শিরোনাম
◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক ◈ বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের বাউন্ডারি ভেঙে বাস ঢু‌কে প্রকৌশলী নিহত ◈ জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন ◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ ভেটোর তীব্র নিন্দা,মার্কিন নীতি আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লংঘন : ফিলিস্তিন ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৯:১৭ সকাল
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৯:১৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

উচ্চশিক্ষায় উপবৃত্তির টাকা নয়ছয়

ডেস্ক রিপোর্ট : উচ্চশিক্ষায় উপবৃত্তির টাকা বিতরণে নানা অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। চূড়ান্তভাবে উপবৃত্তির জন্য নির্বাচিত হলেও অসংখ্য শিক্ষার্থী উপবৃত্তির টাকা পাননি। কেউ কেউ প্রথম কিস্তির টাকা পেলেও পরের কিস্তির টাকা পাননি। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে এই উপবৃত্তির অর্থ বরাদ্দ দেয়া হতো। প্রকল্প শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে দুর্নীতির এসব চিত্র উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনটি তৈরি করতে রংপুর, লালমনিরহাট, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে আইএমইডির কর্মকর্তারা।

তারা দেখতে পান, রংপুরের কাউনিয়া ডিগ্রি কলেজ, লালমনিরহাট সরকারি কলেজ, লালমনিরহাট নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসা, লালমনিরহাট আদর্শ ডিগ্রি কলেজের মোট ১২৩ জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তির টাকা পাননি। প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য বছরে ৪ হাজার ৯০০ টাকা বরাদ্দ ছিল।

এ হারে এসব শিক্ষার্থী তিন বছরে ১৮ লাখ আট হাজার ১০০ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও তারা তা পাননি। এ চিত্র থেকে স্পষ্ট সারাদেশের ১ হাজার ১৮১টি ডিগ্রি কলেজ ও ১ হাজার ৫৪টি ফাজিল মাদ্রাসায় উপবৃত্তির টাকা বিতরণে ভয়ংকর দুর্নীতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে।

উপবৃত্তির টাকা বিতরণে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের চরম অসহযোগিতা ছিল উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপবৃত্তির টাকা বিতরণে শিক্ষার্থী, প্রতিষ্ঠান প্রধান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও প্রকল্প কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল। উপজেলা বা কলেজভিত্তিক বিতরণকৃত টাকা ও শিক্ষার্থীর সংখ্যার তথ্য দিতে পারেনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। উপবৃত্তি পাওয়ার শর্ত ভঙ্গ অর্থাৎ শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতির হার কম, ড্রপআউট, বিবাহ হলে তাদের বাদ দিয়ে নতুন শিক্ষার্থী ঠিক করার বিষয়টি ছিল জটিল ও সময়সাপেক্ষ।

এরপর খোঁজ নেয়া হয় কুড়িগ্রামে। এ জেলার রাজারহাট উপজেলার দুর্গম বিদ্যানগর চরের হতদরিদ্র পরিবারে সন্তান হেলেনা খাতুন। উচ্চশিক্ষা শেষ করে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে ঋণ করে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ হেলেনা খাতুনদের মতো স্নাতক (পাস) ও সমমানের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় সহযোগিতা করতে সরকার উপবৃত্তি প্রকল্প চালু করে। কিন্তু প্রকল্পের ও ডাচ-বাংলা ব্যাংকের কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা না দিয়ে কোটি কোটি টাকা লুট করেছেন।

হেলেনা খাতুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপবৃত্তির টাকা দিয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে রংপুরের কাউনিয়া ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন। ডিগ্রি প্রথম বর্ষে ৪ হাজার ৯০০ টাকা পেলেও পরের বছর আর পাননি। আড়াইশ টাকা মাসিক শোধে ৫ হাজার টাকা ঋণ করে ফরম পূরণ করেছেন। এখন পর্যন্ত ঋণ শোধ করতে পারেননি।

তিনি আরও বলেন, ৫০ মিনিট হাঁটার পর ৫০ টাকা অটোরিকশা ভাড়া দিয়ে কলেজে যেতে হয়। টাকার অভাবে এখন কলেজেও যেতে পারছেন না। বাবার পক্ষে তার খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। উপবৃত্তির টাকা না পেলে ডিগ্রি পাস করা সম্ভব হবে না। শুধু হেলেনা খাতুনই নয়, একই কলেজের শিউলী খাতুন, রেখা রানী, মো. শামীম মিয়াসহ ৬০ জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তির টাকা পাননি।

