ঋণচুক্তির গ্যাঁড়াকলে পদ্মা রেল সেতু
ডেস্ক রিপোর্ট : পদ্মা রেল সংযোগ নির্মাণ কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনিশ্চয়তা ক্রমেই বাড়ছে। ফলে সরকার ঘোষিত সময় ২০১৮ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ দূরের কথা, শুরু করা নিয়েই দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। দীর্ঘদিন ধরে ঝুলছে ঋণচুক্তি, ঋণচুক্তির পর অর্থছাড়, এর পর কাজ শুরু করবেন ঠিকাদাররা; কিন্তু কোনোটাই হয়নি। এ বাস্তবতায় দ্রুত ঋণচুক্তি করতে চীনের কাছে সর্বশেষ চিঠি দিয়েছেন রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক। চলতি মাসের মধ্যে চুক্তি করতে অনুরোধ করেছেন তিনি।এদিকে পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করতে না পারায় চলতি অর্থবছরে রেলের এডিপিতে (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। একই কারণে আগের অর্থবছরেও অর্থ খরচ করা যায়নি।
জানা গেছে, ১৭ ডিসেম্বর চীনের রাষ্ট্রদূতের কাছে পাঠানো আধা সরকারিপত্রে (ডিও) বলা হয়েছেÑ এটি সরকারের একটি ফাস্ট ট্র্যাক (অগ্রাধিকার) প্রকল্প। পদ্মা সেতু চালুর দিন থেকেই তাতে ট্রেন চালুর জন্য নির্দেশনা রয়েছে। প্রকল্পের প্রস্তুতিমূলক সব কার্যক্রম শেষ। ঠিকাদারকে সাইট বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রেলওয়ে। ডিসেম্বরের মধ্যে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়ে তা কার্যকর হলে এ বছরের আংশিক শুকনো মৌসুমে ভৌত কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পদ্মা সেতুতে ট্রেন চালু করা সম্ভব না-ও হতে পারে।
এ বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক আমাদের সময়কে বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে ঋণচুক্তি করতে চীনের অ্যাম্বাসাডরের কাছে ডিও দিয়েছি। আশা করি এ মাসের মধ্যেই চুক্তি হয়ে যাবে।
একই ইস্যুতে পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) গোলাম ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ইআরডির ঋণচুক্তির এখনো দিনক্ষণ নির্ধারণ হয়নি। এরই মধ্যে চুক্তির খসড়া এক্সিম ব্যাংকে পাঠানোর কথা শুনেছিলাম। আপাতত বিশেষ অগ্রগতি নেই।
জানা গেছে, পদ্মা রেলসংযোগ নির্মাণে চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের (সিআরইসি) সঙ্গে গত বছরের ৮ আগস্ট কমার্শিয়াল অ্যাগ্রিমেন্ট হয়েছে। ইআরডি থেকে এ প্রকল্পের জন্য ৩১৩৮.৭৫ মিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রস্তাব ওই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর পাঠানো হয় চীনা দূতাবাসে। পরবর্তীতে চীনা এক্সিম ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী ৪ বার ঋণ প্রস্তাব সংশোধন করে পাঠানো হয়। সর্বশেষ ২৬৬৭.৯৪ মিলিয়ন ডলারের ঋণপ্রস্তাব চলতি বছরের ১৬ আগস্ট পাঠানো হয় চীনা দূতাবাসে। কিন্তু এখনো ঋণচুক্তি হয়নি। তা ছাড়া চুক্তির পরও অর্থছাড় হতে অনেক সময় লাগে। যেমন চীনের মাধ্যমে জিটুজি পদ্ধতিতে বাস্তবায়নাধীন আরেক প্রকল্প কর্ণফুলী টানেলের জন্য ঋণচুক্তি হয়েছে গত বছরের ১৪ অক্টোবর। ১ বছরেরও বেশি সময় পর অর্থাৎ গত ৭ ডিসেম্বর ঋণের প্রথম কিস্তির অর্থ ছাড় করে এক্সিম ব্যাংক। ৭০৫.৮ মিলিয়ন ডলার চুক্তিমূল্যের ২০ শতাংশ তথা ৯৩৬ মিলিয়ন আরএমবি (চীনা মুদ্রা-রেনমিনপি)। সে হিসাবে পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের ঋণচুক্তি এবং অর্থছাড় শেষে কাজ শুরু নিয়ে সংশয় বাড়ছে। আর এ প্রকল্পের কাজ আগামী মার্চের মধ্যে শুরু করতে না পারলে এ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত টাকা ব্যয় করা যাবে না। চলতি অর্থবছরের জন্য এ প্রকল্পে মোট ৭৬০৯.৮১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঋণ ৪৯৪৯.৮১ কোটি টাকা, আর রাষ্ট্রায়ত্ত খাতে (জিওবি) ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬৬০ কোটি টাকা।জানা গেছে, পদ্মা রেল সেতু নির্মাণে পাঁচ বছরে এক্সিম ব্যাংকের ৩১৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার ঋণ দেওয়ার কথা রয়েছে।
২০১৭ সালে এ প্রকল্পে ৮০ কোটি ডলার প্রয়োজন। এ জন্য দ্রুত ঋণচুক্তি সম্পন্ন করতে চায় বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পে কথা রাখেনি চীন। এর আগে প্রকল্পের অর্থায়নে শতকরা ৮৫ ভাগ এবং ১৫ ভাগ নিয়ে একটি জটিলতা ছিল। পরিস্থিতির বাস্তবতায় এখন ১৫ শতাংশ জিওবি খাত তথা নিজস্ব অর্থায়ন থেকে বরাদ্দে সম্মত হয় বাংলাদেশ সরকার। এর পর ‘অতিদ্রুত’ ঋণচুক্তি এবং অর্থায়নের জন্য চীনের কাছে চিঠি আদান-প্রদান এবং বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছে ইআরডি; কিন্তু ঋণচুক্তির ব্যাপারে দিনক্ষণ মেলেনি আজও।
সূত্র : আমাদের সময়
আপনার মতামত লিখুন :