শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৯:৫০ সকাল
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৯:৫০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অযত্ন অবহেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন

ডেস্ক রিপোর্ট : মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমি ও গণকবরগুলোর বেশির ভাগই অরক্ষিত হয়ে পড়ে আছে। কোনো কোনো বধ্যভূমি ও গণকবর নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সংরক্ষণ করা হয়নি গণশহীদদের নামের তালিকা। স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও সংরক্ষণের কোনো উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।

জামালপুর : ১৯৭১ সালে যুদ্ধ চলাকালে ১১নং সেক্টরের অধীন জামালপুরের বিভিন্ন স্থানে হানাদারবাহিনী তাদের দোসর আল-বদর রাজাকারদের নিয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, হত্যা করে অসংখ্য মুক্তিকামী বাঙালিকে। যথাযথ পরিচর্যা ও সংরক্ষণের অভাবে জামালপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ও বধ্যভূমিগুলো আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। অধিকাংশ গণকবর ও বধ্যভূমি আজও চিহ্নিত না হওয়ায় সেগুলো এখন পরিণত হয়েছে গরু-ছাগলের চারণভূমিতে।

একাত্তরের ২২ এপ্রিল হানাদার পাকবাহিনী জামালপুরে প্রবেশ করে। জামালপুরে স্থাপন করে পাক হানাদার বাহিনীর ৩১ বালুচ রেজিমেন্টের হেডকোয়ার্টার। যুদ্ধকালীন সময়ে জেলা সদরের পিটিআই হেড কোয়ার্টার, বর্তমান ওয়াপদা রেস্ট হাউস, আশেক মাহমুদ কলেজের ডিগ্রি হোস্টেল টর্চার সেল, ব্রহ্মপুত্রের তীরে শ্মশানঘাট বধ্যভূমি, ফৌতি গোরস্থান বধ্যভূমিতে ধরে এনে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী বাঙালিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। চিহ্নিত না করায় বধ্যভূমি ও গণকবরগুলো এখনো পড়ে আছে অরক্ষিত অবস্থায়। ৪ ডিসেম্বর ধানুয়া কামালপুর বিজয়ের পর মুক্তি বাহিনী চতুর্দিক থেকে জামালপুরকে ঘিরে ফেললে হানাদার বাহিনীও আত্মরক্ষায় সর্বশক্তি নিয়োগ করে। একপর্যায়ে ১০ ডিসেম্বর দিন ও রাতব্যাপী মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর চতুর্মুখী আক্রমণে হানাদার বাহিনী পরাস্ত হলে ১১ ডিসেম্বর ভোরে কোম্পানী কমান্ডার ফয়েজুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিসেনারা হানাদার বাহিনীর হেডকোয়ার্টার পুরানা ওয়াপদা ভবনে স্বাধীন বাংলার বিজয় পতাকা উত্তোলন করেন। মুক্ত হয় জামালপুর। জামালপুর মুক্ত করার যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর ২৩৫ জন সৈন্য নিহত হয় এবং ৩৭৬ জন হানাদার সৈন্য আত্মসমর্পণ করে। আর এই যুদ্ধে মিত্র বাহিনীর ১১ জন শহীদ হয়।

স্বাধীনতার ৪৬ বছর যাবৎ মুক্তিযুদ্ধের এসব স্মৃতিচিহ্ন অযত্ন অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে। আশেক মাহমুদ কলেজ ডিগ্রি হোস্টেল টর্চার সেল পরিণত হয়েছে গরুর খোয়াড়ে। ওই টর্চার সেলের সামনে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভটি গবরের লাকড়ি শুকানো এবং শিশুদের খেলার স্থানে পরিণত হয়েছে। ফৌতি গোরস্তানের গণকবরটিতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হলেও, পুরাতন ওয়াবদাসংলগ্ন গণকবরটির স্থানে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ তো নির্মাণ করা হয়নি উল্টো স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ না করায় গণকবরটি জঙ্গলে পরিণত হয়েছে।

অপরদিকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলার মহেন্দ্রগঞ্জ এলাকায় কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বাধীন ১১নং সেক্টরের হেড কোয়ার্টার স্থাপন করা হয়। বিপরীতে এ পাশে বকশীগঞ্জের ধানুয়া কামালপুরে হানাদার বাহিনীর ঘাঁটি স্থাপন করা হয়। এই অঞ্চলে হানাদার বাহিনীর অন্যতম শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল ধানুয়া কামালপুর। স্বাধীনতা যুদ্ধে এই ১১নং সেক্টরের গুরম্নত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বকশীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত হয় হত্যাযজ্ঞ। হানাদার বাহিনী বকশীগঞ্জের মাটিতে গণধর্ষণ ও নিরীহ বাঙালির উপর হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। এখানকার অনেক যুদ্ধই ইতিহাসে জায়গা করে নিলেও এখানকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শহীদ হওয়ার স্থান, বধ্যভূমি আর গণকবরগুলো অযত্ন অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে। বকশীগঞ্জ এন এম উচ্চ বিদ্যালয়, উলফাতুন নেছা সরকারি বালিকা বিদ্যালয় ও ধানুয়া কামালপুর বিডিআর ক্যাম্পে হানাদার বাহিনী গড়ে তোলে নির্যাতন সেল। সেখানে শত শত মুক্তিকামী মানুষকে ধরে এনে লাইনে দাঁড় করে চোখ বেঁধে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। কামালপুরের সবচেয়ে বড় দুটি বধ্যভূমি বেদখল হয়ে গেছে। এ ছাড়া কামালপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সংলগ্ন বধ্যভূমিটি পুকুর ও বাড়ি করে বেদখল করা হয়েছে। বকশীগঞ্জ এন এম উচ্চ বিদ্যালয়ের উত্তর পাশের বধ্যভূমিটিকে হানাদাররা মৃত্যুকূপ হিসেবে ব্যবহার করত। মৃত্যুকূপ ছাড়াও প্রতিটি বধ্যভূমিতে নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করে একটি গর্তে ১৫/২০ জনকে মাটিচাপা দেয়া হতো। সেখানে দেয়া হয়েছে স্কুলের টয়লেট। বকশীগঞ্জের গরুহাটি বধ্যভূমিতে প্রায় দু'শতাধিক নরনারীকে হত্যা করে গণকবর দেয়া হয়েছে। সেই গণকবরগুলো অবহেলিত হয়ে পড়ে রয়েছে। শুধু ধানুয়া কামালপুরের বর্তমান বিজিবি ক্যাম্পের আশপাশের এলাকায় অর্ধশতাধিক গণকবর রয়েছে অবহেলায়। পুরো গণকবর এলাকাটিই জংলায় পরিণত হয়েছে।

অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) : অষ্টগ্রাম উপজেলার দুটি বধ্যভূমি সংরক্ষণ করা হয়নি। উপজেলার দেওঘর ইউনিয়নের পাউনেরকান্দি ও পূর্ব অষ্টগ্রাম ইকরদিয়ার দুটো বধ্যভূমির পাশে দাঁড়িয়ে আজও স্বজনহারা পরিবারের সদস্যরা কাঁদেন। হাওরবেষ্টিত এ উপজেলায় অনেক উন্নয়ন হলেও বধ্যভূমি দুটি সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগে না নেয়ায় মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয়দের মধ্যে চরম হতাশা আর ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পাউনেরকান্দি বধ্যভূমিটি এ থানায় মূল বধ্যভূমি হিসেবে পাকহানাদার বাহিনী ব্যবহার করেছিল। অষ্টগ্রাম থানা আশপাশ এলাকার শত শত নারী-পুরুষকে ধরে এনে হানাদার, আলবদর, রাজাকাররা গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। এ বধ্যভূমি থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় উঠে আসা পূর্ব অষ্টগ্রামের পুকুরপাড়ের মো. আবদুল বাছির মিয়া মৃত্যুর কিছু দিন আগে জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় হঠাৎ একদিন আমাকে ও বাবা আবদুল গুনী মিয়াকে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা বাড়ির সামনে থেকে ধরে নিয়ে যায়। আমাদের অপরাধ ছিল আমার বড় ভাই আবদুল সাহেদ মিয়া মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এবং ছোট ভাই আবদুল মতিন মাস্টার মুক্তিযোদ্ধা। আমাদের সারা দিন থানায় আটক রেখে রাতে আমরাসহ ২২ জনকে হত্যা করার উদ্দেশে আলবদর রাজাকাররা পাউনেরকান্দি বধ্যভূমিতে নিয়ে যায়। গুলি আর বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে রাজাকাররা চলে যায়। কিন্তু গুরুতর আহত অবস্থায় আমাকে এবং আমার বাবাকে ভোরে উদ্ধার করা হয়। পরে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠি। কিন্তু আমার বাবা এরপর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। স্বাধীনতার কিছুদিন পর তিনি মারা যান। স্বাধীনতার পর এ বধ্যভূমিতে হাজার হাজার মানুষের হাড়, কংকাল ও মাথার খুলি পড়ে থাকতে দেখা যায়।