জানতে চাইলে রংপুর কাউনিয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মুসা আহমেদ বলেন, তার কলেজের ৬০ জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তির জন্য নির্বাচিত হলেও টাকা পায়নি। ডাচ-বাংলা ব্যাংকে যোগাযোগ করলে দিচ্ছি দিচ্ছি বলেও শেষ পর্যন্ত দেয়নি। শিক্ষার্থীরা তার কাছে এলেও তাদের টাকা দিতে পারেননি।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে একটি চক্র শিক্ষার্থীদের টাকা লুট করেছে। টিউশন ফি বাবদ শিক্ষার্থী প্রতি মাসে তাদের ৪৫ টাকা দেয়ার বিধান থাকলেও দেয়নি। আগে সরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা দেয়া হতো। কর্মকর্তারা কলেজে এসে শিক্ষার্থীদের টাকা দিয়ে যেতেন। তখন কোনো দুর্নীতি হয়নি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রকল্প প্রস্তাব (পিপি) অনুযায়ী ওই এলাকায় ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর ভাতা বাবদ ৪৯ লাখ ১৬ টাকা থোক বরাদ্দের বিপরীতে ৫৩ লাখ ৬ হাজার টাকা খরচ করা হয়। এছাড়া ওয়ার্কশপ, উপবৃত্তির আবেদন ফরম ও লিফলেট ছাপা, ডাটা এন্টি অ্যান্ড প্রসেসিং, আউট সোর্সিং কর্মচারীদের বেতন, অফিস যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ সরঞ্জামাদি কিনতে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে।

প্রতিবেদনে উপবৃত্তি বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট হতে টাকা দেয়াসহ ভবিষ্যতে উপবৃত্তির টাকা বিতরণের সঙ্গে জড়িতের সমন্বয় জোরদার করা, কারিগরি ত্রুটি সমাধান, উপবৃত্তি বিতরণে ব্যাংকের হেল্প ডেস্ক চালু করা এবং বৃত্তির সুফল নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এই প্রকল্পের পুরো মেয়াদে পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন অধ্যাপক সৈয়দ মো. মোজ্জাম্মেল হক। প্রকল্পের দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শিক্ষর্থীরা উপবৃত্তির টাকা পায়নি এমন কোনো তথ্য তার কাছে নেই। কেউ অভিযোগও করেনি। পরীক্ষায় খারাপ ফল ও ক্লাসে অনুপস্থিতির কারণে হয়তো কোনো শিক্ষার্থী বাদ গেছে।

অধ্যক্ষরা লিখিত অভিযোগ করেও টাকা পাননি, এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের কর্মকর্তারাও দুর্নীতি করেননি। ব্যাংকে জমা থাকা টাকা তাদের ফেরত দিয়েছেন। তার প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টে জমা দিয়েছেন।

প্রতিবেদনে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালককে অর্থ দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. ওয়াহিদুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত সপ্তাহে তিনি স্নাতক পর্যায়ে উপবৃত্তি প্রকল্পের মূল্যায়ন প্রতিবেদন পেয়েছেন। সেখানে অর্থ সংক্রান্ত কিছু অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

তিনি আরও বলেন, এ প্রকল্পের অর্থ প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য। কেউ যদি বণ্টনে অনিয়ম করে তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, শিক্ষার্থী ভর্তির হার বৃদ্ধি, চাকরির সুযোগ ও উপার্জন ক্ষমতা বাড়ানো, ছোট পরিবার ও জন্মহার নিয়ন্ত্রণ, দারিদ্র্য বিমোচন করা, জেন্ডার সমতা ও ক্ষমতায়ন অর্জন ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করতে সরকার স্নাতক (পাস) পর্যায় উপবৃত্তি প্রকল্প চালু করে। এর ব্যয় ধরা হয় ৩৪২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

২০১১ সালের জুলাই থেকে গত বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বৃত্তিপ্রাপ্ত স্নাতক (পাস) পর্যায়ের একজন শিক্ষার্থীর জন্য টিউশন ফি, বই-পুস্ত্মক ক্রয় ও পরীক্ষার ফি বাবদ বার্ষিক ৪ হাজার ৯০০ টাকা বরাদ্দ ছিল। প্রকল্পটি শেষ হলে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকেই উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে।

সূত্র : যায়যায়দিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়