শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু, মানতে হবে কিছু নির্দেশনা ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা

প্রকাশিত : ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১০:৪৪ দুপুর
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১০:৪৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আবর্জনার ঠাঁই হয় খালপাড়ে

ডেস্ক রিপোর্ট : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অন্যতম পুরনো এলাকা ৩ নং ওয়ার্ড। কিন্তু উন্নয়নের মাপকাঠিতে পিছিয়ে অনেক দূর। বস্তিপ্রধান ওয়ার্ড হওয়ায় যত্রতত্র আবর্জনা স্তূপ আর ভয়াবহ মাদকের প্রকোপে মুমূর্ষু এই ওয়ার্ড। পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নকর্মী ও ময়লার ভ্যান থাকলেও আবর্জনা মজুদের জন্য সিটি করপোরেশন থেকে নেই কোনো ‘সেকেন্ডারি ট্রান্সফার সেন্টার (এসটিএস)’। বেওয়ারিশ আবর্জনার অস্থায়ী ঠাঁই হয় বাজারের পেছনে আর খালপাড়ে।

উত্তর খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া, নবীনবাগ, ভূঁইয়াপাড়া, সিপাহীবাগ, আনসারবাগ, মধ্যপাড়া, লালমিয়ার গলি, নয়াপাড়া, হিন্দুপাড়া, আঙলার জোড়, মদন গলিসহ বনশ্রী-ই, এফ, জি, এইচ, জে, কে, এল ব্লক এবং ডি ব্লকের আংশিক অংশ নিয়ে গঠিত দক্ষিণ সিটির ৩নং ওয়ার্ড।

সরেজমিন দেখা গেছে, প্রধান সড়কের ধার ও বনশ্রীর কিছু অংশ বাদে প্রায় পুরো ওয়ার্ডেই ময়লা আর পচাগলা বর্জ্যরে মাখামাখি। মেরাদিয়া, সিপাহীবাগ, হিন্দুপাড়া, আদম আলীর টেক, মেরাদিয়া, সিপাহীবাগ, মধ্যপাড়ার চিত্র আরও ভয়াবহ। ডিসিসি-এসটিএসের অভাবে ওয়ার্ডের একাংশের ময়লা এসে জমে সিপাহীবাগ বাজারের পেছনে। আবাসিক এলাকার ঠিক প্রাণ কেন্দ্রে নিয়মবহির্র্ভূত এই ময়লার ডিপোর জন্য অবর্ণনীয় দুর্ভোগে আছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এদিকে এলাকার অন্য অংশের ময়লা জমা করা হয় মেরাদিয়া খালপাড়ে। প্রতিনিয়তই আবর্জনায় দখল হয়ে যাচ্ছে বনশ্রী-ডেমরা হাইওয়ের পাশে অবস্থিত মৃতপ্রায় প্রসিদ্ধ এই খালটি।

ওয়ার্ডজুড়ে ছত্রাকের মতো অনিয়মিতভাবে গড়ে উঠেছে বস্তিঘর, ভাঙ্গাড়ির দোকান, রিকশা-ভ্যানের গ্যারেজ, ছোট ছোট টঙঘরে কারখানা। আইন না মেনে ‘কয়েল-আগরবাতি-ইঁদুর মারার বিষ’ তৈরির করখানা থেকে শুরু করে প্লাস্টিক ব্যাগ, এমনকি ক্ষতিকারক কেমিক্যাল তৈরির কারখানা করা হয়েছে আবাসিক এলাকাতে। ফলে এলাকার জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে।

এ ছাড়া জুই¹ার খাল ও নড়াই খালের সংযোগস্থলটিও প্রভাবশালীদের আশ্রয়ে ভরাট করে দখলে নিয়েছে হাউজিং কোম্পানি। বেদখলে আছে মেরাদিয়া ‘বুধবাইরা হাটের’ (প্রতি বুধবার বসা হাট) সরকারি জায়াগাটিও। ওয়ার্ডের পয়ঃনিষ্কাষণ ব্যবস্থার হালও বেশ করুণ।

