শিরোনাম
◈ ৯৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা বিলে জো বাইডেনের সাক্ষর  ◈ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর ◈ বাংলাদেশ ব্রাজিল থেকে ইথানল নিতে পারে, যা তেলের চেয়ে অনেক সস্তা: রাষ্ট্রদূত ◈ মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি ◈ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ◈ বর্ধিত ভাড়ায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু ◈ মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়রা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ওবায়দুল কাদের  ◈ লোডশেডিং ১০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে, চাপ পড়ছে গ্রামে ◈ বাংলাদেশে কাতারের বিনিয়োগ সম্প্রসারণের বিপুল সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা  ◈ হিট স্ট্রোকে রাজধানীতে রিকশা চালকের মৃত্যু

প্রকাশিত : ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৮:৪৫ সকাল
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৮:৪৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পরিবার সঞ্চয়পত্রের কৃত্রিম সংকট

ডেস্ক রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার কিছু আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে ১০ লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে আসেন বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা রিনি রাজিউন তিশা। কিন্তু ডেস্কে দায়িত্বরত কর্মকর্তা তাকে জানিয়ে দেন ফরম নেই। এতে তিনি বিপাকে পড়েন। কারণ, ব্যাংক থেকে তিনি আধাবেলা ছুটি নিয়ে এসেছেন। এর কিছু আগে শান্তিনগর থেকে জোবায়দা বেগম নামে এক গৃহিণী ৫ লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে আসেন। তাকেও ফরম নেই বলে জানানো হয়।

শুধু জোবায়দা বেগম কিংবা রিনি রাজিউন তিশাই নন, এদিন আরও অনেককেই পরিবার সঞ্চয়পত্রের ফরম না পেয়ে বিকল্প কৌশলে ফরম সংগ্রহ কিংবা ফেরত যেতে হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর চাহিদা অনুযায়ী ফরম সরবরাহ করতে না পারায় এ ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আর সঞ্চয় অধিদফতরের দাবি, পরিবার সঞ্চয়ত্র ফরমের ঘাটতি নেই। চাওয়া মাত্রই তারা এ ফরম সরবরাহ করে থাকে।

এদিকে, তফসিলি ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে অনীহার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে তারাও আবেদন ফরম না থাকার অজুহাত দেখাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার কয়েকজন ভুক্তভোগি আলোকিত বাংলাদেশের কাছে এ অভিযোগ করেন। এরপর গ্রাহক সেজে সোনালীসহ কয়েকটি ব্যাংকের শাখায় গিয়ে ভুক্তভোগিদের এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

জানা গেছে, বর্তমানে যে কোনো উৎসের চেয়ে সঞ্চয়পত্র খাতে সুদ তথা মুনাফার হার বেশি। আর সঞ্চয়পত্রের বিভিন্ন প্রকারের মধ্যে পরিবার সঞ্চয়পত্রের চাহিদা বেশি। পাশাপাশি ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের প্রায় সমান চাহিদা রয়েছে। এ চার ধরনের সঞ্চয়পত্রের জন্য প্রতিদিনই মানুষ বাণিজ্যিক ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের অধিনে সব সঞ্চয় ব্যুরো ও পোস্ট অফিসে বেশি ভিড় করছেন। কিন্তু বাণিজ্যিক ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা সঞ্চয়পত্র কিনতে চাইলে আবেদন ফরম না থাকার অজুহাতে সাধারণ মানুষকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন।

সূত্র বলছে, বরাবরই সঞ্চয়পত্র বিক্রির কার্যক্রমকে ঝামেলা মনে করে আসছে ব্যাংকগুলো। কেননা, এ কাজে কমিশন খুবই কম, খরচ অনেক বেশি। এ কারণে বেসরকারি বেশিরভাগ ব্যাংকই সঞ্চয়পত্র বিক্রি করতে চায় না। এদিকে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সঞ্চয়পত্র কেনা নিরুসাহিত করায় বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে সঞ্চয়পত্র প্রত্যাশীদের ভিড় বাড়ছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র কিনলে এর মুনাফা অনলাইনে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে উত্তোলনের সুবিধা মেলায়ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বেশি ভিড় করছেন মানুষ। এতে বাড়তি চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। অন্যদিকে, বাণিজ্যিক ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয়পত্রের ব্যুরো ও ডাকঘর থেকে সঞ্চয়পত্র কিনলে বর্তমানে এ সেবা পাওয়া যাচ্ছে না।

পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে না পারা গৃহিণী জোবায়দা বেগম আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, সঞ্চয়পত্র কিনতে চাইলে ব্যাংকগুলো তাকে ফরম না থাকার কথা জানিয়েছেন। তাই তিনি বাধ্য হয়েই বাংলাদেশ ব্যাংকে এসেছেন। কিন্তু এখানেও ফরম নেই বলে তাকে জানানো হয়। বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা রিনি রাজিউন তিশা বলেন, যদি ফরম না-ই থাকে, তবে সার্কুলার করে জানিয়ে দেয়া হয় না কেন? এতে মানুষজন এসে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তিনি বলেন, আমিও একজন ব্যাংকার। আমি সচেতন হওয়ায় হয়তো পরিচিতদের মাধ্যমে একটি ফরম জোগাড় করে নিতে পারব, কিন্তু অন্যরা কী করবেন?

