শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৮:২৫ সকাল
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৮:২৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

যেসব কারণে জেরুজালেম পবিত্র নগরী

ইমরুল শাহেদ : আসমানি কিতাব নির্ভর তিন ধর্মের পূণ্যস্থান এবং মক্কা, মদিনার পর মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র স্থান হচ্ছে জেরুজালেম। সম্প্রতি এই নগরীকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছেন। উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গোটা মুসলিম বিশ্ব। জোরালো প্রতিবাদের সঙ্গে সহিংসতাও ছড়িয়ে পড়ছে মধ্যপ্রাচ্যে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করছে বিশ্বের পরমাণু শক্তিধর দেশগুলো এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শরীক ইউরোপীয় ইউনিয়নও। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ইতোমধ্যে ইউরোপের কয়েকটি দেশ সফর করেছেন তার পক্ষে জনমত তৈরির জন্য। কিন্তু কোথাও হালে পানি পাননি তিনি।

ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর পরই ফিলিস্তিনের হামাস তৃতীয় ইন্তিফাদা শুরু করেছে। এই জেরুজালেমকে কেন্দ্র করে মধ্যযুগে ছোট বড় প্রায় দশটি ধর্মযুদ্ধ হয়েছে। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় এই পবিত্র স্থানটিকে ধ্বংস করা হয়েছে ২ বার, অবরুদ্ধ করা হয়েছে ২৩ বার, আক্রমণ করা হয়েছে ৫২ বার এবং দখল করা হয়েছে ৪৪ বার। ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে সমস্যার একটি মূল ইস্যু হলো এই জেরুজালেম। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেম দখল করে পশ্চিম জেরুজালেমের সঙ্গে সংযুক্ত করার চেষ্টা করেছিল। তারা সম্মিলিত জেরুজালেমকে করতে চেয়েছিল ইসরায়েলের রাজধানী। ইহুদিদের দখলের পর জাতিসংঘ ও তার বিভিন্ন সংগঠন ঘটনাটিকে বারবার নিন্দা জানিয়েছিল। তারপর ১৯৮০ সালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সে ব্যাপারে ৪৭৮ নম্বর প্রস্তাব পাস করলে জেরুজালেম থেকে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস সরে যায়। জেরুজালেমে এখনও যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের খরিদকৃত জমি রয়েছে (প্যালেস্টাইন : একটি সংগ্রামের ইতিহাস)।

ট্রাম্পের এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আট দেশের প্রতিনিধিরা জরুরিভাবে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে ইসরায়েলের দূত উল্লেখ করেন, জেরুজালেম ঐতিহাসিকভাবেই তাদের রাজধানী। তিনি বলেছেন, হিব্রু বাইবেলে (পুরনো সংস্করণ) ৬০৬ বার জেরুজালেমের নাম উল্লেখ আছে এবং এই নগরীটি কিং ডেভিড প্রতিষ্ঠিত করেছেন। করেছেন রাজধানী। কিন্তু কিং ডেভিড জেরুজালেমকে রাজধানী করেছিলেন জেরুজালেম রাজ্যের, কোনো ইসরায়েল বা ইহুদি রাষ্ট্রের নয়। এছাড়া জেরুজালেমতো এক নামে পরিচিত নয়। কিং ডেভিড জেরুজালেম প্রতিষ্ঠা করার আগে এর নাম ছিল কেনান। এই পবিত্র স্থানটিকে কখনো বলা হয়েছে জুদাহ, কখনো জুডিয়া, কখনো ফিলিস্তিন বা কখনো প্যালেস্টিনো। মুসলমানেরা এই স্থানটিকে চেনে ১৭ নামে। আর ইহুদিরা চেনে ৭০ নামে। বেবিলনের আক্কাদীয় সম্রাট নেবুচাদনেজার জেরুজালেম ধ্বংস করে ইহুদিদের কারাগারে নিয়ে গেলে, তাদের সব কিছুর বিলুপ্তি ঘটে যায় বলে বলা যায়। সেই কারাগারে বসেই তারা পুরোহিত এজারকে দিয়ে বাইবেলের দ্বিতীয় বইটি লেখেন। পারস্য সম্রাট সাইরাস তাদেরকে কারামুক্ত করার পর তারা জেরুজালেম ফিরে আসেন বলতে গেলে প্রায় নতুন মানুষ হয়ে।