জানা যায়, ৩ সেপ্টেম্বর অষ্টগ্রাম পাকসেনাদের ক্যাম্প থেকে শান্তি কমিটির নেতারা হানাদার আলবদর ও রাজাকাররা লঞ্চ ও নৌকা নিয়ে ভোরবেলা ইকরদিয়া গ্রামে অভিযান চালায়। ঘুমন্ত অবস্থায় ইকরদিয়া দক্ষিণপাড়ায় উঠেই লুটপাট শুরু করে এবং সাড়াপাড়ায় আগুন লাগিয়ে দেয়। দক্ষিণপাড়ায়র দুটি ধনাঢ্য বাড়িতে আগুন দেয়। সঙ্গে চলে লুটপাট ও নির্যাতন। ৪৯ নারী পুরুষকে আটক করে ইকরদিয়া লঞ্চঘাটের কাছে নিয়ে গুলি ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। পুরো গ্রাম লুটপাট এমনকি আগুন নেভার পরও পোড়া টিন পর্যন্ত ওরা নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে শহীদ পরিবারের সন্তান সুধীর দাস ও হরিমোহন দাস জানান, স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে এখানে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ সরকারিভাবে গড়ে উঠার কথা ছিল। কিন্তু এখনও কোনো কার্যকর ভূমিকা দেখি না। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাজী আপ্তাব ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, স্থানীয় প্রশাসন ও নেতাদের উদাসীনতায় বধ্যভূমি দুটি সংরক্ষিত হচ্ছে না।

নান্দাইল (ময়মনসিংহ): নান্দাইল উপজেলার মুশুলী ইউনিয়নের কালীগঞ্জ ব্রিজসংলগ্ন স্থান ও চন্ডীপাশা ইউনিয়নের বারুইগ্রাম মাদ্রাসাসংলগ্ন দুটি বধ্যভূমি আজও অরক্ষিত, নির্মাণ করা হয়নি কোনো স্মৃতিস্তম্ভ। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে দুটি স্থানেই শত শত মানুষকে হত্যা করেছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা। মুক্তিকামী ও সাধারণ মানুষকে ধরে এনে পেছন হাত বেঁধে রেলসেতুতে হাঁটতে বলা হতো। মাঝামাঝি স্থানে যেতেই গুলি করা হতো তাদের। গুলিবিদ্ধ দেহ সেতুর নিচে নদীতে ভেসে যেত। ওই সময় মানুষের বাঁচার চিৎকার মিলিয়ে যেত পাকিস্তানি হানাদারদের গুলির শব্দে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অসংখ্য মানুষকে নৃশংসতা চালিয়ে হত্যা করা হয় ময়মনসিংহের নান্দাইলের কালীগঞ্জ-শুভখিলা রেলসেতুতে। স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও নৃশংসতা চালিয়ে অসংখ্য মানুষকে হত্যার স্থানটি চিহ্নিত করা হয়নি এখনও। স্থাপিত হয়নি কোনো স্মৃতিস্তম্ভ।

নান্দাইল উপজেলার মুশুলী ইউনিয়নের শুভখিলা গ্রাম। নরসুন্দা নদীর কোলঘেঁষা এ গ্রামের ভেতর দিয়ে ভৈরব-ময়মনসিংহ রেললাইন রয়েছে। শুভখিলা গ্রামের প্রায় শেষ প্রান্ত্মে নরসুন্দা নদীর ওপর একটি রেলসেতু রয়েছে। সেতুটি কালীগঞ্জ রেলসেতু নামেই পরিচিত। কিশোরগঞ্জ ও নান্দাইল উপজেলা-লাগোয়া এ সেতুতেই চলে স্বাধীনতাযুদ্ধের বর্বরতা। স্থানটিতে যাওয়ার জন্য ভালো কোনো রাস্ত্মা নেই। নরসুন্দা নদীর কোলঘেঁষে মেঠোপথ ধরে যেতে হয় স্থানীয়ভাবে 'কালীগঞ্জ বধ্যভূমি' নামে পরিচিত স্থানটিতে।

১৯৭১ সালের মার্চে দেশে যুদ্ধ শুরু হলেও এপ্রিলের প্রথমদিকে গ্রামে ঢুকতে শুরু করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যরা। ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল থেকে জামালপুর, ময়মনসিংহ, গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, সোহাগী, আঠারবাড়ি, নান্দাইল, ভৈরব, কুলিয়ারচর, বাজিতপুর, সরারচর, মানিকখালী, গচিহাটা, কিশোরগঞ্জ, নীলগঞ্জ স্টেশন থেকে নিরীহ মানুষকে এনে হত্যাযজ্ঞ চালানো হতো। মূলত ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের পুরুষ ও শিশুদের ধরে এনে কালীগঞ্জ রেলসেতু এলাকায় তাঁবুতে রেখে নির্যাতন শেষে গুলি করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হতো।

