শিরোনাম
◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০১:০৩ রাত
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০১:০৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নেপালের নির্বাচন কি ভারতের পরাজয়?

সুবীর ভৌমিক : নেপালের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং জ্বালানীমন্ত্রী কমল থাপা যখন বোধি গন্ধকি হাইড্রো ইলেকট্রিক প্রজেক্ট নির্মাণে চীনের গেজোবা গ্রুপের ২.৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তিটি বাতিল করার কথা ঘোষণা করেছিলেন, তখন দিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্তারা ১৩ নভেম্বরের টুইটে তাদের উল্লাস গোপন করেননি। প্রস্তাবিত প্রকল্পে নেপালের মধ্য-পশ্চিমাংশের বোধি গন্ধকি নদীতে বিশাল একটি পানি ধারণক্ষম ড্যাম নির্মাণের প্রস্তাব ছিল। ২০১৭ সালের ৪ জুন সিপিএনের (মাওবাদি কেন্দ্র) চেয়ারম্যান পুস্প কমল দহল ওরফে প্রচন্ডের নেতৃত্বাধীন সাবেক সরকার চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) আওতায় এই ড্যাম নির্মাণের জন্য চীনের সাথে সমঝোতা স্মারকে সই করেছিলেন। পদক্ষেপটি পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত ছিল না। কারণ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শের বাহাদুর দেউবা শপথ গ্রহণের পর থেকেই তার দল নেপালি কংগ্রেস নেতারা প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র প্রক্রিয়া ছাড়াই চুক্তি হয়েছে বলে অভিযোগ করতে থাকেন।

নেপালি সিদ্ধান্তের কয়েক দিনের মধ্যেই পাকিস্তানও কঠিন আর্থিক শর্তের কথা বলে অপ্রত্যাশিতভাবে পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মিরের ১৪ বিলিয়ন ডলারের দিয়ামার-ভাশা ড্যাম নির্মাণের চীনের সাথে করা তার চুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। এসব সিদ্ধান্ত বিআরআইয়ের আওতায় চীনের অর্থায়ন কৌশল নিয়ে কিছু প্রশ্ন সৃষ্টি করে। দিল্লিতে হয়তো এতে খুশির হাওয়া লেগেছিল। কিন্তু স্পষ্টভাবেই তা ছিল ক্ষণস্থায়ী।

এখন প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবার নেপালি কংগ্রেস পার্লামেন্ট নির্বাচনে এযাবৎকালের সবচেয়ে শোচনীয় ফলাফল করেছে। আর দেশটির ক্ষমতাব্যবস্থা কেবল বাম দিকেই ঝোঁকেনি, চীনের দিকেও হয়তো মোড় নিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্বাচনের ফলাফলকে ‘স্বাগত’ জানিয়েছে এবং ‘নতুন সরকারের সাথে’ কাজ করার ‘প্রতিশ্রুতি’ দিয়েছে। তবে দিল্লির আবহাওয়ায় বোঝা যাচ্ছে, নেপালে বামপন্থীদের বিজয় ভারতের জন্য খারাপ খবর। এমনটা মনে হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে।