হিন্দুপাড়া, আদম আলীর টেক, ভূঁইয়াপাড়া, লালমিঞার গলি ও নয়াপাড়ার ভেতরের অংশ ঘুরে দেখা গেছে, টিন শেড বাড়িগুলোতে প্রতি ৫টি পরিবারের জন্য একটি টয়লেটও নেই। থাকলেও তার ব্যবস্থাপনায় অমনযোগী প্রায় সব বাড়িওয়ালা। ফলে পয়ঃনিষ্কাষণের নোংরা পানি ও বর্জ্য ময়লা দিয়ে সয়লাব ওলিগলি। আর নিত্যদিনের আবর্জনা তো আছেই। হিন্দুপাড়ার গোপী দেবনাথ জানান, আমাদের পাড়ার মতো অনেক জায়গায় ড্রেনেজ ব্যবস্থার খারাপ অবস্থা। বৃষ্টি পড়লে কষ্ট আরও বাড়ে, ইট দিয়েও রাস্তায় হাঁটা যায় না।

এদিকে মাদক সেবনসহ মাদক ব্যবসাও বেশ জমজমাট ৩নং ওয়ার্ডে। বস্তির অরণ্যে বর্ণচোরা মাদক ব্যবসায়ী চক্রগুলো বেশ সক্রিয়। মাদক ব্যবসার অর্থ নিয়মিত স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা ও প্রশাসনের পকেটেও যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে প্রসাশন এ ব্যাপারে নিশ্চুপ।

মেরাদিয়া এলাকার মদের ব্যবসা বন্ধ হলেও ইয়াবা ব্যবসায় সম্প্রতি বেশ নাম কামিয়েছে এই ওয়ার্ড। মাদক ব্যবসা প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছে সেখানে। ভূঁইয়াপাড়ায় ঢুকতেই নব্বা বাড়ি এলাকার অলিগলিতে দিনেদুপুরে চলে মাদকসেবন। পশ্চিম নবিনবাগ, বড়বাড়িসহ ওয়ার্ডের সিংহ ভাগজুড়ে মাদকের প্রকোপ প্রকট। হাজী আবদুল মজীদ সড়কের দিকটায় লোকচক্ষুর আড়ালে চলছে মাদক কেনাবেচা। বস্তি এলাকাগুলো পরিণত হয়েছে মাদকসেবীদের আশ্রয়স্থলে।

অন্যদিকে আদম আলীরটেক, পশ্চিম নবীনসহ আরও কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, টঙঘর কিংবা রিকশা-ভ্যান গ্যারেজ, মাদকের পাশাপাশি বসে জুয়া খেলার আসর।

বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস সরবরাহেও ভোগান্তিতে এলাকাবাসী। দুপুরবেলা গ্যাসের চাপ নামমাত্র থাকে বলে জানান ভূঁইয়াপাড়ার বাসিন্দা আলী আজম। তিনি আরও বলেন, বর্ষার মৌসুমে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে ওয়াসার পানিতেও দুর্গন্ধ থাকে। তখন খাবার পানি জোগাতে এলাকাবাসীর বেশ বেগ পেতে হয়। মশার প্রকোপও অন্য ওয়ার্ডের তুলনায় অনেক বেশি। নিয়মিত মশার ওষুধ দেওয়া হয় না বলে জানান আরেক স্থানীয় বাসিন্দা একরামুজ্জামান।

এদিকে ওয়ার্ডের সড়কগুলো তুলনামূলকভাবে বেশ শুরু হওয়ায় যাতায়াতে দুর্ভোগ অবর্ণনীয়। অতিরিক্ত যানবাহন ও সিএনজি-লেগুনা স্ট্যান্ড থাকায় উত্তর গোড়ান-সিপাহীবাগ মোড়টি এ ওয়ার্ডের জন্য বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে। এ কারণে অন্য রাস্তাগুলোতেও সারা দিন যানজট থাকে। এ ছাড়া সিপাহীবাগ বাজার সড়ক, মধ্যপাড়ার মোড়, মেরাদিয়া ‘বুধবাইরা বাজার’ সড়কসহ অনেক সড়কেও দেখা গেছে একই চিত্র।

হাতেগোনা কয়েকটি কিন্ডারগার্টেন, মাদ্রাসা ও ১টি মাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই এখানে। ওয়ার্ডে একটিও উন্মুক্ত মাঠ নেই। নেই কোনো হাসপাতাল। মেরাদিয়া মধ্যপাড়ায় ডিসিসির অধীনে একটিমাত্র নগর মাতৃসদন। ওয়ার্ডে অগ্নিনির্বাপণের জন্য নেই কোনো ‘ওয়াটার রিজারভার’। ৮৫০টি এলইডি বাতি লাগানো হলেও তা শুধু বড় রাস্তার পাশে সীমাবদ্ধ। ছোট সড়ক ও অলিগলিতে সাধারণ আলোর ব্যবস্থা নেই। দৈনিক আমাদের সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়