শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৫:৩১ সকাল
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৫:৩১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শরণার্থী জীবনের কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত কণ্ঠযোদ্ধা মাজহারুল ইসলাম

আশিক রহমান : অনেকের মতো আমিও একাত্তরে শরণার্থী জীবন কাটিয়েছিলাম। সেই অভিজ্ঞতা ছিল অনেক কষ্টের। যন্ত্রণার। অনেক স্মৃতি আছে, দুঃসহ স্মৃতি। যা এখনো আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। কষ্ট দেয়। কাঁদায়। তখন আসলে শরণার্থী কে হননি? সাধারণ মানুষ, শিল্পী, পেশাজীবী যারাই পাকিস্তানি বর্বরদের অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছিল তাদের অনেকেই ছুটে গিয়েছিল ভারতে। কাটিয়েছিল দুঃসহ জীবনÑ এসব কথা বলছিলেন আর কাঁদছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা, বেতার শিল্পী মাজহারুল ইসলাম।আমাদের অর্থনীতিকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে প্রায় আবেগাপ্লুত মাজহারুল ইসলাম শরণার্থী জীবনের নানা অভিজ্ঞতার কথা বলতে থাকেনÑ ভারতে গিয়ে শরণার্থী হিসেবে গিয়ে যখন আমিও নাম লেখাই, তখন পরিচিতি কাউকে পাচ্ছিলাম না। খুব অসহায় লাগছিল। পরে কিছু পরিচিত মানুষকে পেলাম। তাদের বললাম, আমি মুক্তিযুদ্ধে যাব। ওরা আমায় নিল না। বলল, আপনি শিল্পী মানুষ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে চলে যান।

স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্র তখনো আগরতলায় ছিল। কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রের ১০জন গিয়েছিল ওখানে, তারা আবার ফিরে গেল মে মাসের ২২ তারিখ। আমাকে বলল, আপনি কলকাতায় চলে যান। ধর্মনগর রেলস্টেশন থেকে বিহার হয়ে চারদিনব্যাপী অনেক কষ্ট করে হাওরা স্টেশনে নামলাম। কিন্তু আমি তো কাউকে চিনি না, যাব কোথায়। চূড়ান্ত অসহায় বোধ করলাম। তবে ওখানে তখন অনেক শরণার্থী শিবির। শরণার্থীরা শুয়ে আছে। তখন অনেক রাত। কোনো কূল না পেয়ে ফুটপাত থেকে কিছু খাবার কিনে খেয়ে তাদের সঙ্গে শুয়ে পড়লাম সঙ্গে থাকা ব্যাগটা মাথার নিচে দিয়ে। তারপর সেখান থেকেই স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের সদ্ধান পাই।

তিনি আরও বলেন, শরণার্থীর সংখ্যা এত ব্যাপক ছিল যে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলাবাহিনী, সাহায্য সংস্থা, জাতিসংঘÑ সবাই একত্রিত হয়ে সেদিন যে মানবতার পরিচয় দিয়েছিলেন, তা না হলে হয়তো এতগুলো মানুষ বাঁচানো সম্ভব হতো না। অসুখ-বিসুখের চিকিৎসা হয়েছে। যতটা সম্ভব খাদ্য দিয়ে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা হয়েছিল।মাজহারুল ইসলাম বলেন, একাত্তরের ১৪ আগস্টে ‘বিক্ষুব্ধ বাংলা’ নামে একটা অনুষ্ঠান প্রচার হয়েছিল। সেটা প্রচার হয়েছিল পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসকে কাউন্টার করে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ওটাই দ্বিতীয় দিন ছিল। ‘বিক্ষুব্ধ বাংলা’ অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছিলাম আমি। মুক্তিযোদ্ধা, বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী আব্দুল জব্বার ভাই ওই অনুষ্ঠানের মিউজিক ডিরেক্টর ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে জব্বার ভাই এবং আমি গেলাম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের কাছে।

তিনি সম্ভবত তখন কলকাতার থিয়েটার রোডের কাছাকাছি কোনো একটা বাড়িতে থাকেন। জায়গাটার নাম ঠিক মনে নেই।গিয়ে দেখিÑ প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে। তখন বৃষ্টি পড়ছিল। তিনি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছেন। আমারদের পায়ের আওয়াজ পেয়ে ঘুরলেন। দেখি তার চোখে পানি টলমল করছে। জব্বার ভাই তখন কেঁদে ফেললেন। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদও প্রায় কেঁদে দিয়ে বললেন, ‘আমি তো এখানে একটা ছাউনীর নিচে আছি, দুটো ভাত ফুঁটিয়ে খাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আমার অসহায় শরণার্থীরা কী করবে এই বৃষ্টির মধ্যে? তোমরা বুঝতে পারছ কত কষ্টের মধ্যে আছে তারা?’ এই যে দেশপ্রেম, মানুষের জন্য প্রেম তা থেকেই তো মুক্তিযুদ্ধের উৎপত্তি। তারাই ছিলেন প্রকৃত দেশপ্রেমিক নেতা। অথচ এই মানুষগুলোকেই আমরা হত্যা করেছি।
তিনি বলেন, পচাত্তরের পনের আগস্ট জাতির জনককে হত্যা করা হলো। হত্যা করা হলো জাতীয় চার নেতাকেও। কারা হত্যা করল, কেন হত্যা করল? স্বাধীনবিরোধী করেছে। অবিশ্বাস্য ঘটনা যে মানুষটিকে বর্বর পাকিস্তান তাকে হত্যা করার সাহস করেনি, সেই মানুষটিকেই (বঙ্গবন্ধুকে) আমরা হত্যা করলাম। এটার মূল্য আমাদের দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, অনেকে বলে থাকেÑ একাত্তর নাকি ছিল গ-গোলের বছর! তাদের আমি জানিয়ে দিতে চাইÑ কীসের গ-গোল হয়েছে একাত্তরে? কত বড় স্পর্দা। যারা এমনটি বলে তাদের মাথায় গ-গোল রয়েছে। তাদের বিবেকে গ-গোল রয়েছে। তাদের রাজনৈতিক আদর্শে গ-গোল রয়েছে। এজন্যই মুক্তিযুদ্ধকে তারা গ-গোল বলে। তাদের এখনো পরিশুদ্ধ হওয়ার সময় রয়েছে বলেও মনে করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এই শব্দসৈনিক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়