অক্টোবরে প্রাক-নির্বাচনী চমক হিসেবে নেপালের দুটি বৃহত্তম এবং সদা-বৈরী কমিউনিস্ট পার্টি একত্রিত হয়ে বাম জোট গঠন করে। নেপালে সক্রিয় এবং নির্বাচনী ফলাফলে প্রভাব বিস্তার করতে বিমুখ না থাকা ভারতীয় সংস্থাগুলো জানায়, জোট গঠনে কমিউনিস্টদের রাজি করাতে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অনেকে মনে করে, এটি হলো শ্রীলঙ্কায় মাহিন্দা রাজাপাকসার দলকে পরাজিত করার ঘটনার চীনা প্রতিশোধ। কঠোর চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত রাজাপাকসা অভিযোগ করেছেন, সিরিসেনা ও বিক্রমাসিঙ্ঘেকে ঐক্যবদ্ধ করে তার পরাজয়ে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করেছে ভারতের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’। পরবর্তী সরকার দ্বীপ দেশটিতে চীনা উপস্থিতি কমাতে পারেনি, শ্রীলঙ্কা চীনা-নির্মিত হাম্বানতোতা বন্দরটিকে বেইজিংয়ের কাছে হস্তান্তর করেছে। অবশ্য দিল্লিতে রাজাপাকসার পরাজয়ে উল্লাস খুব একটা গোপন থাকেনি। এখন নেপালে পরাজয়ের অনুভূতি একই ধরনের ভারী মনে হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী দেউবা ছাড়া নেপালি কংগ্রেসের সব রথি-মহারথি পরাজিত হয়েছেন। তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী মোহন বসনেত, সাবেক অর্থমন্ত্রী রাম শরন মহত এবং মহেশ আচার্য, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিমলেন্দ্র নিধি ও কৃষ্ণ সিতুয়ালা, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশ শরন মহত এবং দলের শীর্ষ নেতা ও খ্যাতিমান কৈরালা পরিবারের সদস্য শেখর কৈরালা পরাজিত হয়েছেন।

কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল-ইউনাইটেড মার্ক্সিস্ট লেনিনিস্ট (সিপিএন-ইউএমএল) চেয়ারম্যান কে পি শর্মা অলি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করছেন। এ লোকটিকে ভারতবিদ্বেষী এবং চীনের প্রতি বন্ধু বিবেচনা করে দিল্লি। নেপাল মাস কয়েক পরপর নতুন প্রধানমন্ত্রী দেখছিল। তবে অলি পুরো পাঁচ বছর যদি ক্ষমতায় না-ও থাকতে পারেন, তবুও অন্তত দুই বছর থাকবেন। নেপালের নতুন সংবিধানে শর্ত দেওয়া রয়েছে, নতুন সরকার প্রধানের বিরুদ্ধে দুই বছরের জন্য অনাস্থা প্রস্তাব আনা যাবে না। অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে সব সরকারই টিকে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি দলের ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু অলির বাম জোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। নেপালে শেষ সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার ছিল ১৯৯৯ সালে।

এখন দেখার বিষয়, অলি-প্রচন্ড জুটি কিভাবে ভারত ও চীনের সাথে সম্পর্ক সামাল দেয়। ভারত যখন ২০১৫ ও ২০১৬ সালে নেপালের বিরুদ্ধে অঘোষিত সীমান্ত অবরোধ আরোপ করেছিল, তখন অলি চীনের সাথে বহুল আলোচিত বাণিজ্য ও ট্রানজিট কাঠামো চুক্তিতে সই করেছিলেন। প্রথমবারের মতো নেপাল এখন চীন থেকে তেল আমদানি এবং তৃতীয় দেশের সাথে বাণিজ্যের জন্য চীনা রাস্তা, রেললাইন ও বন্দর ব্যবহার করতে পারে। যদিও কোনো চুক্তিই বাস্তবে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য লাভ করতে পারেনি, কিন্তু পদক্ষেপটি অলির জাতীয়তাবাদী পরিচিতি বেশ জোরালো করে। ইউরোপভিত্তিক ভাষ্যকার অশোক সোয়াইন বলেন, ‘ইনি হলেন সেই প্রধানমন্ত্রী যিনি জাতির অতি প্রয়োজনের সময় কুশলী কূটনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করতে পারেন।’