ইহুদিরা যখন প্যালেস্টাইন অঞ্চলে আসেন তখন তারা ছিল ১২ গোত্রে বিভক্ত। তাদের মধ্যে কোনো সহমর্মিতা ছিল না। সারাক্ষণই লেগে থাকত দাঙ্গা-ফ্যাসাদ। তাদের এই দাঙ্গা-ফ্যাসাদের কারণেই কিং সোলায়মানের মৃত্যুর পর জেরুজালেম রাজ্য দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ১০ গোত্র নিয়ে উত্তরের অংশ হয়ে যায় ইসরায়েল। তাদের রাজধানী হয় সামারিয়া এবং দুই গোত্র নিয়ে সৃষ্টি হয় জুডা রাজ্যের। এই রাজ্যটি শাসন করতে থাকেন সোলেমানের পুত্র রেহোবুয়াম এবং উত্তর অংশের শাসক নির্বাচিত হন সোলায়মানের সেনাপতি জেরোবুয়াম। জেরুজালেম জুডিয়ারই রাজধানী থেকে যায়। কিন্তু ইহুদিদের মধ্যে গোত্রীয় বিভেদ থাকলেও একটি বিষয়ে তারা ছিল ঐক্যবদ্ধ। সেটা ছিল তাদের ধর্ম। একজন ঐতিহাসিক লিখেছেন, ইহুদিরা যতটা না বাইবেল বিনির্মাণ করেছেন, তার চেয়ে বেশি বাইবেল বিনির্মাণ করেছে ইহুদিদের। বেবিলনের কারাগার থেকে জেরুজালেম ফিরে ইহুদিরা প্রথমেই শুরু করেন ধ্বংস হয়ে যাওয়া টেম্পল মাউন্ট নির্মাণের কাজ। এই টেম্পল মাউন্ট নির্মাণ করেছিলেন কিং সোলায়মান।

মুসলমানদের পবিত্র এই স্থানটির যেখান থেকে মহানবী (সা:) মেরাজে গিয়েছিলেন সে স্থানটিতে হযরত উমর একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় এরপর সেখানে উমাইয়া খলিফা প্রথম আল-ওয়ালিদ প্রতিষ্টা করেন আল-আকসা মসজিদ। এরপর সেখানে উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক নির্মাণ করেন কুব্বাত আল সাখরা বা ডোম অব দ্যা রক। এরপর একে একে আরও নির্মিত হয় কুব্বাত আল সিলসিলা ও কুব্বাত আল নবী। এই সামগ্রিক স্থাপনাটি মুসলমানদের কাছে হারাম আল শরীফ নামে পরিচিত। এর পাশের বেস্টনী দেওয়ালটিকে বলা হয় ওয়েস্টার্ন ওয়াল বা পশ্চিমের দেওয়াল। এই দেওয়ালটি ইহুদি এবং মুসলমান - দুই ধর্মের মানুষের কাছেই পবিত্র। মুসলমানদের কাছে পবিত্র এজন্য যে, দেওয়ালটি আল-আকসা মসজিদটিকে বেস্টন করে আছে। আর ইহুদিরা এই দেওয়ালটি স্পর্শের মাধ্যমে আবেগপ্রবণ হয়, ক্রন্দন করে । তারা এই স্পর্শের মাধ্যমে এক সময়ের ইহুদি রাষ্ট্রকে অনুভব করতে চায়। তারা মনে করে সেই রাষ্ট্র আবার তাদের কাছে ফিরে আসবে। বর্তমান ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম হয় ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জায়নবাদী আর্থার বেলফোরের একটি ঘোষণার মাধ্যমে, যা ইতিহাসে বেলফোর ঘোষণা হিসেবে পরিচিত। সেই ঘোষণায় ফিলিস্তিনিদের অধিকার পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে। আজ তার একশত বছর পরও ফিলিস্তিনের এই সমস্যাটি সমাধান হয়নি। খ্রীষ্টানদের কাছ জেরুজালেম পবিত্র স্থান এজন্য যে রোমান সম্রাট কনস্ট্যানটাইন এক সময় খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেন। এরপর তিনি যিশুকে যেখানে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছে সে স্থানটিতে নির্মাণ করেন চার্চ অব দি হলি সেপালস্যার। সেজন্য খ্রীষ্ট ধর্মালম্বীদের কাছেও জেরুজালেম পবিত্র স্থান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়