শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৮:৩৩ সকাল
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৮:৩৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কর ফাঁকি দিয়ে বাগান থেকেই চা বিক্রি হচ্ছে

ডেস্ক রিপোর্ট : বাগানে উৎপাদিত চা নিয়ম অনুযায়ী বন্ডেড ওয়্যারহাউজে জমা রাখা হয়। এরপর চা বোর্ডকে উৎপাদনের পরিমাণ জানিয়ে নিলামে তুলেই বিক্রি করতে হয় তা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রাজস্ব ফাঁকি দিতে সরাসরি বাগান থেকেই চা বিক্রি করে দিচ্ছেন মালিকরা। এতে একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছেন নিলাম থেকে চা ক্রয়কারী ব্যবসায়ীরা।

২০১৬ সালে বিভিন্ন বাগানে উৎপাদিত চায়ের পরিসংখ্যান তদন্ত করে চা বিক্রিতে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে চা বোর্ড। প্রাথমিক তদন্তে দেশের আটটি বাগানের বিরুদ্ধে সরাসরি চা বিক্রির মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে। ফলে বাগানগুলোকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ১ শতাংশ উপকর ও উপকরের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা হিসেবে পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে চা বোর্ড। এরই মধ্যে পাঁচটি বাগানের কর্তৃপক্ষ জরিমানাসহ ফাঁকি দেয়া রাজস্ব জমা দিয়েছে। বাকি তিনটি বাগানের মালিককে চিঠি দেয়া হলেও তারা এখনো ফাঁকি দেয়া রাজস্ব ও জরিমানার অর্থ জমা করেননি।

চা বোর্ডকে না জানিয়ে ওই আটটি বাগান থেকে পাঁচ লাখ কেজির কিছু বেশি চা সরাসরি বিক্রি করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাগান মালিকরা সরকারের মোট ১ কোটি ৪১ লাখ ৪৯ হাজার ৪৮৬ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন।

চা বোর্ডের তথ্যানুসারে, সরাসরি বাগান থেকে চা বিক্রি করে হবিগঞ্জের ইমাম চা বাগান ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৮৯২ টাকা, বাওয়ানি চা বাগান ৬ লাখ ৭২ হাজার ৪৩০, মৌলভীবাজারের কালিটি চা বাগান ৩৮ লাখ ২২ হাজার ৮৬১, হাজিনগর চা বাগান ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৭৮, মৌলভী চা বাগান ৪১ লাখ ৫২ হাজার ১৪, এম আর খান চা বাগান ৩২ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬১, নন্দরানী চা বাগান ১৩ লাখ ৪২ হাজার ৩৬৫ ও আতিয়াবাগ চা বাগান ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৮৫ টাকা কর ফাঁকি দিয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে চা বোর্ড।

অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় সর্বশেষ বছরের নিলামে বিক্রি করা চায়ের সর্বোচ্চ দরের হিসাবে এসব বাগানকে মোট ১৭ শতাংশ রাজস্ব পরিশোধের চিঠি দিয়েছে চা বোর্ড। এরই মধ্যে পাঁচটি বাগান জরিমানাসহ ফাঁকি দেয়া রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা দিলেও এম আর খান ও নন্দরানী চা বাগান কর্তৃপক্ষ এখনো চা বোর্ডের ঘোষণা অনুযায়ী অর্থ জমা দেয়নি।

দেশে ১৬৬টি বাগানের মধ্যে বর্তমানে উৎপাদনে রয়েছে ১৬২টি। নিলামে বিক্রি হওয়া চায়ে সরকারকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ১ শতাংশ উপকর প্রদান করতে হয়। এছাড়া নিলামে বিক্রীত চা থেকে ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠান বিক্রয়মূল্যের ১ শতাংশ কমিশন কেটে রাখে। এ কারণে অতিমুনাফা তুলে নিতে সরাসরি বাগান থেকে চা বিক্রির কৌশল নিয়েছেন মালিকরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রফতানি অনুবিভাগ) মো. আব্দুর রউফ বলেন, বাংলাদেশ চা উৎপাদনে অনেক দূর এগিয়েছে। সরকার চাহিদা অনুযায়ী চা উৎপাদন বাড়াতে নানামুখী কার্যক্রম চালু করেছে। তবে কিছু কিছু বাগান রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করছে। এ কারণে চা বোর্ডও বাগানগুলোর ওপর তদারকি বাড়াচ্ছে।