অলির সময় চীনের সাথে অবকাঠামো উন্নয়ন আরো গভীর হবে। তবে বাম সরকার পোস্টাল রোড, পঞ্চেশ্বর এবং অরুন ৩-এর মতো প্রকল্পগুলোর গতিশীলতা আনার জন্য দিল্লির কাছেও যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ফলে অবশেষে হয়তো প্রথমবারের চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নেপাল সফর করার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন। আবার সীমান্ত অবরোধের পর উষ্ণ সম্পর্ক শীতল হওয়ার প্রেক্ষাপটে নতুন করে শুরু করতে চাইতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা এবং নেপালের জাতীয় স্বার্থ নিরাপদ রাখা হবে তার প্রধান পররাষ্ট্রবিষয়ক চ্যালেঞ্জ।

অলি এবং বাম জোটের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার পর মাধেশিভিত্তিক দলগুলোর সংবিধান সংশোধনের বিরোধপূর্ণ দাবিগুলো কিভাবে সুরাহা করা হয়, তা দেখার বিষয়। এই সংশোধনী মাধেশি/সংখ্যালঘু জনসাধারণকে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের সুযোগ বাড়িয়ে দেবে। অলি নিশ্চয় বেখবর নন যে মাধেশিভিত্তিক দলগুলোর সব শীর্ষ নেতা- উপেন্দ্র যাদব, মহন্ত ঠাকুর, অনিল ঝা ও রাজেন্দ্র মহন্ত- নির্বাচিত হয়েছেন এবং সর্বজয়ী বাম জোট মাধেশি সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ ২-এ ভয়াবহ ধরনের খারাপ করেছে।

তবে আবারো বলা দরকার, শ্রীলঙ্কার ভূত আবারো দিল্লিকে তাড়া করতে ফিরে আসতে পারে। কারণ নির্বাচনের আগে অলি-প্রচন্ড উভয়ে বলেছিলেন, তারা চীনাদের সাথে বোধি গন্ধকি প্রকল্প নিয়ে আবার আলোচনা করতে পারেন। ২০১৫ সালে রাজাপাকসার আমলে করা চীনের সাথে কলম্বো বন্দর প্রকল্প বাতিল করার কথা ঘোষণা করেছিল। কিন্তু চীন চুক্তির কিছু বিষয় পরিবর্তন করার প্রেক্ষাপটে এখন সিরিসেনা সরকার ওই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করেছে।

ভারতীয় কিছু মিডিয়ার খবরে বলা হয়, বোধি গন্ধকি চুক্তিটি বাতিল করার দেউবার সিদ্ধান্তের পেছনে ভারতের প্রভাব ছিল এবং চুক্তিটি হয়তো ভারতের ন্যাশনাল হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার করপোরেশনের হাতে যাবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা হয়নি এবং নেপাল নিজস্ব অর্থে প্রকল্পটি নির্মাণের কথা ভাবছে। কিন্তু এখন অলি-প্রচন্ড জুটি ক্ষমতায় ফেরায় প্রকল্প আবার চীনা কোম্পানি হাতে ফিরে যেতে পারে।

কিন্তু তা ঘটলে দিল্লির উচিত হবে না অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো। নেপালে বিশ্বের সর্বোচ্চ ১০টি পর্বত শৃঙ্গের আটটি রয়েছে। এখান থেকেই গঙ্গা নদীর প্রধান তিন উৎস কোশি, গান্ধকি ও কানালির উৎপত্তি। নেপালে পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনের বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও তা থেকে খুব সামান্যই উৎপাদিত হচ্ছে। পানিবিদ্যুৎ উৎস থেকে ভারত মাত্র ৭৫৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। দেশটির ৯০ ভাগ বিদ্যুৎ আসে ড্যাম থেকে। ১২০০ মেগাওয়াটের বোধি গন্ধকি প্রকল্প সমাপ্ত হলে তা হবে নেপালের বৃহত্তম পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প। এক দশকের তিক্ত গৃহযুদ্ধ থেকে বের হয়ে আসা পাহাড়ি দেশটির এখন প্রয়োজন উন্নয়নের দিকে বিপুল বেগে এগিয়ে যাওয়া। বিশ্বব্যাংকের এক হিসাবে বলা হয়েছে, নেপালের প্রয়োজন তার কানেকটিভিটিতে তার জিডিপির ৩ শতাংশ বিনিয়োগ করা। দেশটির তার অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিআরআই-পরিচালিত চীনা বিনিয়োগের দিকে এগিয়ে যাওয়ার যুক্তি রয়েছে। নেপালে ইতোমধ্যেই চীনা বিনিয়োগের প্রাধান্য রয়েছে। ২০১৬ সালে মোট ৬৫৩ মিলিয়ন ডলারের এফডিআইয়ের মধ্যে চীনের একার ছিল ২৯১.৯ মিলিয়ন ডলার। নেপালে বেশ কয়েকটি ড্যাম নির্মাণের পরিকল্পনা করছে চীন। ৭৫০ মেগাওয়াটের ওয়েস্ট সেতি ড্যাম নির্মাণের কাজও পেয়েছে চীনের থ্রি জর্জেজ করপোরেশন।

