শিরোনাম

প্রকাশিত : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৫:০৯ সকাল
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৫:০৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অপু-সাকিব, রুপাািল পর্দার বিষফল

অজয় দাশগুপ্ত : সামাজিক মিডিয়ার যুগে গোপন কথাটি রবে না গোপনে। যখন যেখানে যা ঘটে চাউড় হতে সময় লাগে না। আমাদের দেশের চলচ্চিত্র শিল্প যে ভালো নেই সেটা আমরা সবাই কমবেশি বুঝি। একটা সময় ছিল আমরা সিনেমা হলের সামনে ঘুরে বেড়ালেও মনে করতাম জীবন সার্থক। সেইদিন আজ বিগত। দেশে সিনেমা হলগুলো আলু-পটলের আড়ত হয়ে গেছে। নামকরা হলগুলো কালের বির্বতনে আজ অন্য চেহারা ধারণ করেছে। ঢালাওভাবে শুধু ভালো সিনেমার অভাব বা খুলে যাওয়া ডিজিটাল জগৎকে দায়ী করে পার পাওয়া যাবে না। পাশের বাংলায় আবার নতুন জোয়ার এসেছে বাংলা সিনেমায়। সৌমিত্র বা ধৃতিমান কিংবা অর্পণা সেনের মতো অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ফিরে এসেছেন রুপালি পর্দায়। তাদের অভিনয় আর শিল্পগুণে সিনেমা এখন ফিরে পাচ্ছে হারানো জায়গা।
আমাদের দেশে চলচ্চিত্রের স্বর্নযুগ ছিল রাজ্জাকময়। কবরী-শাবানা-ববিতার পাশাপাশি আনোয়ার হোসেন, রোজী, সৈয়দ হাসান ইমাম গোলাম মোস্তফাদের কথা ভোলা যাবে না কোনোদিন। অভিনয়ের একটা শুদ্ধধারা তৈরি করেছিলেন তারা। কালক্রমে নাটক ও ছোটপর্দার মানুষেরা সে ধারাটিকে এগিয়ে নিয়ে গেলেও নায়ক আর জন্মায়নি। এইযে নায়কের অভাব বা নায়কোচিত নায়কের সংকট এটা কি খালি সিনেমায়? সিনেমা তো সমাজের দর্পণ।

আপনি ইরানি সিনেমা দেখুন, দেখবেন বসরার গোলাপ বা ধর্মীয় পোশাকের সুবাস পাচ্ছেন। হলিউড দেখুন, আপনার মন চলে যাবে বাদামী চোখের স্বল্পবসনা নায়িকার কাছে। আপনার হিরো খোঁচা দাড়িতে মাথায় টেক্সাস টুপি লাগিয়ে আপনাকে নিয়ে যাবে আরেক দুনিয়ায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের ধারা কোনোটি? একসময় আমরা গ্রাম বাংলার নামে কথ্য ভাষায় কথা বলা আর লোকজ গান গাওয়া নায়ক নায়িকাকে প্যাটার্ন ধরে নিলেও এখন আর তা নেই। এখন দূর গ্রাম বা একেবারে প্রত্যন্ত এলাকায় ও আছে ডিশের লাইন। আছড়ে পড়ছে ভারতের অপসিনেমা বস্তাপচা নাটক আর সিরিয়াল। এই সিডনিতে কথা কাজে ঘোর ভারতবিরোধী এক বন্ধু এখন মজে আছে জি বাংলায়। তিনি আবার লাইভ ছাড়া দেখেন না। বোঝেন তবে রাতকে দিন দিনকে রাত বানিয়ে সময়ের ব্যবধান ঘুচিয়ে মজে আছেন জি বাংলার নাটকে। এমন বাস্তবতা দেশে দেশের বাইরে বলেই আমাদের হিরো হিরোইনেরা জেনে গেছেন স্ক্যান্ডাল ব্যতীত লাইমলাইটে আসার পথ খোলা নেই।সমাজের যেসব রোগ সেগুলো তাদের ও আক্রমণ করেছে বৈকি। সম্প্রতি সাকিব খান আর অপু বিশ্বাসকে নিয়ে যে হৈ চৈ বা তাদের যে বাদানুবাদ তাতে ভাগ হয়ে যাওয়া আমাদের মানসিকতা দেখে কেমন জানি লজ্জা লাগছে। প্রথম কথা হলো সাকিব খানকে আমি কয়েকবার হিন্দি সিনেমার নায়কদের অনুকরণে নাচ করতে দেখা ছাড়া আর কোথাও দেখিনি।

