শিরোনাম

প্রকাশিত : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:৫৮ দুপুর
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:৫৮ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিদেশি ঋণের খেলাপির তথ্য নেই সিআইবিতে

ডেস্ক রিপোর্ট : দেশের রপ্তানিকারকদের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট (বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ বা আমানত নিয়ে সেগুলো বিদেশি বা দেশি রপ্তানিকারকদের মধ্যে বিতরণ করা) থেকে বৈদেশিক মুদ্রার ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। সস্তা সুদ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি কম থাকায় এসব ঋণের চাহিদাও অনেক বেশি। ব্যাংকগুলোর নিজস্ব বিবেচনায় এ ঋণ দেওয়ার সুযোগ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর কোনো বিধিবিধান এসব ঋণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় বলে রাজনৈতিক চাপও বেশি। সব মিলিয়ে এসব ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রেও সুশাসনের অভাব রয়েছে। সে কারণে এখন খেলাপিও হয়ে যাচ্ছে। সব খেলাপি ঋণের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমশেন ব্যুরোয় (সিআইবি) থাকলেও অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের খেলাপি ঋণের কোনো তথ্য সিআইবিতে নেই। ফলে এসব ঋণখেলাপি এখন নতুন ঋণ পেয়ে যাচ্ছে।

প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কোনো খেলাপি ব্যাংক থেকে নতুন ঋণ নিতে পারেন না। ১০ হাজার টাকার বেশি ঋণগ্রহীতাদের তালিকা সিআইবিতে রয়েছে। তারা খেলাপি হলে সে তথ্যও থাকে। নতুন ঋণ নিতে হলে সিআইবি সনদ নিতে হয়। সে কারণে খেলাপি হলে নতুন ঋণ পাওয়ার সুযোগ নেই। অফশোর ব্যাংকিংয়ের খেলাপিদের তথ্য সিআইবিতে নেই বলে তাদের নতুন ঋণ নিতে কোনো বাধা নেই। এতে ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। খেলাপিরাও নতুন ঋণ পাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ অডিটে বিষয়টি ধরা পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, অফশোর ব্যাংকিং পুরোটাই হচ্ছে দেশের ব্যাংকিং খাতের বাইরে। তারা বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত সংগ্রহ এবং বৈদেশিক মুদ্রায় তা বিতরণ করবে। আদায়ও করবে বৈদেশিক মুদ্রায়। এ কারণে এতে সমস্যা হলে দেশের ব্যাংকিং খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তাদের ব্যালেন্স শিটের মাধ্যমে তদারকি করছে। এ ছাড়া অফশোর ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য পূর্ণাঙ্গ একটি নীতিমালাও তৈরি করা হচ্ছে। নীতিমালা তৈরির কাজটি প্রায় শেষ পর্যায়ে।

সূত্র জানায়, গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি বিভাগের কার্যক্রম অডিট করা হয়েছে। এতে অফশোর ব্যাংকিংয়ের ঋণের তথ্য না থাকার বিষয়টি ধরা পড়ে। অডিটে প্রতিবেদন চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ঋণের তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে। গত মার্চ পর্যন্ত অফশোর ব্যাংকিংয়ের ঋণ বিতরণের পরিমাণ প্রায় ৪১ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ছিল ১ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।

অডিট আপত্তিতে বলা হয়, সিআইবিতে এ সম্পর্কিত ঋণের কোনো তথ্য নেই। এটি দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এ বিপুল পরিমাণ ঋণের তথ্য না থাকা সিআইবির একটি বড় দুর্বলতা। অতিদ্রুত এ দুর্বলতা দূর করার সুপারিশ করেছে অডিট সংক্রান্ত প্রতিবদনে।

এ বিষয়ে ব্যাংক এশিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আরফান আলী বলেন, অফশোর ব্যাংকিংয়ের ঋণের তথ্য সিআইবিতে অবশ্যই থাকা উচিত। এটি না থাকা ব্যাংকিং খাতের জন্য ঝুঁকি। দেশের ব্যাংকগুলো এ ঋণ বিতরণ করছে। আবার যারা নিচ্ছেন, তারাও দেশি কোম্পানির অংশ (এন্টারপ্রাইজ)। দেশের ভেতরে ঋণের ক্ষেত্রে যেসব নিয়মনীতি মেনে চলতে হয়, অফশোর ইউনিটের ঋণের ক্ষেত্রে সেটি প্রযোজ্য থাকা উচিত।

উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালে ব্যাংকগুলোকে এ ইউনিট গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত ৫১টি ব্যাংক অনুমোদন নিয়ে ৩৫ ব্যাংক ঋণ বিতরণ করছে। এ ইউনিটের মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণ বিদেশি ঋণ হিসেবে বিবেচিত। এর সুদের হার ৬ শতাংশের নিচে। অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ অনেকাংশে কম। এ জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষের দিকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অফশোর ব্যাংকিং ঋণের পরিমাণ ৪৮ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা, গত জুনে যা ছিল ৪৬ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। জুনে খেলাপি ঋণ ছিল ৪১৭ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ৪১৯ কোটি টাকা।

এদিকে বিদ্যমান নীতিমালায় দেশের বাইরে থেকে তহবিল সংগ্রহ করে ঋণ দেওয়ার কথা বলা হলেও কে কী পরিমাণ ঋণ নিতে পারবে, রিপোর্টিং পদ্ধতি কী হবে বা ঋণের ব্যবহার বিষয়ে কিছু বলা নেই। এ ছাড়া আমানত ও ঋণ বিতরণের হার, সিআরআর, এসএলআর সম্পর্কিত কোনো নীতিমালা নেই অফশোর ব্যাংকিংয়ে। তবে প্রস্তাবিত নীতিমালায় এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়ম পাওয়া গেলে তা বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে নীতিমালা তৈরির শেষ সময়ে এসে বেশকিছু বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আপত্তি জানিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)। খসড়া নীতিমালা সংশোধন করে সিআরআর ও এসএলআর সংরক্ষণের হার কম করা এবং স্থানীয় উৎস থেকে সংগৃহীত আমানত অফশোর ইউনিটের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের সুযোগ চাওয়া হয়েছে।

সূত্র : আমাদের সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়