সঙ্ঘাত-পরবর্তী নেপাল জ্বলানি চাহিদা মেটানোর জন্য তার পানিবিদ্যুতের সম্ভাবনার দিকে নজর দেবে এবং জ্বলানি সঙ্কটে থাকা প্রতিবেশী দেশগুলোর উদ্বৃত্ত অংশ বিক্রি করার উদ্যোগ নেবে- সেটিই স্বাভাবিক। ১৯৯৫ সালে নেপালের অরুন ৩ ড্যাম থেকে প্রতিশ্রুত সহায়তা বিশ্বব্যাংক প্রত্যাহার করার পর থেকে দেশটি বড় আকারের কোনো ড্যাম নির্মাণ করতে পারেনি। অধিকন্তু, ভারতের জিএমআর আপার কারনালি ড্যাম নির্মাণের চুক্তি পেয়েছে, এসজেভিএন লিমিটেডের নির্মাণ করার কথা অরুন ৩। কিন্তু ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও ভারতীয় কোম্পানিগুলো এখন পর্যন্ত কাজ শুরু করতে পারেনি। অবশ্য ঐতিহাসিকভাবে এবং সভ্যতাগতভাবে সম্পর্কযুক্ত কোনো প্রতিবেশী ভারতীয় কোম্পানিগুলোর ‘চলতা-হ্যায় দৃষ্টিভঙ্গি’ এবং নাক গলানো আমলাতন্ত্র হজম করতে পারে না।

বিশ্লেষক অশোক সোয়াইন বলেন, বড় ড্যাম নির্মাণের মতো মূলধন ও কারিগরি সামর্থ্য নেপালের নেই। অথচ পার্বত্য দেশটির শিল্পায়ন ও উন্নয়নের জন্য এসব অতি গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের সাথে অনুমিত অন্যায় পানিচুক্তি এবং সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর সময়মতো কাজ সম্পন্ন করার গরজ না থাকায় নেপালকে তার পানিসম্পদ উন্নয়নে চীনা অর্থায়ন ও সহযোগিতা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে।

গত ২০১৫ সালের ২০ সেপ্টেম্বর নতুন সংবিধান ঘোষণার পর নেপালের বিরুদ্ধে ভারতের অঘোষিত অবরোধ দেশটিতে নজিরবিহীন জ্বলানি সঙ্কটের সৃষ্টি করে, ভারতের বিরুদ্ধে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান ক্রোধ চীনের সাথে আরো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সৃষ্টিতে উদ্বুদ্ধ করে। অবশ্য নিজের প্রভাবিত এলাকায় চীনের প্রভাব বাড়তে পারে, এমন প্রকল্প চীনাদের পক্ষে সম্পন্ন করা কঠিন হবে। এ কারণেই বোধি গন্ধকি প্রকল্পে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।