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে পরিবার সঞ্চয়পত্রের ফরম শেষ হয়ে যাওয়ার কথা স্বীকারও করেন এ অফিসের সাধারণ সঞ্চয়পত্র শাখার যুগ্ম ব্যবস্থাপক মোঃ ইসমাইল হোসেন পাটওয়ারী। তিনি আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বরাবরই পরিবার সঞ্চয়পত্রের চাহিদা বেশি থাকে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর থেকে সরবরাহ না থাকায় আমরা আপাতত এর ফরম দিতে পারছি না। তাছাড়া অধিদফতর যদি চাহিদা অনুয়ায়ী সরবরাহ না করে, তবে আমরা দেব কোথা থেকে? কারণ আমরা তো আর সঞ্চয়পত্রের ফরম ছাপি না। তিনি বলেন, সর্বশেষ আমরা অধিদফতরের কাছে ৩০ হাজার ফরম চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের দেয়া হয় মাত্র ৩ হাজার। এ ৩ হাজার আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সব শাখার পাশাপাশি তফসিলি ব্যাংকগুলোয়ও সরবরাহ করেছি। এখন শেষ হয়ে যাওয়ায় আবার অধিদফতরের কাছে চাহিদা পাঠিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে এখন অনেক সেবাই সহজে পাওয়া যায়। এখন ওয়েসবাইট থেকেই সঞ্চয়পত্রের ফরম সংগ্রহ করা যায়।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন অভিযোগ নাকচ করে দেন জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের মহাপরিচালক সামসুন্নাহার বেগম। তিনি বলেন, এ অভিযোগ সত্য নয়। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের কাছে প্রচুর পরিমাণ ফরম পড়ে আছে। যদি ব্যাংকগুলোর ফরম শেষ হয়ে যায়, তবে তারা নিচ্ছে না কেন। শেষ হওয়ার আগেই তারা ফরম নিয়ে রিজার্ভ ঠিক রাখতে পারে। ফরম নেই বলে আতঙ্ক সৃষ্টি করার কোনো মানে নেই। ব্যাংকগুলোয় চাহিদা অনুযায়ী ফরম সরবরাহ না করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে স্টক অপ্রতুল থাকলে কম দিতেই পারি। কিন্তু তাদেরও উচিত, সরবরাহ স্টক শেষ হওয়ার আগেই আমাদের কাছে চাহিদা পাঠিয়ে তা নিয়ে নেয়া। এটার জন্য তো নির্দিষ্ট সময় নেই। যে কোনো সময়ই তারা এটা নিতে পারে। তিনি আরও বলেন, আমরা সব সময়ই সঞ্চয়কে উৎসাহিত করি, নিরুৎসাহিত নয়। এজন্য আমরা প্রমোশনাল ওয়ার্ক করছি। টার্গেট পিপলের মধ্যে সঞ্চয় উদ্বুদ্ধে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে উঠান বৈঠকও করছি।

ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অলস অর্থ পড়ে থাকায় ধারবাহিক আমানতের সুদ কমছে। বর্তমানে ব্যাংক আমানতের গড় সুদহার ৫ শতাংশের নিচে নেমেছে; সেখানে সঞ্চয়পত্রের সুদহার মিলছে এর দ্বিগুণেরও বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের অক্টোবর শেষে ব্যাংকিং খাতে গড় আমানতে সুদের হার দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ্। অন্যদিকে, বর্তমানে বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পের সুদ মিলছে ১১ থেকে ১২ শতাংশের মধ্যে। এর মধ্যে পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদ ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ, ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদ ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের সুদ ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

মূলত ব্যাংকের চেয়ে দ্বিগুণ সুদহার হওয়ায় গেল কয়েক অর্থবছরে অস্বাভাবিক গতিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে। চলতি অর্থবছরেও একই চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্যে দেখা গেছে, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসেই (জুলাই-অক্টোবর) সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে ১৭ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ৪ মাসেই লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এ সময়ে পরিবার সঞ্চয়পত্রই বেশি বিক্রি হয়েছে। ৪ মাসে এখান থেকে নিট বিনিয়োগ এসেছে ৬ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা। আর ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র থেকে বিনিয়োগ এসেছে ৪ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা। গেল অর্থবছরে পুরো সময়ে ৫২ হাজার ৩২৭ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়; যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। গেল অর্থবছরেও সর্বোচ্চ ২০ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকার নিট বিনিয়োগ আসে পরিবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে। সূত্র : আলোকিত বাংলাদেশ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়