ডেস্ক রিপোর্ট : ‘শত ফুল ফুটতে দিন’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পরে আরো উজ্জীবিত আওয়ামী লীগের তরুণ মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। দলীয় সভাপতির এই বক্তব্যকে নিজেদের জন্য বড় সুযোগ বলে মনে করছেন তারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে নতুন করে প্রচারণাও শুরু করেছেন অনেকেই। কাজ শুরু করেছেন নব উদ্যমে। তাদের মতে, নতুনদের মধ্যে যারা জনসম্পৃক্ত, শিক্ষিত, দুর্নীতি বা অন্য কোনো অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে নেই, নেত্রী (শেখ হাসিনা) বরাবরই তাদের প্রাধান্য দেন। এর অনেক উদাহরণও আছে। সে কারণে এবার তার বক্তব্যের পরে সত্যি সত্যি আমরা উজ্জীবিত এবং আশাবাদী।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শুরু থেকেই মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের অনেক তরুণ মনোনয়ন প্রত্যাশী। নিজ নিজ সংসদীয় আসনের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং জনপ্রিয়তা অর্জনে নিয়মিত যাচ্ছেন এলাকায়, করছেন গণসংযোগ। তাদের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ নেতা যেমন রয়েছেন, তেমনি আছেন অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনের নেতাও। এই নেতাদের অনেকেই ইতোমধ্যে বেশ আলোচিত হয়ে উঠেছেন। মনোনয়নের দৌড়ে পুরনো প্রার্থীদের সামনে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছেন কেউ কেউ।
এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেছেন, চারদিকে নির্বাচনের হাওয়া বইছে, এটা ভালো কথা। কীভাবে প্রার্থী বেছে নেব সেটা সময়ই বলে দেবে। আমরা চাই শতফুল ফুটুক। এটা ভালো যে, অনেকেই আগ্রহী। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অনেকেই আগ্রহী হবে, এটাই তো কাম্য। আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। এখানে অনেক নেতা আছেন দেশজুড়ে। তাদের সবাইকে সুযোগ দেয়া সম্ভব হয় না। তবে এদের মধ্য থেকে যে ফুলটি সবচেয়ে সুন্দর সেটি আমরা বেছে নেব। একটাই কথা, শত ফুল ফুটতে দিন। এটা রাজনৈতিক অধিকার।
প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরেই তরুণ মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে নতুন উদ্যমে কাজ করে যাওয়ার প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মনোনয়ন প্রত্যাশী এসব আলোচিত নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল (নেত্রকোনা-৩), সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম (শরীয়তপুর-২), কৃষি সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী (লক্ষ্মীপুর-৪) ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী (চাঁদপুর-৩), উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন (চট্টগ্রাম-১৫), কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট এ বি এম রিয়াজুল কবীর কাউসার (নরসিংদী-৫), নেত্রকোনা থেকে আাওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, সিলেট থেকে মিসবাহউদ্দিন সিরাজ, কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপি (জামালপুর), নুরুল ইসলাম ঠাণ্ডু প্রমুখ।
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন (গাইবান্ধা-৫), ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ (বাগেরহাট-৪), নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এ এইচ এম মাসুদ দুলাল, কোহেলি কুদ্দুস মুক্তি রয়েছেন নাটোর-৪ আসনে। কুষ্টিয়া-৪ আসনে খোকসা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বিটু, নড়াইল-১ আসনে ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী, মাগুরা-১ আসনে সাইফুজ্জামান শিখর, ঝালকাঠি-১ আসনে মনিরুজ্জামান মনির, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে অজয় কর খোকন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (ভোলাহাট-গোমস্তাপুর-নাচোল) আসনে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম আনোয়ার নৌকা প্রতীকের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