নান্দাইল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মাজহারুল হক ফকির বলেন, রেলসেতুটিতে যুদ্ধকালীন পুরো সময় ধরে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। ট্রেনে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এনে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হতো। হাজার হাজার মানুষের হত্যাযজ্ঞ চলে সেতুটিতে। তা ছাড়া বারইগ্রাম মাদ্রাসার কাছের ইটভাটায় শতাধিক মানুষকে হত্যা করে লাশ ফেলে রাখা হয়। দুটি বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হলেও তা অনুমোদন না হওয়ায় বধ্যভূমিগুলোতে কোনো স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা যায়নি।

জলঢাকা (নীলফামারী): আধুনিকতার কোনো ছোঁয়া লাগেনি নীলফামারী জেলার বৃহৎ জলঢাকা উপজেলার একমাত্র কালিগঞ্জ বধ্যভূমিতে। ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল পাকসেনাদের গুলিতে যেখানে প্রাণ দিয়েছিলেন প্রায় ৪ শত হিন্দু পরিবারের নিরীহ মানুষ। বধ্যভূমির ফলকে ৭৮ জন শহীদের নাম জানা গেলেও বাকি শহীদদের নাম আজও রয়েছে অজানা। অজানা শহীদদের নাম উদ্‌ঘাটনসহ বধ্যভূমিটির আধুনিকায়নের জোর দাবি জানিয়েছেন শহীদদের স্বজনসহ এলাকাবাসী।

জলঢাকা উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে গোলনা ইউনিয়নের কালীগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বাজারে অবস্থিত এই বধ্যভূমিটি। দেশ স্বাধীন হওয়ার দীর্ঘদিন পর ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে আব্দুর রউফ এমপি হয়ে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ নির্বাচিত হয়ে সেই সময় তার প্রচেষ্টায় বধ্যভূমিতে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের কিছুদিন পর থেকে স্মৃতি স্তম্ভটি অযত্ন অবহেলায় পরে আছে যা দেখার যেন কেউ নেই। প্রতি বছর বিভিন্ন দিবসে এই স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে অনেক কথা এবং প্রতিশ্রুতি দিয়ে বক্তব্য দেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিসহ আগত অতিথিরা। কিন্তু দিবস চলে গেলে কারোই মনে থাকে না স্মৃতিস্তম্ভটি সংস্কার বা আধুনিকায়নে কোনো প্রক্রিয়া। বুধবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,বধ্যভূমির চার পার্শ্বে ময়লা আবর্জনার স্তুপ, মলমূত্রের দূর্গন্ধ ও স্মৃতিস্তম্ভের সীমানাপ্রচীর ঘেঁষে মাংস বিক্রির দোকান, ঢাকার কোচের টিকিট কাউন্টারসহ বিভিন্ন দোকানপাট যা স্মৃতিস্তম্ভটিকে ঘিরে রেখেছে। বর্তমান সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে বধ্যভূমিগুলো যখন খুঁজে বের করে সংস্কার, মেরামত এবং কমপেস্নক্স নির্মাণ করছে। নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলায় এর ব্যতিক্রম। একমাত্র বধ্যভূমিটির মেরামত ও সংস্কারে নজর দিচ্ছে না কেউই।

সেদিনের গণহত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী শহীদ হেমন্ত শীলের ছেলে কমলাকান্ত শীল জানান, যুদ্ধের সময় আমরা পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন বালাগ্রাম হতে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে ভারতে যাওয়ার পথে কালিগঞ্জে জড়ো হই। কিন্তু সেখানে পাকসেনাদের ৭টি গাড়ী এসে আমাদেরকে আটক করে এবং ছেলে বুড়ো, শিশু মহিলাদের আলাদা করে। তারপর বুড়ো ও যুবকদের একসাথে সারিবদ্ধ করে দাঁড় করায় ও নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। সে সময় আমি শিশুদের দলে থাকায় বেঁচে গেছি। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহঃ রাশেদুল হক প্রধান এ প্রতিবেদককে জানান, 'স্মৃতিস্তম্ভটি সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যে সংশিস্নষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে প্রকল্প গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আশা করছি, আগামী ২৬ মার্চের মধ্যেই বধ্যভূমিটিতে একটি দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা সম্ভব হবে।'

সূত্র : যায়যায়দিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়