শিরোনাম
◈ মা, স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে ঢাকা ফিরছিলেন রফিক, পথে প্রাণ গেল সবার ◈ স্থায়ী জামিন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছি ড. ইউনূসের আইনজীবী ◈ উপজেলার ভোটে এমপি-মন্ত্রীদের হস্তক্ষেপ না করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ : ওবায়দুল কাদের  ◈ শ্রম আইন লঙ্ঘন: ড. ইউনূসসহ ৪ জনের জামিন ২৩ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি ◈ ময়মনসিংহে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ২৬ ◈ ফরিদপুরে বাস-পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত বেড়ে ১৩  ◈ ইরানের হামলার জবাব দেবে ইসরায়েল: সেনাপ্রধান ◈ সৌদিতে কোরবানি ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা ◈ কৃষি খাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে তিন  বছরে সাড়ে ৩৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ◈ বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.১ শতাংশ: এডিবি

প্রকাশিত : ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৯:৫৮ সকাল
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৯:৫৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নির্মাণ ত্রুটিতে দ্রুত ভাঙছে জেলা সড়ক

ডেস্ক রিপোর্ট : দেশের মহাসড়ক নেটওয়ার্কের ৬২ শতাংশের বেশি জেলা সড়ক। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) মহাসড়ক উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের (এইচডিএম) সর্বশেষ জরিপ বলছে, এ জেলা সড়কগুলোর ৪৭ শতাংশই ভাঙাচোরা দশায় রয়েছে। জেলা সড়কগুলো টেকসই না হওয়ার কারণ খুঁজে বের করতে সম্প্রতি অনুসন্ধান চালিয়েছে সওজের আওতাধীন কেন্দ্রীয় সড়ক গবেষণাগার। এতে দেখা গেছে, নির্মাণ ত্রুটি ও সংস্কারের সময় প্রকৌশলগত বিষয়গুলো যথাযথভাবে না মানায় নির্ধারিত মেয়াদের আগেই ভাঙন-ফাটল-গর্ত দেখা দিচ্ছে জেলা সড়কগুলোয়।

সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় সর্বশেষ ২০১৫ সালে কার্পেটিং করা হয় মাদারীপুর থেকে ভুরঘাটা পর্যন্ত জেলা সড়কটি। এর কিছুদিনের মধ্যেই সড়কের বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে যায়, দেখা দেয় বড় বড় গর্ত আর ফাটল। এর কারণ খুঁজে বের করতে অনুসন্ধানে নামে কেন্দ্রীয় সড়ক গবেষণাগারের একদল গবেষক। গত ২৬ এপ্রিল সড়কটি পরিদর্শন করে তারা। অনুসন্ধানে দেখা যায়, সড়কটিতে ৭৫ মিলিমিটার পুরুত্বের কার্পেটিং হওয়ার কথা থাকলেও করা হয়েছে ৬০ মিলিমিটার। কার্পেটিংয়ের পুরুত্ব কম হওয়ায় যানবাহনের চাপ ও বৃষ্টিতে সড়কে দেখা দেয় গর্ত ও ফাটল।

একই অবস্থা মাদারীপুরের ইটেরপুল থেকে আগৈলঝাড়া পর্যন্ত জেলা সড়কটিরও। সড়কটিতে সর্বশেষ কার্পেটিং করা হয় ২০১৪ সালে। এর কিছুদিন পর থেকেই সড়কজুড়ে দেখা দেয় গর্ত আর ফাটল। বিষয়টি অনুসন্ধান করতে গিয়ে সড়ক গবেষণাগারের গবেষক দল দেখে, সেখানে ৭৫ মিলিমিটারের বদলে ৫০ মিলিমিটার পুরুত্বের কার্পেটিং করা হয়েছে। অন্যদিকে ফরিদপুরের তালমা-নগরকান্দা জেলা সড়কটি পরিদর্শনে দেখা যায়, দুর্বল মাটির ওপর সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে। যার কারণে অল্প সময়ের মধ্যে ভাঙাচোরা দশায় চলে যায় সড়কটি।

২০১৬ ও ২০১৭ সালে সওজের অধীনে থাকা ছয়টি সড়ক বিভাগের মোট ১৫টি জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা সড়কে সরেজমিন অনুসন্ধান চালিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে কেন্দ্রীয় সড়ক গবেষণাগার। ‘রিপোর্ট অন পেভমেন্ট ফেইলিউর ইনভেস্টিগেশন’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, যথাযথ নিয়ম না মেনে সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কারণে জেলা সড়কগুলো টেকসই হচ্ছে না। সংস্কারের সময় যথাযথ নিয়ম না নামার পাশাপাশি নির্মাণ ত্রুটিকেও জেলা সড়কগুলো টেকসই না হওয়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

এতে বলা হয়, জেলা সড়কগুলো নির্মাণে ‘গুড ইঞ্জিনিয়ারিং প্র্যাকটিসেস’ অর্থাত্ বিভিন্ন প্রকৌশলগত কাজ যথাযথ নিয়ম মেনে করা হয় না। প্রকৌশলগত দুর্বলতার কারণে সড়কগুলোয় গর্ত-ফাটলের পাশাপাশি গঠনবিন্যাসেও (অ্যালাইনমেন্ট) ত্রুটি থেকে যাচ্ছে। সড়ক নির্মাণের আগে মাটি পরীক্ষাও করা হয় না। ফলে সড়কগুলো টেকসই হচ্ছে না, বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও।

