ডেস্ক রিপোর্ট : গুজরাটে জিতলেও বিজেপি যে প্রবল চাপে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কথায় তা স্পষ্ট হয়ে গেল। গত বুধবার সংসদ ভবনে বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকে মোদি সরাসরি বলে দেন, উৎসবের সময় এটা নয়। এখন থেকেই দলকে কাজে নেমে পড়তে হবে। আত্মতুষ্টির কোনো স্থান নেই।
আগামী বছর বিজেপি শাসিত রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ ও ছত্তিশগড় বিধানসভার ভোট। গুজরাটে ভালো ফল করার পাশাপাশি কংগ্রেস রাজস্থানের পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের ভোটে বিপুল জয় পেয়েছে। স্বাভাবিক কারণেই বিজেপির কপালে ভাঁজ পড়েছে। এই তিন রাজ্যের ভোটের আগে অবশ্য আগামী বছরের গোড়ায় কংগ্রেস শাসিত মেঘালয় ও মিজোরাম এবং বাম শাসিত ত্রিপুরায় ভোট।
হিমাচল প্রদেশে কংগ্রেসকে হারিয়েছে বিজেপি এবং গুজরাটে নিজেদের রাজত্ব কায়েম রেখেছে। কিন্তু গুজরাট জয় তাদের উদ্বেলিত করতে পারেনি। প্রবল প্রতিপক্ষ কংগ্রেস সেখানে ৮০টি আসন জিতেছে। বিজেপি ৯৯টি। গত পাঁচ নির্বাচনে বিজেপি কখনো একশ’র নিচে নামেনি। সবচেয়ে বড় কথা, গুজরাটের গ্রাম তাদের সমর্থন উজাড় করে দিয়েছে কংগ্রেসকে। মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বিজেপির থেকে। কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দলের দুশ্চিন্তা এটাই। বুধবার এটাই ফুটে ওঠে প্রধানমন্ত্রীর কথায়।
সংসদীয় দলের বৈঠকে ভাষণ দেওয়ার সময় মোদি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। ১৯৮৪ সালে লোকসভায় ২টি আসন থেকে ২০১৪ সালে বিজেপির একক ক্ষমতায় কেন্দ্র দখলের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেস একটা সময় দেশের ১৮টি রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল। বিজেপির দখলে এই মুহূর্তে ১৯টি রাজ্য।
মোদি ১৯টি রাজ্য দখলের কৃতিত্ব দাবি করলেন ঠিকই, কিন্তু তিনি ভুলে গেলেন, ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেস যখন ১৮ রাজ্যের ক্ষমতায় ছিল, তখন উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, বিহার ও অন্ধ্র প্রদেশ ভাগ হয়নি। জন্ম হয়নি উত্তরাখন্ড, ছত্তিশগড়, ঝাড়খন্ড ও তেলেঙ্গানার।
মোদির জন্যই সংসদের শীতকালীন অধিবেশন বারবার ব্যাহত হচ্ছে। গুজরাটে প্রচারের সময় তিনি কংগ্রেসের সমালোচনা করতে গিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে প্রকারান্তরে চক্রান্তকারী বলে অভিহিত করেছিলেন। বলেছিলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে চক্রান্ত করে কংগ্রেস নেতারা দলের নেতা আহমেদ প্যাটেলকে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী করতে চেয়েছিলেন। মোদির এ কথার প্রতিবাদ জানিয়ে মনমোহন ক্ষমা দাবি করেছিলেন। শীতকালীন অধিবেশনে কংগ্রেসও এ নিয়ে প্রতিবাদী। কংগ্রেস চায়, মোদি তাঁর মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিন। মোদি বুধবার লোকসভায় হাজির থাকলেও ক্ষমা চাননি। মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশও করেননি। ব্যাখ্যা দিতেও তিনি রাজি নন।
কংগ্রেস নেতাদের দাবি, মোদি হয় ক্ষমা চান, নয়তো তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে প্রমাণ দিন। দেশদ্রোহের কাজ যদি কেউ করে থাকেন, তবে সরকার অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নিক।
সূত্র : প্রথম আলো
আপনার মতামত লিখুন :