শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু, মানতে হবে কিছু নির্দেশনা ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা

প্রকাশিত : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৯:০০ সকাল
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৯:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পরিবহন সুবিধা ছাড়াই ট্রানজিট চায় ভুটান

ডেস্ক রিপোর্ট : বাংলাদেশের কাছে অভিনব ট্রানজিট সুবিধা চায় ভুটান। সার্কভুক্ত এ দেশটি ট্রানজিটে অতি আগ্রহ দেখালেও চুক্তির আওতায় তারা পরিবহন সুবিধা নেবে না। এতে দুই দেশের মধ্যে ট্রানজিট চালু হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও এর মাধ্যমে এক দেশের পরিবহন অন্য দেশের ভূখণ্ডে প্রবেশের সুযোগ থাকবে না। এর পরিবর্তে ভুটান কন্ট্রাক্ট পার্টির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক বাণিজ্য পরিচালনার কাজে বাংলাদেশের ট্রানজিট ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে। এক্ষেত্রে দেশটির সংশ্লিষ্ট আমদানি-রফতানিকারক দ্বিপক্ষীয় ব্যবসায়িক আলোচনা, বিশ্বস্ততা ও সমঝোতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের পরীক্ষিত যে কোনো পরিবহন প্রতিষ্ঠান, সাপ্লাইয়ার প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে কন্ট্রাক্ট পার্টি হিসেবে নির্ধারণ করবে।

এদিকে ভুটানের বাছাইকৃত কন্ট্রাক্ট পার্টিই তাদের সব ধরনের পণ্য ও সেবার আমদানি-রফতানি চালান বাংলাদেশের এক বন্দর থেকে তুলে নিয়ে আরেকটি বন্দরে অপেক্ষমাণ কার্গো অথবা জাহাজে পৌঁছে দেবে। এক্ষেত্রে এদেশের নৌ, রেল কিংবা সড়কপথ ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ নির্ধারিত ট্রান্সশিপমেন্ট চার্জ পরিশোধেও সম্মতির কথা জানিয়েছে ভুটান। তবে এ প্রক্রিয়ায় এখনও সবচেয়ে বড় বাধা- দুই দেশের মধ্যে দুটি বিষয়ে মতৈক্য না হওয়া। এর একটি হচ্ছে, বহুল আলোচিত বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল মোটরযান চলাচল (বিবিআইএন) চুক্তি এখন ভুটানের বিরোধিতার কারণে অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ চায় পূর্ব স্বাক্ষরিত বিবিআইএন চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের পৃথক ট্রানজিট চুক্তিটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অকার্যকর হয়ে যাবে। কিন্তু ভুটান চায় বিবিআইএন কার্যকর হওয়ার পরও তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের পৃথক ট্রানজিট চুক্তি অটুট থাকুক। অপরটি হচ্ছে- দ্বিপক্ষীয় লেনদেনে প্রতিটি পণ্যের চালানের বিপরীতে বাংলাদেশ চায় ব্যাংক গ্যারান্টি। যার মাধ্যমে শুল্ক ও ট্রানশিপমেন্ট চার্জ আদায় করতে পারে। তবে ভুটান ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে চায় না। এর পরিবর্তে তারা বন্ড গ্যারান্টি দিতে আগ্রহ দেখালেও বাংলাদেশ এতে সম্মতি দেয়নি। বাংলাদেশ ও ভুটানের দ্বিপক্ষীয় ট্রানজিট চুক্তির সর্বশেষ খসড়া ও প্রটোকল পর্যালোচনা করে এসব তথ্য জানা গেছে।

দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, ট্রানজিট চুক্তির স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছাতে আগামীকাল বুধবার কক্সবাজারে বাংলাদেশ-ভুটান বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের তিন দিনের বৈঠক শুরু হচ্ছে। ট্রানজিটে যেসব বিষয়ে এখনও মতৈক্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি এ বৈঠকে তার একটা উপায় নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া প্রটোকল চূড়ান্তকরণসহ চুক্তির আওতায় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ জোরদারে করণীয় নির্ধারণ নিয়েও আলোচনা হবে। এর আগে ট্রানজিট চুক্তির খসড়াটি দুই দেশের মধ্যকার জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের আলোচনায় উঠানো হয়। সেখানে বাংলাদেশের প্রস্তাব ও অবস্থানের সঙ্গে ভুটানের প্রস্তাব ও অবস্থান পর্যালোচনায় ব্যাপক গরমিল পরিলক্ষিত হয়। একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে এই মতপার্থক্য দূর করতে দুই দেশই পুনরায় আলোচনায় বসতে রাজি হয়। এক্ষেত্রে বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠককে আলোচনার চূড়ান্ত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এর জন্য ভুটানের অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে খসড়ার কিছু অনুচ্ছেদ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। যা গত নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করা হয়। মূলত ওই বৈঠক থেকেই ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের ট্রানজিট চুক্তির প্রণীত খসড়া ও অবস্থান চূড়ান্ত করা হয়। একই সঙ্গে চূড়ান্ত করা হয় পণ্য পরিবহনে নির্ধারিত চার্জ হারও।

সূত্র মতে, বাংলাদেশ ও ভুটানের ট্রানজিট চুক্তির চূড়ান্ত খসড়ায় যানবাহনপ্রতি ট্রানজিট ফি প্রতি কিলোমিটারে প্রতিটন পণ্য পরিবহনে সর্বনিন্ম ২ টাকা ৩০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ১৫ টন ওজনবাহী গাড়িতে প্রতি কিলোমিটারে এ হার ধরা হয়েছে। এর বাইরে ১৫ টনের বেশি থেকে ২৫ টন পর্যন্ত ওজনবাহী যানবাহনের জন্য প্রতি টনে কিলোমিটার প্রতি ২.৫৮৪ টাকা ও ২৫ টনের বেশি ওজনের গাড়ির জন্য ফি ধরা হয়েছে কিলোমিটারে প্রতিটনে ৫.৩৭৯ টাকা।

বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু বলেন, বৈঠকে ট্রানজিট ইস্যুতে প্রণীত খসড়াকে চূড়ান্ত রূপ দিতে দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনায় একটি সমঝোতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হবে, যা অনুমোদিত হলে চূড়ান্ত পরিণতি পাবে দুই দেশের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্তে। তিনি বলেন, ভুটান ট্রানজিট চুক্তির আওতায় এলে ট্রানশিপমেন্ট ব্যবহারেই আগ্রহী। এক্ষেত্রে যেভাবেই তারা করতে চায় না কেন, তাতে সব দিক থেকেই বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষা হবে। তারা ট্রানশিপমেন্ট নিতে চাইলে তাদের পণ্য পরিবহন করবে বাংলাদেশের কোনো না কোনো পরিবহন। এতে দেশের পরিবহন মালিকরা লাভবান হবেন। পাশাপাশি এর থেকে নির্ধারিত ফি আদায় হবে বলে এতে বাংলাদেশও আর্থিকভাবে লাভবান হবে।

জানা গেছে, বৈঠকে ট্রানজিট চুক্তির আওতায় দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্র বৃদ্ধি করতে করণীয় নির্ধারণ নিয়েও আলোচনা হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ভুটানে প্রবেশে ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা দূর ও ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি, বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ ও শিল্প-কারখানা স্থাপনে কি ধরনের জটিলতা আছে গুরুত্ব পাবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের ট্যুরিজম সেক্টরকেও অগ্রাধিকার দেয়া হবে তিন দিনের এ বৈঠকে। এতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত, পাহাড়, সুন্দরবন ও কুয়াকাটাকে জোরালোভাবে তুলে ধরার জন্য একটি প্রেজেন্টেশন দেয়া হবে। অন্যদিকে ভুটান ট্রানজিটের বাইরে এ আলোচনা থেকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য জোরদারে বাংলাদেশের কাছে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাইবে বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে ভুটানকে প্রিফারেন্সিয়াল ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (পিটিএ) করার প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ। তবে এতে রাজি না হলে বাংলাদেশের পক্ষে ভুটানকে ডব্লিউটিওর বিধান অনুযায়ী শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া সম্ভব হবে না।

সূত্র : যুগান্তর

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়