শিরোনাম
◈ গাজীপুরে হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু  ◈ বিশৃঙ্খলার পথ এড়াতে শিশুদের মধ্যে খেলাধুলার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী ◈ তাপপ্রবাহের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা ◈ সোনার দাম কমেছে ভরিতে ৮৪০ টাকা ◈ ঈদযাত্রায় ৪১৯ দুর্ঘটনায় নিহত ৪৩৮: যাত্রী কল্যাণ সমিতি ◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সেই সম্পত্তি দিয়ে দেবো (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৪:০১ সকাল
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৪:০১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গুম-নিখোঁজের শেষ কোথায়?

ওয়াসিম ফারুক : গত ১০ অক্টোবর ২০১৭ দুপুরে মায়ের সাথে ফোনে কথা হয় তরুণ সাংবাদিক উৎপল দাসের। বিকেলের পর থেকে আর ফোনটি খোলা পাননি সাংবাদিক উৎপলের মা। আজ পর্যন্ত বন্ধ-ই রয়ে গেছে উৎপলের ব্যবহৃত মুঠো ফোন। খোঁজ মিলেনি উৎপলেরও। উৎপল অনলাইনভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম পূর্বপশ্চিমবিডিনিউজের একজন সিনিয়র সাংবাদিক। হঠাৎ করেই ভরদুপুরে মতিঝিলের অফিস পাড়ার অফিস থেকে বের হয়ে হাওয়ার সাথে মিশে যাবে একজন তরুণ সাংবাদিক, ভাবতেই পুরো মাথা নষ্ট। এই ভাবে হাওয়ায় মিশের যাওয়া অর্থাৎ গুম হওয়ার গল্প আমাদের দেশে নতুন নয়। রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, ব্যাংকের পদস্থ কর্মকর্তা, স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকেই শিকার হতে হচ্ছে গুম বা অপহরণের। বেশিরভাগ ঘটনা ঘটছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে। অপহরণ কাজে ব্যবহার হচ্ছে কালো কাচের মাইক্রোবাস। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে কাউকে তুলে নিলেও সন্ধান মিলে না বেশির ভাগের-ই। কেউ ভাগ্যক্রমে জীবিত আসলেও বেশির ভাগের লাশ পর্যন্ত মিলে না।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই বছরের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর, বাংলাদেশে ৩২৫টিরও অধিক গুমের ঘটনা ঘটেছে।আর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, চলিত বছর এই পর্যন্ত ৫৬ জনের নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়, যার মধ্যে ৪২ জনের খোঁজ আজও মিলেনি। সর্বশেষ নিখোঁজের তালিকায় যুক্ত হয় নরসিংদীর রায়পুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক বজলুর রহমান ওরফে বজলু। বজলুর পরিবারের দাবি ১২ ডিসেম্বর নিজ হাঁসের খামার পরিচর্যার সময় এক নারীসহ পুলিশের জ্যাকেট পরা ৫-৬ জন অস্ত্রের মুখে তাকে মেঘনা নদীতে নৌকায় উঠিয়ে নিয়ে যায়। নিজেদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে প্রতিটি সরকারই গুম অপহরণ ও হত্যাকে হাতিয়ে হিসেবে ব্যবহার করে বিরোধী শক্তি ও সমালোচকদের মনে ভয়ের সৃষ্টি করতে।

আমরা দেখেছি ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন সরকার নিজেদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনাকে হত্যার কি জঘন্য পরিকল্পনাই না করেছিল। তাতে শেখ হাসিনা প্রাণে বাঁচলেও জীবন দিতে হয়েছিল আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নারী নেত্রী আইভী রহমানসহ পঁচিশজন নিরীহ মানুষকে।
ভেবে ছিলাম, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসলে ক্ষমতার জন্য সংঘাত অনেকটাই কমবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র হলো তার উল্টো। আওয়ামী লীগ জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাষ্টীয় ক্ষমতাকে স্থায়ী করার জন্য রাষ্ট্রে আবারও মাত্রা পেল গুম অপহরণ। ২০১০ সালের ২৫ জুন রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা থেকে নিখোঁজ হতে হলো বিএনপি নেতা কমিশনার চৌধুরী আলমকে ।এর পর ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে বনানীর বাসার কাছ থেকে ড্রাইভার আনসার আলীসহ নিখোঁজ হন বিএনপি নেতা ও সাবেক সাংসদ এম ইলিয়াস আলী। ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাতে উত্তরার একটি বাসা থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছিল বলে পরিবারের দাবি পরে, অবশ্য ভারতের শিলংয়ে সন্ধান মিলে সালাহউদ্দিন আহমেদের।

একে একে কয়েকশত বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ অনেক সাধারণ মানুষের গুমের খবরই আমাদের জানা। পরিবেশবাদী কর্মী রেজোয়ানার স্বামী আবু বকর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের রিভার্জ থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে টাকা সরিয়ে নেওয়ার ঘটনার পর দেশের অন্যতম সাইবার সিকিউরিটিস্পেশালিস্ট তানভীর হাসান জোহা ও অপহরণের শিকার হয়েছিলেন তবে সৌভাগ্যক্রমে জীবন নিয়ে ফিরতে পেরে ছিলেন তারা। তবে কে বা কারা কী কারণে তাদের অপহরণ করেছিল তা আজও আমাদের কাছে রয়ে গেছে অজানা । হোলি আর্টিজানে হামলার পর থেকে কোনো তরুণ নিখোঁজ হলেই মনে শঙ্কা জাগে। কিছু দিন পরে তো আবার জঙ্গি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে না! আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও এ নিয়ে কিছুটা তৎপর হতে দেখেছি৷কিন্তু অন্য অনেক নিখোঁজের বেলায়ই আমাদের রাষ্ট্র তথা প্রশাসনের ভূমিকা আমাদের প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেয়। সাংবাদিক উৎপল দাসের ক্ষেত্রেও প্রশাসনের ভূমিকা তেমনই প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। হুট করেই খবর এসেছিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে নিখোঁজ উৎপল দাসের সন্ধান মিলেছে। উৎপলের পরিবারের আর্তনাথ বন্ধ হবে ভেবে অনেক আনন্দিত হয়েছিলাম। পরোক্ষণেই সংবাদ মিললো পুরোটাই গুজব। আবারও আশাহত হলাম।

প্রায় মাস ঘনিয়ে এলেও একজন সাংবাদিক নিখোঁজ পুরো সাংবাদিক সমাজসহ সমগ্র জাতির বিবেক আজ চিন্তিত কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হলো আমাদের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী এর কোনোই কুল কিনারা-ই করতে পারছেন না। এ ক্ষেত্রে তদন্তকারী পুলিশ গোয়েন্দাদের আন্তরিকতা, সক্ষমতা সাংবাদিক দাম্পত্তি সাগর-রুনি হত্যার মতই কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ। তবে এটাও ঠিক দ্রুততম সময়ে অনেক জটিল রহস্যভেদের বা অপরাধী শনাক্ত করার দৃষ্টান্ত আমাদের দেশের পুলিশ গোয়েন্দাদের আছে। আমরা বিশ্বাস করি, তারা এই রহস্যও উন্মোচন করতে পারবেন। উৎপল দাসসহ নিখোঁজ সবাই অতিদ্রুতই ফিরে আসবেন পরিবারের মাঝে ।

লেখক : কলামিস্ট
সম্পাদনা : খন্দকার আলমগীর হোসাইন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়