সওজের আওতাধীন জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা সড়কগুলো নির্ধারিত সময়ের আগেই ফাটল বা গর্ত দেখা দেয়ার পেছনে এ রকম ১১টি কারণ চিহ্নিত করেছে কেন্দ্রীয় সড়ক গবেষণাগার, যার মধ্যে সড়কে ব্যবহূত বিটুমিনের মানও একটি।

সড়ক বিশ্লেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সবচেয়ে উপযোগী হলো ৬০/৭০ গ্রেডের বিটুমিন। সম্প্রতি সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারকাজে এ মানের বিটুমিনের ব্যবহার শুরু হলেও ৮০/১০০ গ্রেডের বিটুমিনের ব্যবহার এখনো চলছে। এ মানের বিটুমিন উচ্চ তাপমাত্রায় দ্রুত নরম হয়ে যায়। এতে সড়কের কার্পেটিং টেকসই হয় না।

তবে সড়ক টেকসই না হওয়ার জন্য নির্মাণ ত্রুটিকে অন্যতম কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন গবেষকরা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সওজের যেসব পুরনো সড়ক রয়েছে, সেগুলো যথাযথ প্র্রক্রিয়ায় নির্মাণ না করায় বিভিন্ন ত্রুটি থেকে গেছে। পরবর্তীতে সংস্কারের ক্ষেত্রেও এগুলো পুরোপুরি ঠিক করা সম্ভব হচ্ছে না।

সওজের সড়কগুলো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঠিকাদারের মাধ্যমে নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে এসব কাজের কারিগরি মান ঠিক থাকে না। এ কারণে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সড়ক গবেষণাগারের কর্মকর্তা বলছেন, যেটা আইল থাকে, সেইটাই এক সময় সড়ক হয়। এক্ষেত্রে কোনো আইল, মাটির রাস্তা বা চলাচলের স্থানে জেলা সড়ক নির্মাণ করতে হলে কতগুলো প্রকৌশলগত দিক মেনে চলতে হয়। সড়ক নির্মাণের আগে সেটি উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হয়। কিন্তু বেশির ভাগ জেলা সড়কের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, নির্মাণকাজে তড়িঘড়ি করতে গিয়ে প্রকৌশলগত দিকগুলো মানা হয়নি। এ সমস্যাটি এলজিইডির সড়কগুলোয় বেশি। পাশাপাশি সওজের ফিডার রোডগুলোতেও সমস্যাটি প্রকট।

এ সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সড়ক গবেষণাগারের পরিচালক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, দেশের জাতীয় মহাসড়কগুলো নির্মাণের ক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ারিং প্র্যাকটিসে সমস্যা নেই। সমস্যা বেশি জেলা সড়কগুলোয়। এসব সড়কের সমস্যা শুরু হয় নির্মাণের একেবারে শুরুর ধাপ থেকে। ফিডার রোডগুলোর সমস্যা আরো প্রকট। গ্রামাঞ্চলের অনেক রাস্তায় দেখা যায়, কখনো যাতায়াতের সুবিধার্থে মানুষের স্ব-উদ্যোগ এবং কখনো কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির মাধ্যমে রাস্তা নির্মাণ করা হয়। এতে প্রকৌশলগত বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে এসব রাস্তা যখন পাকা করা হয়, তখনো ঠিকাদাররা প্রকৌশলগত বিষয়গুলো ঠিকমতো মানেন না। এটিই পরবর্তীতে সমস্যা হয়ে দেখা দিচ্ছে।

সড়ক টেকসই না হওয়ার আরো দুটি কারণের কথা বলছে সড়ক গবেষণাগার। এগুলো হলো— অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই যান চলাচল ও সড়কগুলোয় পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক ভাঙাচোরা হওয়ার অন্যতম কারণ পানি জমে থাকা ও অতিরিক্ত মালবোঝাই গাড়ির চলাচল। পানি জমে যাওয়ার ক্ষেত্রে মেইন্টেন্যান্স প্র্যাকটিস দায়ী। সড়কগুলোর ১০০ মিটারের মধ্যে প্রচুর অবকাঠামো বানানো হয়। যেগুলোর কারণে সড়কগুলোর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকাটাও ভাঙাচোরা সড়কের অন্যতম কারণ।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামছুল হক বলেন, শুধু রাস্তা বানালেই গুড ইঞ্জিনিয়ারিং প্র্যাকটিস হয় না। ফাউন্ডেশনটাকে একেবারে নিচ থেকে তুলে নিয়ে আসাটাকেও গুড ইঞ্জিনিয়ারিং প্র্যাকটিস বলে না। গুড ইঞ্জিনিয়ারিং প্র্যাকটিস হলো, নির্মাণের সময় সড়ক ও ভূমির ব্যবহার বিবেচনায় রাখা। এ জিনিসটা প্রথম থেকেই না থাকার কারণে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সড়কগুলো টেকসই হচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, শুধু রাস্তা বানালে হবে না, দীর্ঘস্থায়িত্ব পেতে হলে তার আশপাশের ভূমি ব্যবহারটাকে অবশ্যই সমন্বিত করতে হবে। রাস্তার পাশে পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা রাখার পাশাপাশি অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বণিক বার্তা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়