রাশিদ রিয়াজ : জেরুজালেম নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণার পর সৌদি রাজকীয় আদালত স্থানীয় মিডিয়ার ওপর এক ডিক্রি জারি করে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত কোনো খবর প্রকাশ না করার জন্যে জানায়। এ তথ্য দিয়েছে আল-আরাবি আল-জাদিদ। এমনকি সৌদি ও বাহরাইনের দূতাবাস জর্ডানের আম্মামে স্থানীয় নাগরিকদের জেরুজালেমকে ট্রাম্পের ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা নিয়ে কোনো ধরনের প্রতিবাদ কিংবা বিক্ষোভ না করার নির্দেশনা দিয়েছে।
এদিকে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে বিশ্ব জুড়ে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও বিতর্কের মুখে পড়েছেন সেব্যাপারে জুম্মার খুৎবায় কোনো কথাই বলেননি মক্কা ও মদিনার ইমাম। এর আগে সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা নাজায়েজ ফতোয়া দিলে সারাবিশ্বে নিন্দার ঝড় উঠলেও ইসরায়েল একে স্বাগত জানিয়ে গ্রান্ড মুফতিকে দেশটি সফরে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলে, তিনি গেলে সর্ব্বোচ্চ পুরস্কারে ভূষিত করা হবে।
ওই নির্দেশিকায় বলা হয় জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে ট্রাম্পের ঘোষণা সম্পর্কিত খবরের পরিবর্তে ইরান ও অন্যান্য আঞ্চলিক খবরকে প্রাধান্য দিতে হবে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে সৌদি শাসকরা পাছে বিব্রত হতে পারেন। গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের এক মন্ত্রী দাবি করেন আরব নেতাদের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেয়েই ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। ইসরায়েলের চ্যানেল টেনকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে দেশটির মন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এমন দাবি করে বলেন, মার্কিন প্রশাসন আরব দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় ও আলোচনার মাধ্যমেই ট্রাম্পের ওই ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়েছিল।
ট্রাম্পের এ ঘোষণায় সৌদি আরবের অবস্থান সম্পর্কে কাৎজ আরো দাবি করেন, ইরানের বিপক্ষে আরব দেশটি বুঝেশুনেই ইসরায়েলের সঙ্গে নিরাপত্তার স্বার্থে হাত মিলিয়েছে। সৌদি আরব ও আমিরাত ইরানের বিপক্ষে দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের সঙ্গে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। তবে ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক থাকার কথা সৌদি আরব এখনো অস্বীকার করে আসছে।
১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তি অনুসারে পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী করার বিষয়টি ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেই নেওয়া হয় যা ট্রাম্পের সাম্প্রতিক ঘোষণায় ঘোর গুরুতর বিপদজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। পুর্ব জেরুজালেম ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে নির্ধারণ করে দুই রাষ্ট্র ভিত্তিক যে ফর্মুলায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়া থমকে আছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণার পর জাতিসংঘ থেকে বড় বড় রাষ্ট্রগুলো এর নিন্দা জানালেও মুসলিম বিশ্বের পবিত্র দুই মসজিদের ইমাম খুৎবায় কোনো কথাই বলেননি। অথচ খুৎবার রেওয়াজ চালুই হয়েছিল গুরুত্বপূর্ণ কোনো সমস্যার দিক নির্দেশনা দেওয়ার জন্যে।
মিডিল ইস্ট মনিটর আরবি অনলাইন মিডিয়া শিহাব.পিএস’এর উদ্ধৃতি দিয়ে এক প্রতিবেদনে বলেছে, জুম্মার খুৎবায় মক্কা ও মদিনা মসজিদের দুই ইমাম আল-আকসা মসজিদ বা জেরুজালেম প্রসঙ্গ নিয়ে কোনো কথাই বলেননি। মক্কা ও মদিনা মসজিদের পরই আল-আকসা মসজিদ ইসলামে তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ।
মক্কা মসজিদের ইমাম শায়েখ মাহের মুয়েকিলি যদিও তার জুম্মার খুৎবায় বলেন, সৌদি বাদশাহ ফিলিস্তিনি জনগণের আইনগত অধিকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বাদশাহ ও অন্যান্য মুসলিম দেশের নেতাদের ইসলামের জন্যে তাদের ভূমিকার প্রশংসা করেন। কিন্তু জেরুজালেম প্রসঙ্গ নিয়ে কোনো বক্তব্য দেননি।
এদিকে মদিনায় মসজিদে নববির ইমাম শায়েক আব্দুল্লাহ আল-বুয়েজান তার খুৎবায় জেরুজালেম নিয়ে কোনো বক্তব্য রাখেননি। এর পরিবর্তে তিনি সারাবছর জুড়ে ঋতু পরিবর্তনের মধ্যে আল্লাহর অলৌকিক ঘটনাগুলো নিয়ে আলোচনা করেন।
যেখানে আন্তর্জাতিক বিশ্বে ট্রাম্পের এধরনের ঘোষণায় তীব্র প্রতিবাদ চলছে তখন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর এধরনের নিরবতার পেছনে আসল রহস্যের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে মিসর ও সৌদি আরবের সমঝোতার মধ্যে দিয়েই ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা দিয়েছেন। এমনকি পূর্ব জেরুজালেমের বিকল্প কোনো গ্রামকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে গ্রহণ করার জন্যে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের ওপর কঠোর চাপ প্রয়োগ করছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো।
আপনার মতামত লিখুন :