নুরুল আমিন হাসান : রাজধানীর দক্ষিণখানের একটি হোটেল থেকে গলিত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তিন হোটেল ম্যানেজারকে আটক রেখে পাঁচ লাখ টাকা আদায়ের তথ্য পাওয়া গেছে। আটকের পর দিন সন্ধ্যায় টাকা আদায়ের পর তাদেরকে ছেড়ে দেয় দক্ষিণখান থানা পুলিশ। আটকৃতরা হলেন দক্ষিণখানের নোয়াখালী গেষ্ট হাউজের ম্যানেজার মো. রফিকুল ইসলাম (৩০), মো. সেলিম (৪৮) ও মো অহেতুর রহমান (৩৩)।
দক্ষিণখান থানা পুলিশের এক পুলিশ কর্মকর্তা আমাদের সময় ডটকমকে এ তথ্য জানান। এসব তথ্যের রেকর্ডিও আমাদের সময় ডটকমের হাতে রয়েছে।
্এর আগে দক্ষিণখান থানাধীন আশকোনার ‘নোয়াখালী গেষ্ট হাউজের’ তৃতীয় তলার ১২ নম্বর কক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার রাত ১১ টায় মানিক কুমার বড়–য়া (৪৮) নামের এক তিতাাস গ্যাস কর্মকর্তার গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার কারণে ওই তিন ম্যানেজারকে আটক করেছিল দক্ষিণখান থানা পুলিশ। পরে শুক্রবার সন্ধ্যায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই পুলিশ কর্মকর্তা শুক্রবার সকালে আমাদের সময় ডটকমকে বলেন, গত রাতে আশকোনার নোয়াখালী নোয়াখালী গেষ্ট হাউজ থেকে এক জনের গলিত মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। একই সাথে ওই হোটেলের মো. রফিকুল ইসলাম (৩০), মো. সেলিম (৪৮) ও মো অহেতুর রহমান (৩৩) তিন ম্যানেজারকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের সাথে এ ঘটনা দামাচাপা দেওয়ার জন্য রফাদফা চলছে। তারা ৫ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য রাজি হয়েছে। কিন্তু ১০ লাখ টাকা দাবি করা হচ্ছে। পরবর্তীতে তিনি আরো জানান, সর্বশেষ ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই তিন ম্যানেজারকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এসব কথোপকথোনের রেকর্ড আমাদের সময় ডটকমের কাছে রয়েছে।
এদিকে দক্ষিণখান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নান্নু খান আমাদের সময় ডটকমকে জানান, নোয়াখালী আবাসিক হোটেলে ১১ তারিখে উঠার পর ওই দিনই তিনি মারা যান। পরে পঁচে লাশের দুগন্ধ বের হলে খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ভাতিজা (বড় ভাইয়ের ছেলে) বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যুৃ মামলা দায়ের করেছেন। তবে আটকের বিষয়ে তিনি অস্বীকার করেন।
ওই হোটেলের তিন ম্যানেজারের সাথে শনিবার সন্ধ্যায় যোগাযো করা হলে তারা টাকা লেনদেনের বিষয়ে এড়িয়ে যান। অপরদিকে আশকোনা এলাকার অন্যান্য হোটেল ব্যবসায়ীরা আমাদের সময় ডটকমকে জানান, নোয়াখালী গেষ্ট হাউজের হোটেল ব্যবসার কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। এছাড়াও ২০১৪ সালে উক্ত হোটেল ভবনের চতুর্থ তলায় অপর একটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছিল। তখন হোটেলের নাম ছিল, ঢাকা হোটেল।
উক্ত অভিযোগের বিষয়ে দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তপন চন্দ্র সাহা আটকের বিষযটি অস্বীকার করে বলেন, ‘গলিত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় কাউকে আটক করা হয় নি। তাছাড়াও আমার জানামতে কোন টাকাও নেওয়া হয়নি। ওই ঘটনায় একটি ইউডি (অপমৃত্যু) মামলা হয়েছে’। তিনি বলেন, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদেরকে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে।
মারা যাওয়ার তিন দিন পার, তীব্র গন্ধেও টের পায়নি না হোটেল কর্তপক্ষ : শনিবার সন্ধ্যায় আশকোনার ওই হোটেলে দেখা যায়, পূর্বের ন্যায় ব্যস্ত হোটেলের ম্যানেজার থেকে সবাই। দেখে বুঝার কোন উপায় নেই যে, দু’দিন আগে হোটেল থেকে এক গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তৃতীয় তলায় উঠতেই ১২ নম্বর রুম থেকে মৃত লাশের তীব্র গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। যদিও ১২ নম্বর রুমটির দরজা বন্ধ ছিল। আর ওই রুমের দরজা থেকে সিঁড়ি পর্যন্ত ছিল রক্তের ছাপ। আর রুমটিতে শুধুমাত্র টিভি ছাড়া কিছুই ছিল না। হোটেল কতৃপক্ষের লোক জানান, গলিত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ রুমের সব আসবাপত্র নিয়ে গেছে।
হোটেলের ম্যানেজার অহেদুর রহমান ও রফিকুল ইসলাম আমাদের সময় ডটকমকে জানান, গত ১১ তারিখ সকাল সাড়ে ১১টায় দৈনিক ৪শত টাকা করে তিন দিনের জন্য ১২শত টাকা ভাড়া দিয়ে তিতাস গ্যাসের এক কর্মকর্তা হোটেলে ওঠে। ওই ব্যাক্তি রুমে ঢুকার পর থেকে আ বাহিরে বের হয় নি। আসার দিনই তিনি মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, প্রতিনিয়ত সকাল ও বিকেলে রুম ঝাড়– ও পরিষ্কার দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি যদি বিরক্ত হন এই ভেবেই তাকে ডাকা হয়নি। তারা বলেন, হোটেল ভাড়ার সময় শেষ হয়ে গেলে ডাকাডাতি করেও কোন সাড়া শব্দ পাওয়া যায় নি। পরে পুলিশ এসে তার গরিত মরাদেহ উদ্ধার করে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, আগে লাশের কোন গন্ধ পাওয়া যায় নি। তাই মারা যাওয়ার বিষয়টি জানা যায় নি।
আপনার মতামত লিখুন :