বগুড়ার শাফিয়া আশরাফ আলীর মালিকানাধীন প্লান্টেশন অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। তিনটি চা বাগান রয়েছে গ্রুপটির মালিকানায়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে ব্যবসায়িক মন্দায় গ্রুপটির চা বাগান পরিচালনা কার্যক্রম নাজুক হয়ে পড়েছে। ২০১৬ সালে গ্রুপটির বিভিন্ন বাগান থেকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চা বিক্রির অভিযোগ ওঠে। এরপর চা বোর্ড অনুসন্ধান চালিয়ে গ্রুপটির আতিয়াবাগ চা বাগানের অনিয়ম খুঁজে পায়। এজন্য বাগানটিকে ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৮৫ টাকা জরিমানা প্রদানের নোটিস দেয়া হলেও তা পরিশোধ করেনি বাগান কর্তৃপক্ষ। প্লান্টেশন গ্রুপের অন্য দুই চা বাগানের মধ্যে রয়েছে সোনারুপা ও দামাই চা বাগান।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় অবস্থিত কালিটি চা বাগানের ফাঁকি দেয়া রাজস্বের ৩৮ লাখ ২২ হাজার ৮৬১ টাকা পরিশোধ করেছে কর্তৃপক্ষ।

বাগানটির ম্যানেজার রবিউল হাসান বলেন, চা বোর্ড প্রথমবারের মতো অবৈধভাবে চা বিক্রির অভিযোগে আমাদের বাগানকে অভিযুক্ত করেছে। এরই মধ্যে চা বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী জরিমানাসহ সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করেছি। আগামীতে চা বোর্ডকে না জানিয়ে চা বিক্রি করব না।

২০১৬-১৭ মৌসুমে দেশের বিভিন্ন বাগানে উৎপাদিত চা নিলামে ১ হাজার ৪৭৬ কোটি ২৪ লাখ ৮২ হাজার ৮৯৭ টাকায় বিক্রি হয়। বিক্রি হওয়া চায়ে সরকার মোট ২৩৬ কোটি ১৯ লাখ ৯৭ হাজার ২৬৪ টাকা রাজস্ব আয় করে।

সারা দেশের বিভিন্ন বাগান প্রত্যন্ত এলাকায় হওয়ায় বাগানগুলোয় চায়ের উৎপাদনচিত্র সরাসরি তদারক করা সম্ভব নয়। এর পরও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময় চা বাগানগুলোয় অভিযান পরিচালনার সুযোগ রয়েছে। এ ধরনের কার্যক্রম ধরে রাখা গেলে বৈধ পথে চা বিক্রির মাধ্যমে চা উৎপাদন খাতে সরকার দ্বিগুণ রাজস্ব আয় করতে পারবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি চা মোড়কজাতকারী কোম্পানির ব্র্যান্ডিং বিভাগের কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, দেশের অধিকাংশ চা বিপণন কোম্পানি সরকারি সব ধরনের শুল্ক পরিশোধ করে নিলাম থেকেই চা ক্রয় করে। কিন্তু বাগান মালিকরা বিভিন্ন সময় অবৈধ উপায়ে বাগান থেকেই চা বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে বৈধ উপায়ে চা সংগ্রহকারী কোম্পানিগুলো অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে যায়, যা দেশের চা শিল্পের জন্য ক্ষতিকর। এ অবস্থায় চা বোর্ডসহ সরকারকে বাগান থেকে চা পাচার রোধে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। না হলে চা শিল্পে অস্থিরতা তৈরি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

এ বিষয়ে চা বোর্ডের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সারা দেশের বিভিন্ন বাগান অবৈধভাবে চা বিক্রি করে। কিন্তু সরাসরি প্রমাণ না পেলে চা বোর্ড ব্যবস্থা নিতে পারে না। আমরা ২০১৬ সালের চা উৎপাদন ও নিলামে বিপণনের চিত্র পর্যালোচনায় অনিয়ম খুঁজে পেয়েছি কয়েকটি বাগানে। চলতি বছরও সারা দেশের বিভিন্ন বাগানের চা উৎপাদন ও নিলামে উত্তোলনের মাধ্যমে রাজস্ব প্রদানের তথ্য কঠোর মনিটরিংয়ে রাখা হয়েছে। বণিক বার্তা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়