বিশাল ড্যাম প্রকল্প নির্মাণ এবং নেপালের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ভারত ও চীনের মধ্যকার শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতার কাছে পণবন্দি হয়ে পড়তে পারে। গোপন ও প্রকাশ্য বিরোধিতা সত্ত্বেও নেপালে চীনের নগদ অর্থে পরিপূর্ণ প্রভাব বাড়ানোর প্রয়াস ঠেকাতে পারছে না, এমনকি বিলম্বিত পর্যন্ত করতে পারছে না। ফলে ভারতের জন্য ভালো হয় নেপালের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রাধিকারকে গুরুত্ব দেওয়া এবং তার রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে মজবুত হতে দেওয়া। উন্নত গণতান্ত্রিক নেপাল চীনের বদলে ভারতকে গ্রহণ করার সম্ভাবনাই বেশি, যদিও দেশটি দুই প্রতিবেশীর মধ্যে দূরত্বও সৃষ্টি করে রাখতে পারে। নেপালের বিপুল পানিবিদ্যুৎ সম্পদ এবং এর অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য চীনের সাথে সহযোগিতা করা হবে ভারতের জন্য স্মার্ট পদক্ষেপ।

নেপালে বৃহৎ পানিবিদ্যুৎ ড্যাম নির্মাণের ফলে ভারতের জন্য কেবল সস্তায় উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ এবং অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার জ্বলানি কেনার সম্ভাবনাই সৃষ্টি হবে না, এতে করে ইন্দো-গাঙ্গেয় অববাহিকায় বিপর্যয় সৃষ্টিকারী বন্যা নিয়ন্ত্রণেরও সহায়ক হবে, উত্তর ভারতে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ বাড়াবে। অধিকন্তু, নেপালে চীনের সাথে ভারতের সহযোগিতার ফলে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় ব্যাপকভিত্তিক অভিন্ন পানি উন্নয়ন কাঠামো নির্মাণের পথ সৃষ্টি করবে। এটি বাংলাদেশের মতো ভাটির দেশগুলোর জন্য খুবই কল্যাণকর হবে।

নয়া দিল্লির কর্তাদের জন্য এখন সময় হলো ‘জিরো-সাম’ দৃষ্টিভঙ্গি এবং চীনের লাভে ভারতের ক্ষতি বিবেচনা করার ধারণা থেকে সরে আসা। নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ বা মিয়ানমারের মতো ছোট দেশগুলো সবসময়ই চীন ও ভারতের মতো উভয় বৃহৎ প্রতিবেশীর সাথেই কাজ করতে চায়। তারা কোনো একটিকে বাদ দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। ব্যক্তিগতভাবে আলাপ করলে শেখ হাসিনা, বা শ্রীলঙ্কার সিরিসেনা বা মিয়ানমারের অং সান সু চির মতো ভারতপন্থী প্রতিটি নেতাই আপনাকে এই কথাই বলবেন।

বিদ্যমান বাস্তবতা স্বীকার করে নেপাল প্রশ্নে ভারতের উচিত হবে চীনের সাথে বলটি খেলা। এতে অপ্রত্যাশিত যে সুবিধাটি পাওয়া যাবে তা হলো আগ্রাসী পিএলএ-চালিত প্রতিরক্ষা লবিকে দুর্বল করে দেওয়া। বেইজিংয়ের এই লবিটি চাচ্ছে হিমালয়ের শৃঙ্গে ভারতের সাথে সঙ্ঘাতে লিপ্ত হতে এবং প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের নেতৃত্বাধীন ব্যবসা-অর্থনীতি-চালিত উন্নয়ন লবিকে জোরদার করতে। তাদের লক্ষ্য হলো বিতর্কিত সীমান্তে দ্রুত চূড়ান্ত সমাধান পাওয়া। এ লবিটিকে দুর্বল করতে পারলে যে লাভ পাওয়া যাবে, অন্য কোনোভাবে ভারতের জাতীয় স্বার্থ এর চেয়ে ভালোভাবে রক্ষিত হবে না। ভারতের প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি এবং বড় করে চিন্তা করা।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়