে কখনো সম্ভব নয়। নয়া দিগন্ত
আপনার মতামত লিখুন :