মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার : শিখার যে কোনো বয়স নেই সেটি আবার প্রমাণ করলেন রুশ নাগরিক কিরিল পাত্রাখিন। ৯০ বছর বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন তিনি। নাতির বয়েসি সহপাঠিরাও এগিয়ে এসেছেন তার সহযোগিতায়। সূত্র : গার্ডিয়ান
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বাবা-মাকে হারান ছোট্ট কিরিল। ১৫ বছর বয়সে বিদ্যালয়ের পাঠ চুকে যায়। থাকা খাওয়ার কোন ঠিক ছিলো না, এমনকি পেট চালাতে চুরি পর্যন্ত করেছেন ছোট বয়সে।
কিরিল পাত্রাখিন জানান, আমার কোন ভাই বোন নেই বাবা-মা মারা যাওয়ার পর সম্পূর্ণ একা হয়ে যাই। রাস্তায় রাস্তায় দিন কেটেছে। চুরি করেছি, এক কথায় অনেক কষ্ট গেছে জীবনে। যুদ্ধের পর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। এই সময়ে পড়ালেখার কোনো সুযোগ মেলেনি।
জীবনের নানা চড়াই উৎরাই পার হতে গিয়ে লেখাপড়ার গুরুত্ব খুব ভালোই বুঝতে পারেন কিরিল। তাই আবার শিক্ষাজীবনে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। ৩১ বছর বয়সে স্কুল পাস করে এর ছয় বছর পর গ্র্যাজুয়েট হন তিনি। দীর্ঘ বিরতি দিয়ে এখন তিনি পড়ছেন রাশিয়ার পার্ম স্টেট ইউনিভার্সিটি অব হিউম্যানিটারিয়ান এডুকেশনে।
পড়ালেখার প্রতি কিরিলের অদম্য আগ্রহ উৎসাহ যোগায় তার সহপাঠিদেরও। নাতির বয়েসি এই সহপাঠিরা আগ্রহ নিয়েই তাকে শেখান কম্পিউটারের নানা জ্ঞান। ক্লাসের সেরা ছাত্রও কিন্তু তিনিই।
এক নারী বাসিন্দা জানান, আসলে তার বয়সটাই এমন যে তার সাহায্য প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে কিভাবে উত্তর লিখতে হয় বা কিভাবে কম্পিউটারে কাজ করতে হয়। মাঝে মাঝেই তিনি প্রেজেন্টেশন দেন তার জীবনের গল্প শোনান। সেগুলো সত্যিই দারুন।
রাশিয়ার এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রথম নব্বই পার করা কোন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আগ্রহও কম নয়। অন্য শিক্ষার্থীদের বেলায় নিয়ম কড়া হলেও বয়সের বিচারে অনেকটাই ছাড় পান কিরিল।
ন্যাচারাল সাইন্স ফ্যাকাল্টি ডীন জ্যালিনা ডুবাস জানান, আমাদের অনুষদে নির্দিষ্ট কিছু ফিল্ড ওয়ার্ক বাধ্যতামূলক। কিন্তু কিরিলকে আমরা এসবে পাঠাই না। কারণ ফিল্ড ওয়ার্কে বনে-জঙ্গলে যেতে হয় এসব পরিবেশ তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তার শারীরিক সুস্থতা আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
পেনশনের টাকা বাঁচিয়ে ৬০০ ডলার দিয়ে প্রথম সেমিস্টারে ভর্তি হন কিরিল। পরে অবশ্য বিনামূল্যে পড়ালেখার সুযোগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আপনার মতামত লিখুন :