ডেস্ক রিপোর্ট : সন্ধ্যার আগেই বাসার দরজা-জানালা বন্ধ করা হয়। কিন্তু পড়তে বসলেই মশা কামড়াচ্ছে বলে একটু পরপর মেয়ের অভিযোগ। আবার মশারির ফাঁক গলে ঢুকে পড়া মশা মারতে গিয়ে রাতের ঘুম নষ্ট।
বলছিলেন মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ মিরপুরের ৬ নম্বরের বাসিন্দা ফারহানা রহমান।
শুধু ফারহানার পরিবার নয়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে তারাও মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। তারা বলেন, দিন শেষ হতে না হতেই কানের কাছে মশার শোঁ শোঁ শব্দ শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিলে বসতে পারে না। ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটে।
এ বছরের মাঝামাঝি রাজধানীতে এডিস মশাবাহিত রোগ চিকুনগুনিয়ায় বিপুলসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়। তখন চিকুনগুনিয়া ঠেকাতে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ চোখে পড়ে। চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ কাটতে না কাটতেই রাজধানীতে মশার প্রকোপ বাড়ায় আতঙ্কিত অনেক নগরবাসী।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউম্যাটোলজি বিভাগ চিকুনগুনিয়া-পরবর্তী চিকিৎসা দিতে গত ১৩ আগস্ট আথ্রাইটিস ক্লিনিক চালু করে। এ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিনহাজ রহিম চৌধুরী বলেন, ‘শহরবাসী কিন্তু বিপদমুক্ত নয়। আবার মশা বাড়ছে। এখনই প্রতিরোধ না করা হলে পুনরায় বড় ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা হতে পারে। মশা থেকে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার পাশাপাশি মানুষ জিকা ভাইরাসেও আক্রান্তহতে পারে।’
গ্রিন রোডের বাসিন্দা রাজীবুল ইসলামের পরিবারের পাঁচজনেরই চিকুনগুনিয়া হয়েছিল। তার মা লিপি বেগম এখনো চিকুনগুনিয়া-পরবর্তী সমস্যায় ভুগছেন। মশার প্রকোপ বাড়ায় বেশ চিন্তায় আছে পরিবারটি। এ পরিবারের নতুন সদস্যকে মশা থেকে বাঁচাতে লিপি বেগম সারা দিনই মশারি টানিয়ে রাখেন।
রাজধানীতে মশার প্রকোপের প্রভাব পড়েছে মশারি ও কয়েলের বাজারেও। গত মাসের তুলনায় বিক্রি বেশ বেড়েছে। মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের পাইকারি বাজারের বিক্রেতা রহমত উদ্দিন বলেন, গত কয়েক দিনে কয়েল বিক্রির হার ৫০ শতাংশ বেড়েছে। আবার, শেওড়াপাড়ার মা জেনারেল স্টোরের মো. আলামিন বলেন, খুচরা কয়েল বিক্রি অনেক বেশি। কারওয়ান বাজারের মশারি বিক্রেতা জহির হোসেন বলেন, তাঁদের বিক্রি বেড়ে গেছে।
মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন ঠিকমতো ওষুধ ছিটায় না বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেকে অভিযোগ করেন, মাঝেমধ্যে প্রধান সড়কে বিকেলে ওষুধ ছিটানো হয়। কিন্তু গলিতে দেওয়া হয় না।
উত্তর শাহজাহানপুরের বাসিন্দা জয়নাল উদ্দিন বলেন, ‘কী স্প্রে করে, খালি শব্দই হয়। মশা মরে না। আগে তো অনেক ধোঁয়া হতো। এখন দেখি তা-ও কম।’
মশার প্রকোপ নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাকির হাসান বলেন, নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি মশা নিয়ন্ত্রণে গত অক্টোবর ও নভেম্বরে বিশেষ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এতে মশা নিয়ন্ত্রণে ওষুধ ছিটানোর পরিমাণ দ্বিগুণ করা হয়। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, নালাগুলো অপরিষ্কার। আবার অনেক মানুষ সচেতন নন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতাকেও একটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মীর মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মশা নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যে একটি ক্রাশ কর্মসূচি চালানো হয়েছে, যেখানে একটি অঞ্চলে ডিএসসিসির সব লোকবল একসঙ্গে কাজ করেছে। প্রয়োজন হলে আরও বাড়তি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
গত আগস্টে মশার প্রকোপ কমাতে ৪৫০ কিলোমিটার নর্দমায় গাপ্পি মাছের পোনা ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। কিন্তু এখনো এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব ড্রেন গাপ্পি মাছ ছাড়ার উপযোগী নয়। কারণ মাছ ছাড়লেই হবে না, এর পরিচর্যার বিষয়টিও আছে। আগামী মার্চ মাস নাগাদ পরীক্ষামূলকভাবে কিছু ড্রেনে গাপ্পি মাছ ছাড়া হবে। উদ্যোগটি সফল হলে তখন এর ব্যাপকতা বাড়ানো হবে।’
সূত্র : প্রথম আলো
আপনার মতামত লিখুন :