আর অপু বিশ্বাস যে নায়িকা সেটা তার বিবাহ সংক্রান্ত জটিলতা সামনে না এলে জানতামই না। সেলিব্রেটিদের জীবন নিয়ে দেশে দেশে কত ঘটনা ঘটে। সেগুলো মানুষকে আকর্ষণ করে। তারা দলে দলে ভাগ হয়ে নিজেদের দিকে লড়াই করে। কিন্তু এদের বেলায় উল্টো। মানুষের আগ্রহ আছে কি নেই সেটা বিষয় না। বিষয় তাদের জীবন নিয়ে দেশ ও সমাজকে ভাবতে বাধ্য করা। খবরে দেখলাম অপু নাকি ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন। এখন বলছেন, তাকে জোর করে তা করানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাওয়ার খবরও দেখলাম। কী অসভ্য মেয়েরে বাবা। বিয়ের জন্য জাত বিসর্জন বা প্রেমের জন্য ধর্মান্তরিত হয়ে এখন বিচার চাইছে? তাকে কেউ একথাটা কেন বলছে না, যদি সাকিবের সঙ্গে তার মনোমালিন্য বা মনকষাকষি না হতো সে কি এগুলো বলত? নিজের ইচ্ছে আর নিজের মর্জিকে বিপদে পড়ে সমাজের বলে চালিয়ে দেওয়া একটা রোগ। এটা যারা করে তারা নিজেদের অপমান ছাড়া আর কিছুই পায় না। অপু বিশ্বাস বলেছে তার পিতা নাকি এ নিয়ে মনো কষ্টে চলে গেছেন। এ দিনে বোধোদয় হওয়ার জন্য এই মেয়েটিকে পিতা মাফ করলেও মানুষ করবে? মূল কথা এইযে প্রবণতা এবং ইচ্ছেমতো জীবন বদলানো সেখানেই আসলে সমাজ আটকে আছে। অন্যদিকে সাকিবকে যতটুকু বুঝলাম প্লেবয় টাইপ।

ওই যে বলছিলাম দেশে অভিনয়ের আর কোনো দরকার পড়ে না এখন। এটা যে একটা শিল্প এর জন্য যে মেধা ও চর্চার দরকার হয় সেটা আর মানে না কেউ। কোনোরকমে পর্দায় এসে পড়লেই হলো। হিট হলে তো আর কথাই নেই।
এরা যেভাবে হোক সেলিব্রেটি বলেই এত মিডিয়া কভারেজ পেয়েছে। বাস্তবে দেশে এমন অপু সাকিব ভুরি ভুরি। এর সঙ্গে ধর্ম অধর্ম বা ন্যায়নীতির কোনো সম্পর্ক নেই। বলগাহীন জীবন আর বোধহীন জীবনযাপনের সমাজে মানুষ এভাবেই চলছে। বিপদে পড়লে প্রধানমন্ত্রী বাঁচাবেন এটাই বা কেমন কথা? দেখুন অপু কিন্তু ঈশ্বরের কাছে বিচার চায়নি। কারণ সে জানে স্বেচ্ছায় ঈশ্বর ছেড়ে আসা কাউকে হয়তো তিনি মাফ করবেন না। আর করলেও তা সময়ের ব্যাপার। সাকিব অপুর এই কাহিনী দেখতে দেখতে রোজ মনে হয় কি জানছে আমাদের সন্তানেরা? কি শিখছে তারা? যে এভাবেই বড় হওয়া যায়? আর এভাবে চললেই আসা যায় লাইমলাইটে? বাচ্চাটার ছবিটা দেখে শুধু বাচ্চাটার জন্যেই মায়া জমেছে বুকে। জীবনের শুরুতেই মা বাবার এই বিচ্ছেদ এবং ভালোবাসাহীন বিয়ের পরিণতি বাচ্চাটিকে কি আসলে ভালোভাবে বড় হতে সাহায্য করবে?

ওই যে বলছিলাম আমাদের দেশের রিয়েল হিরো রাজ্জাক-উজ্জ্বল-বুলবুল আহমেদ-আনোয়ার হোসেন-গোলাম মোস্তফা কিংবা আরও যারা ছিলেন তাদেরও জীবন ছিল। প্রেম ছিল। ঘটনা ছিল। উত্তম কুমারের আরেকটি বিয়ের খবর সুচিত্রা সেনের সঙ্গে মধুর সম্পর্কের খবর মধুময় হয়েই আসত মানুষের কাছে। তাতে এমন কদর্যতা বা বিষ ছিল না।সাকিব অপুর এই বিষময় সম্পর্ক চলচ্চিত্রের কি লাভ লোকসান করবে জানি না তবে তারুণ্যের মনে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে সেটা ভেবেই বলি, এসব বিষয়ে ফোকাস করে নেগেটিভ সমাজকে বেগবান না করলেই কি নয়? আমাদের ছায়াছবি বা রুপালি পর্দার জগতে এখন অনেক সংস্কার আর শুদ্ধতার দরকার। সেখানে এসব ঘটনা বিষতুল্যই বটে।

লেখক : কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক
সম্পাদনা : আশিক রহমান

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়