ডেস্ক রিপোর্ট : বিয়ানীবাজার উপজেলার লাউতা ইউনিয়নের গজারাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়াল থেকে গত ৬ ডিসেম্বর সাদা রং দিয়ে সাত বীরশ্রেষ্ঠের প্রতিকৃতি মুছে ফেলা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, একটি চক্র নেপথ্য থেকে এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে।
উপজেলার লাউতা ইউনিয়নের গজারাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের বাইরে নামসহ বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে অবদান রাখা সাত বীরশ্রেষ্ঠের প্রতিকৃতি সম্প্রতি আঁকা হয়। এসব প্রতিকৃতি আঁকার এক সপ্তাহ অতিবাহিত না হতেই একটি চক্রের চাপে তা মুছে ফেলতে বাধ্য হন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
গজারাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক করুণাময় নাথ জানান, চলতি ডিসেম্বর মাসের শুরুতে সাত বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, মতিউর রহমান, রুহুল আমীন, মুন্সী আবদুর রউফ, নূর মোহাম্মদ শেখ, মোস্তফা কামাল ও মো. হামিদুর রহমানের প্রতিকৃতি আঁকা হয়। প্রতিকৃতিগুলো দেয়ালে আঁকার পর সাধারণ শিক্ষার্থী এবং এলাকার প্রগতিশীল মহলে ব্যাপক সাড়া পড়ে। কিন্তু এসব প্রতিকৃতি আঁকার এক সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগেই এলাকার লোকেরা মুছে ফেলার জন্য চাপ দিলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে মুছে ফেলা হয়।
তিনি জানান, দেয়ালে আঁকা এসব প্রতিকৃতির কারণে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে 'জানাজার নামাজ' হবে না- এমন কথা বলে একটি মহল এলাকাজুড়ে প্রচার চালিয়েছে। তারাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে গিয়ে এ বিষয়ে শিক্ষা কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করে।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও গজারাই গ্রামের ফয়জুর রহমান বলেন, জানাজার ইস্যু সামনে এনে প্রতিক্রিয়াশীল চক্র সাত বীরশ্রেষ্ঠের প্রতিকৃতি মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র করে তারা সফল হয়েছে। কারণ, জানাজার সময় প্রতিকৃতি কাপড় দিয়ে সহজে ঢাকা সম্ভব।
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হোসেন আহমদ বলেন, বিদ্যালয়ের দেয়ালে আঁকা এসব বিশিষ্টজনের ছবি যাদের প্রভাবে মুছে ফেলা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে সাত বীরশ্রেষ্ঠের প্রতিকৃতি পুনরায় আঁকার দাবি জানাচ্ছি।
দেখা গেছে, গজারাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়ালে নামসহ সাত বীরশ্রেষ্ঠের প্রতিকৃতি সাদা রঙ দিয়ে মুছে ফেলা হয়েছে। এ দেয়ালে আঁকা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিকৃতিও একই সঙ্গে মুছে ফেলা হয়।
সার্বিক বিষয় নিয়ে উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাছুম মিয়া জানান, এলাকার লোকজন এসে বিদ্যালয়ের মাঠে জানাজার নামাজ আদায়ের কথা বলায় প্রতিকৃতিগুলো মুছে ফেলার নির্দেশ দিই। তবে শ্রেণিকক্ষের ভেতরে এসব প্রতিকৃতি আঁকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এলাকার খয়রুল ইসলাম, জামাল হোসেন, আবদুল মালিক, আবদুর রাজ্জাক, আয়াজ আলী, লুৎফুর রহমান, অলিউর রহমান, লুৎফুরসহ বেশ কয়েকজন প্রতিকৃতি মুছে ফেলার জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে এসে শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে দাবি জানান।
বিদ্যালয়ের বিদ্যেুাৎসাহী সদস্য লুৎফুর রহমান বলেন, সাত বীরশ্রেষ্ঠের প্রতিকৃতি অঙ্কন করার আগে আমাদের জানানো হলে প্রত্যেক শ্রেণিকক্ষে অঙ্কন করার জন্য পরামর্শ দিতাম। কিন্তু প্রধান শিক্ষক কাউকে না বলে নিজ সিদ্ধান্তে বিদ্যালয়ের বাইরের দেয়ালে অঙ্কন করান। যার কারণে মৃতদেহের জানাজা পড়ার একমাত্র জায়গা হওয়ায় এলাকাবাসী আপত্তি তুলেছেন। সমকাল
আপনার মতামত লিখুন :