ঢাকার আসনগুলোতে নতুনদের মধ্যে আলোচিত মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে মশিউর রহমান মোল্লা সজল (ঢাকা-৫), যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাট (ঢাকা-৮), সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি সাবিনা আক্তার তুহিন (ঢাকা-১৪), যুবলীগ ঢাকা উত্তরের সভাপতি মঈনুল হোসেন খান নিখিল, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু (ঢাকা-১৫), ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ ঢাকার যেকোনো একটা আসন থেকে মনোনয়ন চান। এছাড়া নারী এমপি অ্যাডভোকেট নূরজাহান বেগম মুক্তা (চাঁদপুর-৫), মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৪), জহিরউদ্দীন মাহমুদ লিপটন (ফেনী-৩) থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের আশায় প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ এর মনোনয়ন প্রত্যাশী আনোয়ারুল ইসলাম আনোয়ার বলেন, আমরা যারা ছাত্র রাজনীতি করে এসেছি, আমাদের তো প্রত্যাশাই থাকে। দেশের উন্নয়ন করতে গেলে এমপি হতে হয়। তা না হলে এলাকার উন্নয়ন সেভাবে করা যায় না। নেত্রী যে কথাগুলো বলেছেন তাতে আমরা অত্যন্ত আশাবাদী। আমাদের নতুনদের মূল্যায়ন হবে। তিনি বলেন, আমরা অতীতেও কিন্তু এটাই দেখে এসেছি- নতুনদের মধ্যে যারা শিক্ষিত, দুর্নীতি বা অন্য কোনো অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে নেই তাদের সব সময়ই তিনি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। এর আগে এমন অনেকেই হয়েছেন। সে কারণে এবার তার বক্তব্যের পরে সত্যি সত্যি আমরা কিন্তু উজ্জীবিত এবং আশাবাদী।
ঢাকা-৫ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী মশিউর রহমান মোল্লা সজল বলেন, আমরা আগে থেকেই নেত্রীর সমস্ত কর্মকাণ্ডের কারণে উজ্জীবিত। তিনি বাংলাদেশের জন্য যে অর্জন নিয়ে এসেছেন, পৃথিবীর ৫ জন রাষ্ট্রনায়ক সৎ, তার মধ্যে আমাদের নেত্রী তৃতীয়। অথচ অন্য একটা দল শাসন করেছে তখন পরপর টানা তিনবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সেই বাংলাদেশে আমরা কি কখনো কল্পনা করেছি- আমাদের দেশের রাষ্ট্রনায়ক সৎ হিসেবে সারা পৃথিবীর কাছে স্বীকৃতি পাবে? এর চেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আর আমাদের জন্য কি হতে পারে?
কুষ্টিয়া-৪ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী মিজানুর রহমান বিটু বলেন, প্রধানমন্ত্রী যথার্থ কথাই বলেছেন। এ জন্যই তিনি জাতির পিতার কন্যা। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বা প্রার্থী হওয়া একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। রাজনৈতিক অধিকার। আওয়ামী লীগ দলে ও দেশে গণতন্ত্র চর্চা বিশ্বাস করে বলেই দলীয় সভাপতি এমন কথা বলেছেন। যত বেশি প্রতিদ্বন্দ্বী হবে- প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া তত সহজ হবে। কারণ একাধিক প্রার্থী থাকলে গুড, বেস্ট, বেটার খুঁজে বের করা সম্ভব হয়। তিনি বলেন, শত ফুল ফুটতে দেন- তার মধ্যে থেকে ভালো ফুলটি বেছে নেব- প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে আমরা নবীন রাজনীতিবিদরা উৎসাহ পাই। কারণ আমাদের ভরসার একমাত্র প্রতীক জননেত্রী শেখ হাসিনা।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগের তারুণ্য একদিনের জন্যও দমে যায়নি। আওয়ামী লীগ সব সময় তারুণ্য নির্ভর রাজনৈতিক দল। এ কারণে আওয়ামী লীগ যখন যে কর্মসূচি দিয়েছে সবগুলোই সফল হয়েছে। আওয়ামী লীগের কোনো ব্যর্থতার ইতিহাস নেই। অনেক নির্যাতন সহ্য করেছি। আমাদের জাতির পিতা, আদর্শের পিতাকেও হারিয়েছি। কিন্তু আওয়ামী লীগ কখনো থেমে থাকেনি। কারণ আওয়ামী লীগে তারুণ্য ছিল। প্রধানমন্ত্রী সেই কথাটারই পুনরাবৃত্তি করেছেন।মানবকণ্ঠক।
আপনার মতামত লিখুন :